প্র: বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে সংস্কার বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?
উ: নির্বাচন কমিশন (ইসি) দিয়েই সূচনা করা যেতে পারে। ইসিকে শক্তিশালী করতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কঠোর পরিশ্রম করেছে। কিন্তু এ কমিশনের নৈপুণ্য ও গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে কারা এ কমিশনের সদস্য তার ওপর। ফেব্রুয়ারিতে ইসি সদস্যদের ম্যান্ডেট অতিবাহিত হচ্ছে। প্রেসিডেন্টের সামনে সত্যিকারের কাজ। তার কাজ যথেষ্ট সংখ্যক সদস্য বের করা যাদেরকে সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ হিসেবে দেখা হয়। আমরা বিশ্বাস করি যে, শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে তা খুবই শক্তিশালী একটি বার্তা দেবে। বার্তাটি হলো, এটিই সরকারের ইচ্ছা যে পরিবর্তী নির্বাচন হবে যেকোন প্রশ্নের উর্ধ্বে।
প্র: বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কীভাবে চরমপন্থাকে উৎসাহিত করেছে?
উ: আপনি যদি আইএস’র নিজস্ব প্রকাশনার দিকে তাকান, দেখবেন যে তারা প্রকাশ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিভক্তি নিয়ে কথা বলছে। তারা তাদের নিজস্ব বিশ্লেষণ করেছে। এরপর উপসংহারে পৌঁছেছে যে, এসব বিভাজনের ফলে মানুষকে চরমপন্থায় দীক্ষিত করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কি মানুষ চরমপন্থায় দীক্ষিত হচ্ছে? না। একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না পারলে তারা সন্ত্রাসী হয়ে যায় না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক্ষেত্রে কারণ নয়। কিন্তু এটি চরমপন্থায় অবদান রাখা একটি ফ্যাক্টর বা প্রভাবক।
যেসব ব্যক্তি রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে তারা অনেকটা ভাড়ায় পাওয়া অস্ত্রের মতো। গত সপ্তাহে তারা হয়তো কারও জন্য কাজ করেছে। কিন্তু এবার যদি আইএস তাদের টাকা দেয়, তাহলে তারা এ সপ্তাহে আইএস’র জন্য কাজ করবে।
যেসব লোক চরমপন্থী হয়েছে, তাদের দিকে যদি তাকান, তাহলে দেখবেন ক্ষতিগ্রস্থ না হওয়া তরুণদেরকে ডাকা হচ্ছে। আল কায়দার চেয়ে অনেক বেশি নমনীয় আইএস। এর অভিযোজন ক্ষমতাও বেশি। আক্ষরিক অর্থে কম্পিউটারের মাধ্যমে এটি বিভিন্ন সমাজে পৌঁছে যায়। তারা এমন মানুষকে খুঁজে বের করে যারা ইতিমধ্যে সামাজিকভাবে কিছুটা বিচ্ছিন্ন। তারপর তাকে ধীরে ধীরে তারা নিজেদের দিকে নিয়ে যায়। যেসব মানুষ রাজনৈতিক সহিংসতায় অংশ নিয়েছে, বা যারা মনে করে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে তারা সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেছে, তারা অনলাইনে এসব উগ্রপন্থী বাগাড়ম্বর বেশি শুনতে পারে বলে সন্দেহ করা হয়।
প্র: এসব গোষ্ঠী কি এখনও বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে?
উ: আমরা এ নেটওয়ার্কের আকার সম্পর্কে জানি না। জানি না এটি কি বাড়ছে নাকি সঙ্কুচিত হচ্ছে। কিন্তু আমি তিনটি বিষয় বলবো যেগুলো বাংলাদেশ সরকার ও এর আংশীদারদের জন্য মারাÍক উদ্বেগের। আমরা জানি যে, আইএস ও আল কায়দা বাংলাদেশকে ‘প্রায়োরিটি কান্ট্রি’ বা অগ্রাধিকার রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করছে। এর অর্থ হলো, আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে যে, ছড়িয়ে পড়তে তারা চেষ্টা করছে। দ্বিতীয়ত, এসব সংগঠন বাংলাদেশে একসঙ্গে কাজ করেছে। তারা এখানে প্রতিদ্বন্দ্বীও। কিন্তু আমরা জানি যে, তামিম চৌধুরীর (আগস্টে নিহত) মতো লোক উভয়ের জন্যই কাজ করেছে। তাই এটি আসলেই বিপজ্জনক যে, তারা একই সঙ্গে নিজেদের জ্ঞান ও দক্ষতা ভাগাভাগি ও গড়ে তুলতে পারে। তৃতীয়ত, আমরা জানি যে, তরুণরা এখনও নিখোঁজ হচ্ছে। যারা নিখোঁজ হয়েছে তারা যাওয়ার আগে কিছু জানিয়ে যায়নি। এর অর্থ রিক্রুটমেন্ট এখনও সফলভাবে চলছে।
প্র: এটি কীভাবে বাংলাদেশের বিনিয়োগকারী ও সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের ওপর প্রভাব ফেলে?
উ: আমেরিকান ব্যবসায়ীরা আমাদেরকে বলছেন যে, তারা এখানে স্থিতিশীলতা চান। রাজনৈতিক সহিংসতা হোক আর সন্ত্রাসবাদ হোক, তারা যদি মনে না করে যে, সরকার এসব সহিংসতা বন্ধে শক্ত, স্বচ্ছ ও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে, তাহলে তারা নিজেদের বিনিয়োগ নিয়ে দু’ বার চিন্তা করে। তাই এসব ক্ষেত্রে সন্ত্রাস বন্ধে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর প্রচেষ্টা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি রাজনৈতিক আলোচনাও জরুরী।
প্র: হলি আর্টিজান বেকারি হামলার প্রেক্ষাপটে, মানুষ কি এখনও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ?
উ: হ্যাঁ, অবশ্যই। আইএস বলেছে যে, এটি স্রেফ শুরু আর তারা পশ্চিমা ও ব্যবসায়ী লোকজনকে টার্গেট করা অব্যাহত রাখবে। তাই এটি মানুষকে নার্ভাস করে তুলেছে। আমরা সতর্ক থাকছি। নিজেদের রক্ষায় যা করার করছি। কিন্তু মানুষ বাংলাদেশে বিশ্বাস করে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে একটি শক্তিশালী অর্থনীতি, একটি শক্তিশালী শাসন কাঠামো, শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ সন্ত্রাসবাদ বিস্তারের চেষ্টা থেকে বাংলাদেশকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে।