নারী চিকিৎসকের কাছে রোগী সুস্থ হয় বেশি

Slider লাইফস্টাইল

1e3df2bf836820abe726ef7e99bce6ea-4

ঢাকা;  হাসপাতালে নারী চিকিৎসকের কাছে রোগী সুস্থ হওয়ার হার বেশি। তাঁদের কাছে সেবা পাওয়া রোগীর মৃত্যুঝুঁকিও কম। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড টি এইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১০ লাখের বেশি রোগীর ওপর এ গবেষণা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, রোগীরা নারী চিকিৎসকের সেবা পেলে তাঁদের মৃত্যুঝুঁকি পুরুষ চিকিৎসকদের সেবা পাওয়া রোগীর তুলনায় ৪ শতাংশ কম। আবার সেবা নিয়ে চলে গেছেন
তাঁদের হাসপাতালে পুনরায় ভর্তি হওয়ার হার ৫ শতাংশ কম।

গবেষকেরা বলছেন, নারী ও পুরুষ চিকিৎসকের সেবার পার্থক্যের কারণে ফলাফলে কী ভিন্নতা আসে তা নিয়ে সম্ভবত এটাই প্রথম কোনো গবেষণা। গবেষণাটি গতকাল সোমবার আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাময়িকী জেএএমএ ইন্টারন্যাল মেডিসিনের অনলাইন সংস্করণে ছাপা হয়েছে।

গবেষণার আওতায় থাকা রোগীদের বয়স ছিল ৬৫ বছর বা তার বেশি। এঁদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন মারাত্মক অসুস্থ। এঁদের চিকিৎসা দিয়েছিলেন ৫৮ হাজার ৩৪৪ চিকিৎসক। এঁদের মধ্যে ১৮ হাজার ৭৫১ জন (৩২.১ শতাংশ) ছিলেন নারী চিকিৎসক। নারী চিকিৎসকদের বয়স ছিল তুলনায় কম, এঁদের অনেকেরই অস্থির চিকিৎসায় প্রশিক্ষণ ছিল। এঁরা পুরুষের তুলনায় কম রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছিলেন।

এ গবেষণার ফলাফল নিয়ে এই প্রতিবেদক বাংলাদেশে চিকিৎসা ও রোগী ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত চারজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছেন।

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মেডিকেল অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক পারভিন শাহিদা আখতার বলেন, ইউরোপভিত্তিক ক্যানসার চিকিৎসকদের সংগঠন (ইসমো-ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব মেডিকেল অনকোলজিস্ট) দাবি করে ক্যানসার চিকিৎসায় পুরুষের তুলনায় নারী চিকিৎসকের কাজের ফল ভালো। এর কারণ, নারী চিকিৎসক রোগীর ব্যাপারে বেশি সহানুভূতিশীল, বেশি মনোযোগ দিয়ে রোগীর কথা শোনেন, রোগীকে বেশি সময় দেন। নিজের কাজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘মাঝেমধ্যে আমি রোগী নেফ্রোলজি বা হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাই (রেফার)। রোগীরা ফিরে এসে মহিলা ডাক্তারদের কথাই ভালো বলেন, মহিলা ডাক্তারের কাছেই পাঠাতে বলেন।’

অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত নাক-কান-গলার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। দুই দফায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গবেষণা ফলাফলের সঙ্গে আমি ১০০ ভাগ একমত। নারী চিকিৎসকদের আন্তরিকতা বেশি, কাজে ফাঁকি কম দেয়, ধান্দা কম। এগুলো রোগী সুস্থ হয়ে ওঠার ওপর প্রভাব ফেলে।’

বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালের পরিচালক (কমিউনিকেশন অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট) শাগুফা আনোয়ার বলেন, ‘নারী চিকিৎসকেরা সময়মতো রোগীর পাশে থাকে। রোগীর ডকুমেন্টেশন ভালো করে। যত্ন নিয়ে রোগীর কাউন্সেলিং করে। ফাঁকি কম দেয়, অজুহাত কম দেয়। এসব গুণ অবশ্যই রোগীর সেরে ওঠার ওপর প্রভাব ফেলে।’

তবে এ বিষয়ে কিছুটা ভিন্নমত দিয়েছেন বিএসএমএমইউর মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এ ব্যাপারে মতামত দেওয়া মুশকিল। একজন চিকিৎসক রোগীকে কতটা সুস্থ করতে পারবেন তা নির্ভর করে তিনি নিজেকে কতটা দক্ষ করে তুলতে পেরেছেন তার ওপর। এ ক্ষেত্রে যোগ্যতাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

যুক্তরাষ্ট্রের এই গবেষণায় এটা চিহ্নিত করা যায়নি যে কেন নারী চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে তাতে বলা হয়েছে, আগে একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নারী ও পুরুষ চিকিৎসকদের মধ্যে পেশা চর্চায় ভিন্নতা আছে। নারী চিকিৎসকেরা নির্দেশিকা মেনে পেশা চর্চায় অধিকতর অবিচল থাকেন। এ ছাড়া তাঁরা প্রতিরোধমূলক সেবাও বেশি দেন। বর্তমান গবেষণা থেকে সেবার মান উন্নত করার মতো বিষয় পাওয়া যাবে বলে গবেষকেরা ধারণা করছেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *