ঢাকা; শিশুটি হাসপাতালের ট্রলিতে শোয়া। বয়স চার বছরের মতো। আশকোনার জঙ্গি আস্তানায় ‘আত্মঘাতী’ বোমার স্প্লিন্টার তার শরীরটির বিভিন্ন জায়গায় ঢুকে গেছে। অনেক রক্ত পড়েছে। মাথা, হাতসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যান্ডেজ। নির্লিপ্ত চাহনি খুঁজছে বাবা-মা বা কোনো স্বজনকে। কিন্তু নেই পরিচিত একজনও। তাকে ঘিরে হট্টগোল। বন্দুকধারী পুলিশ, চিকিৎসক আর সাংবাদিকদের ভিড়।
গতকাল শনিবার বেলা দুইটার দিকে শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। তখনই এ রকম একটা পরিস্থিতি তৈরি হয় তাকে ঘিরে। হাসপাতালে গতকাল রাত সোয়া ১০টার দিকে চিকিৎসকেরা তার শরীরে অস্ত্রোপচার করেন।
অস্ত্রোপচার শেষে চিকিৎসক মোশতাক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, শিশুটির পেটের নাড়িতে স্প্লিন্টারের আঘাতে পাঁচটি ফুটো হয়েছে। সেখানে অস্ত্রোপচার হয়েছে। তবে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার আগে তার অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না।
বিস্ফোরণে আহত হওয়ার পর শিশুটিকে প্রথমে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। পরে শিশুটিকে নাকে অক্সিজেনের নল লাগানো অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ব্লকে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা বলেন, শিশুটির হাত, পেট ও পায়ে ব্যান্ডেজ লাগানো ছিল। চিকিৎসকেরা অক্সিজেন মাস্ক খোলার পর সে তার নাম বলে সাবিনা, বাবা ইকবাল আর মা শাকিরা বলেও জানায় সে। এরপর তাকে অস্ত্রোপচারকক্ষে নেওয়া হয়।
রাজধানীর আশকোনায় ‘সূর্য ভিলা’ নামের বাড়িটিতে তিন নারী, এক কিশোর ও অন্য দুই শিশুর সঙ্গে ছিল এই শিশুও। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সূর্য ভিলায় শুরু হওয়া জঙ্গিবিরোধী অভিযানের একপর্যায়ে গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ওই বাড়ি থেকে দুই মেয়েশিশুকে নিয়ে বেরিয়ে যান দুই নারী জঙ্গি। অন্য এক নারী আর কিশোরের সঙ্গে সাবিনা সেই বাড়ির ভেতরেই ছিল। বাইরে থেকে পুলিশ কর্মকর্তারা মাইকে বারবার আত্মসমর্পণের আহ্বান জানাচ্ছিলেন। শেষে পাঁচ মিনিটের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বেঁধে দেওয়া সময়ের দুই মিনিট আগে দরজা খুলে ওই নারী বেরিয়ে এলেন। আমি মনে মনে খুব খুশি হলাম, রক্তপাতহীনভাবে সবাই আত্মসমর্পণ করছে ভেবে। শিশুটিকে এক হাতে ধরে ওই নারী কেমন যেন রোবটের মতো হাঁটছিলেন। আমি কয়েকবার বললাম যেখানে আছেন সেখানে দাঁড়ান, দুই হাত ওপরে তুলুন। প্লিজ থামুন। কিন্তু ওই নারী এগিয়েই আসছিলেন। দেখি তাঁর পেটের দিকের বোরকা ফোলা। আমি কিছু একটা আঁচ করে নিজের মাথাটা বাঁচিয়ে দিলাম দৌড়। কাছাকাছিই ছিলেন ডিসি মহিবুল স্যার, আর ইন্সপেক্টর শফি। আমি দৌড় দেওয়ার দুই সেকেন্ডের মধ্যে বিস্ফোরণ। কিছুক্ষণ পরে দেখি রক্তাক্ত মুখে ইন্সপেক্টর শফি হেঁটে আসছেন। তখনই বাচ্চাটার কথা মনে পড়ে গেল। উঁকি মেরে দেখি শিশুটা নড়ছে। ঝুঁকি নিয়ে তাকে উদ্ধার করা হলো।’