গ্রাম বাংলা ডেস্ক: ১৪ দলের বৈঠক শেষে জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম সংবাদ ব্রিফ করেন। ছবি: ফোকাস বাংলাযুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে দিয়ে গোলাম আযমের জানাজা পড়ানোর যৌক্তিকতা নেই বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
আজ শুক্রবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের এক বৈঠক শেষে জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম এ কথা বলেন।
গোলাম আযমের আইনজীবী তাজুল ইসলাম গতকাল রাতে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, গোলাম আযম মৃত্যুর আগে দুটি ইচ্ছার কথা প্রকাশ করে গেছেন। তিনি চেয়েছিলেন জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী তাঁর জানাজা পড়াবেন।
আর তাঁর বড় ছেলে আবদুল্লাহহিল আমান আজমী বলেছেন, তাঁর বাবা চেয়েছিলেন নিজামী জানাজা পড়াতে না পারলে যেন সাঈদী পড়ান।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বলতে পারি, কারাবন্দী কারও মৃত্যু হলে সাধারণত তাঁর নিকট ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন জানাজার নামাজ পড়ান। তাঁরা (নিজামী ও সাঈদী) তো সে রকম কেউ না। তাই এ দাবির কোনো যৌক্তিকতা নেই।’
গোলাম আযমের কবর এ দেশে না দেওয়ার দাবি ওঠা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ নাসিম কোনো মন্তব্য করেননি।
লতিফ সিদ্দিকীর গ্রেপ্তারের দাবিতে ২৬ অক্টোবর ইসলামি দলগুলোর ডাকা হরতালের নামে যেকোনো ধরনের নৈরাজ্য প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
জোটের মুখপাত্র নাসিম বলেন, ‘তথাকথিত কয়েকটি ইসলামি দল লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে হরতাল ডেকেছে। আসলে হরতাল ডাকার কারণ হলো ওই দিন একজন নেত্রীর (খালেদা জিয়া) আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা রয়েছে। আদালতে হাজির না হওয়ার জন্য তাঁর প্ররোচনায় এই হরতাল। আসলে তিনি বিচারের মুখোমুখি হতে ভয় পান বলেই এই হরতাল।’
২৬ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে শুনানির তারিখ ধার্য আছে। ওই দিন খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হলে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করবে বলে গত তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিশেষ কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন।
নাসিম বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা ও আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আজ দলের কার্যনির্বাহী সংসদ থেকে চূড়ান্ত বহিষ্কারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তার পরও কেন এ হরতাল দেওয়া হয়েছে? তা ছাড়া লতিফ সিদ্দিকী এখন দেশের বাইরে কীভাবে আছেন, তা সবাই জানেন। তাই এই হরতাল অযৌক্তিক হরতাল।’
‘প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে গিয়ে কেবল ফটোসেশন করেন’ খালেদা জিয়ার এমন মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন নাসিম। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া হতাশার এমন জায়গায় চলে গেছেন যে কখন কী বলছেন, সেটা বুঝতে পারছেন না। তিনি আমাদের কাছে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছেন। তাঁর এ ধরনের দৈন্য ও হীনমন্যতার জন্য আমার করুণা হয়।’ এ ধরনের মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকারকে অপমান করছেন বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতা।
বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রতি প্রশ্ন রেখে নাসিম বলেন, ‘বিদেশিরা যদি নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরকার হিসাবে বৈধতা না দিত, তাহলে তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানেরা বৈঠক করতেন না। বিদেশি সরকারও বাংলাদেশ সফরে এসে বিভিন্ন চুক্তিতে আবদ্ধ হতেন না। শেখ হাসিনা জাতিসংঘে বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভাষণ দিয়েছেন।’
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাই বলছি, মিথ্যাচার না করে দায়িত্বশীল হন। দল গোছান। ২০১৯ সালে আবার নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।’
আজ বেলা সাড়ে ১১টায় মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে ১৪ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে ১৪ দলের পক্ষ থেকে আগামী ২৫ নভেম্বর সিলেটে জনসভা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।