রবিউল ইসলাম, দিনাজপুর প্রতিনিধি ॥ প্রায় ৩ মাস ধরে উপাচার্য (ভিসি) না থাকায় দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই পদটি পূরণ না হওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
একই সঙ্গে অনিয়মিত হতে শুরু করেছে ক্লাস ও পরীক্ষা। এতে করে সেশনজটের শঙ্কায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে সমস্যায় পড়েছেন দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কাজ করা কর্মচারীরাও।
জানা যায়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ৪ বছরের জন্য ভিসি হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক রুহুল আমিন। চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর তার মেয়াদ শেষ হয়ে যায।
এরপর প্রায় ৩ মাস অতিবাহিত হলেও নতুন কোন ভিসি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পায়নি। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ভিসি ছাড়াই চলছে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে ভর্তি কার্যক্রম। অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি, ক্লাস ও পরীক্ষায়। এতে করে সেশনজটের শঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন নুর জানান, ভিসি না থাকার কারণে অনেক ক্লাস ও পরীক্ষা ঠিকভাবে হচ্ছে না। আগামীতে আরও বড় ধরনের সেশনজটে পড়তে হবে। ভিসি না থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা যে বৃত্তি পায় সেই টাকা দেয়া হচ্ছে না।
এদিকে গুরুত্বপূর্ণ এ পদটি পূরণ না হওয়ায় দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কাজ করা কর্মচারীদের বেতন বন্ধ হয়ে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এটিএম শফিকুল ইসলাম জানান, গত ৩ মাসেও উপাচার্য নিয়োগ না হওয়ায় নির্বাহী আদেশ ও আর্থিক অনুমোদন বন্ধ রয়েছে। ফলে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কর্মচারী, নিরাপত্তাকর্মীসহ দৈনন্দিন পরিচালনা ব্যয় বন্ধ রয়েছে।
তিনি জানান, একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে কিছুটা স্থবিরতার সৃষ্টি হয়েছে। একইসঙ্গে সেমিস্টার পরীক্ষার পরীক্ষক নিয়োগের জন্য ভিসির অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। আর ভিসি না থাকায় পরীক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। এতে করে বিভিন্ন সেমিস্টার পরীক্ষাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানান তিনি।
হাবিপ্রবির সহযোগী অধ্যাপক ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, এবারে হাবিপ্রবিতে নিয়মিত ও বিভিন্ন কোটায় ভর্তির জন্য ২ হাজার ৮৭টি পদের বিপরীতে ৯৬ হাজার ৪১ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ১৮-২১ ডিসেম্বর। কিন্তু উপাচার্য না থাকার কারণে ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। নতুন করে উপাচার্য নিয়োগ হওয়ার পরে ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, পরামর্শ ও নির্দেশনা শাখার পরিচালক প্রফেসর ডা. এসএম হারুন উর রশিদ জানান, সময় মতো ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে না পারলে ক্লাস ও পরীক্ষা পিছিয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি সেমিস্টার পরীক্ষাগুলোও সময়মত সম্পন্ন করতে ও পরীক্ষক নিয়োগ করতে উপাচার্যের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। যদি তা না হয় তাহলে এতে করে সেশনজট সৃষ্টি হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সাইফুর রহমান জানান, অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম চললেও নতুন উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে না। অনুমোদনের প্রয়োজন হয় এমন কার্যক্রমসহ শিক্ষার্থীদের বৃত্তিও বন্ধ রয়েছে। দিন হাজিরার ভিত্তিতে কর্মচারীদের বেতনও বন্ধ রয়েছে। অতি দ্রুত উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্তের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।