ঢাকা; নারায়ণগঞ্জে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রকাশ্যে ব্যালট পেপার প্রদর্শনের ঘটনা বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে বিরল। আইনে ব্যালটের গোপনীয়তা রক্ষায় কেউ ব্যর্থ হলে তাঁর ছয় মাস থেকে সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, প্রকাশ্যে ব্যালট পেপার প্রদর্শনের ঘটনার দায়ে কারও ছয় মাস থেকে সাত বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। নারায়ণগঞ্জের সিটি নির্বাচনে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে।
২০১০ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিধিমালায় বলা হয়েছে, ভোটচিহ্ন প্রদান কক্ষ অর্থ হলো ‘ভোটকক্ষের মধ্যে রক্ষিত একটি ছোট টেবিলসহ এমন একটি পর্দাঘেরা স্থান, যেখানে একজন ভোটার অন্যের দৃষ্টির আড়ালে থাকিয়া ব্যালট পেপারে ভোটচিহ্ন প্রদান করতে পারেন।’ শামীম ওসমান অবৈধভাবে ভোটচিহ্ন প্রকাশ করেছেন।
৭৭ বিধিতে মনোনয়নপত্র, ব্যালট পেপার ইত্যাদি বিকৃত বা নষ্ট করার শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি অন্যূন ছয় মাস অনধিক সাত বছর কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন যদি তিনি ‘ভোটকেন্দ্রের বাইরে কোনো ব্যালট পেপার বা ব্যালট পেপার বহি নিজ দখলে রাখেন বা জনসাধারণে উহা প্রদর্শন করেন।’ নৌকায় দেওয়া শামীম ওসমানের ভোটচিহ্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় লাইভ প্রচারিত হয়েছে।
৭৮ বিধিতে ভোটের গোপনীয়তা রক্ষায় ব্যর্থতার শাস্তি বর্ণিত আছে। এতে দেখা যায়, ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তারাও অভিযুক্ত হতে পারেন। কারণ, বিধিতে বলা হয়েছে, কোনো রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার বা পোলিং অফিসার বা ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত কোনো প্রার্থী, নির্বাচনী এজেন্ট বা পোলিং এজেন্ট বা ভোট গণনায় উপস্থিত কোনো ব্যক্তি অন্যূন ছয় মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন যদি তিনি ভোটের গোপনীয়তা রক্ষা করতে বা তা রক্ষায় সাহায্য করতে ব্যর্থ হন।
১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ২৬ ধারায় বলা হয়েছে, একটি নির্বাচন শুধু গোপন ব্যালট দ্বারাই নির্ধারিত হবে এবং তা নির্ধারিত পদ্ধতি ও বিধানাবলি সাপেক্ষে ভোট গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের সাংসদ শামীম ওসমান ২২ ডিসেম্বর তাঁর নিজ এলাকা ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বার একাডেমি স্কুল ভোটকেন্দ্রে ভোট দেন। তিনি তাঁর তিনটি ব্যালট পেপারের মধ্যে শুধু মেয়র প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার তথ্যই প্রকাশ করেন।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৮২ ধারায় আরও বলা হয়েছে, যদি কোনো নির্দিষ্ট ব্যালট পেপারে কাকে ভোট দেওয়া হয়েছে, তা প্রকাশ করা হয় তাহলে তা পাঁচ বছরের শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে।
৮৪ ধারায় প্রিসাইডিং অফিসারকে ব্যালট পেপারের গোপনীয়তা রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, একজন প্রিসাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্রে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, যাতে প্রতিটি ব্যালট পেপার ভাঁজ করা এবং সেই অবস্থায় ব্যালট বক্সে ফেলার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রত্যেক ভোটার যাতে তাঁর ব্যালট পেপারের গোপনীয়তা বজায় রাখতে সক্ষম হন, তা নিশ্চিত করবেন।
জেলা নির্বাচন অফিস বলেছে, তাদের কাছে এ বিষয়ে কেউ এখনো কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি।