অসহায় মুক্তিযোদ্ধা সুনীল এখন মন্দিরে থাকেন

Slider বাধ ভাঙ্গা মত
 1e18555b95189825cb116e66c7352f8a-108_nikli-2
ঢাকা; পাঁচ শতক জমির ওপর টিনের ঘর ছিল । দুই মেয়ের বিয়ের জন্য সেই শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে দিতে হয়েছে। এখন মন্দিরের জায়গায় পরিবার নিয়ে থাকছেন। সেই জায়গা ছাড়তেও বারবার তাগাদা আসছে।
সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হলে পরিবার নিয়ে এখন পথে বসবেন মুক্তিযোদ্ধা সুনীল বর্মণ (৬২)? একাত্তরে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে যে টগবগে তরুণ দেশ স্বাধীন করেছিলেন, জীবনযুদ্ধে তিনি পরাজিত হবেন? এমন নির্মম বাস্তবতার মুখে দাঁড়িয়ে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার বর্মণপাড়া গ্রামের এ মুক্তিযোদ্ধা।
গত বুধবার সকালে কথা হয় সুনীল বর্মণের সঙ্গে। তিনি বলেন, একাত্তরে তিনি ছিলেন সাহসী তরুণ। কাউকে না জানিয়ে রাতের আঁধারে ভারতে পাড়ি জমান তিনি। ইকোয়ান ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই করেন সিলেট অঞ্চলের ভাতেরটেক, বিশ্বম্ভরপুর কৃষ্ণনগর, লালপানি, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায়। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনের কারণে বিজয়ের এক মাস পর তিনি বাড়িতে ফেরেন। এরই মধ্যে বাবা মারা গেলেও খবর পাননি। বাড়ি ফিরে দেখতে পান, বাবার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান চলছে।
সুনীল বর্মণের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিকলী সদর ইউনিয়নের করিয়াহাটি গ্রামে তাঁর পৈতৃক বাড়ি ছিল। সেখানে পাঁচ শতক ভিটার ওপর একটি দোচালা টিনের ঘর ছিল। স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে সেখানে থাকতেন তিনি। দুই মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে সেই ভিটা বিক্রি করে দিতে হয়েছে। এরপর থেকে আশ্রয়হীন। বর্তমানে নিকলীর বর্মণপাড়া লীলাময়ী কালীমন্দিরের জায়গায় ঘর তুলে দুই ছেলে ও অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে বাস করছেন সুনীল বর্মণ। কিন্তু মন্দির কমিটির লোকজন তাঁকে অন্যত্র চলে যেতে বারবার তাগাদা দিচ্ছেন।
সুনীল বর্মণ বলেন, তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত; বয়স হওয়ায় কাজকর্ম করতে পারেন না। ফলে মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকাই এখন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন।
সুনীল বর্মণ মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ঘুরেছেন। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে এক খণ্ড জমির জন্য উপজেলা প্রশাসন কাছে আবেদন করেছেন। তবে আজও কোনো সাড়া মেলেনি। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। কিন্তু স্বাধীন দেশে সুনীল বর্মণের এখন মাথা গোঁজার কোনো ঠাঁই নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক কিছু করছেন। তিনি যদি আমাকে একটু জমি দেন, তাহলে আমি ও আমার পরিবার শান্তিতে থাকতে পারব।’
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবুবক্কর ছিদ্দিক বলেন, সুনীল বর্মণের জন্য খাসজমির বন্দোবস্ত পেতে এবং সেই জমিতে বাড়ি তৈরির জন্য প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। তাঁরা আশা করছেন, শিগগিরই একটা ব্যবস্থা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *