দক্ষিনের জানালা
— রাফেজা ইমরোজ
এক বুক শূন্যতা নিয়ে আজোও
দক্ষিনের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ‘মা’
ডিসেম্বর আসে ডিসেম্বর যায়,
বিজয়ের আনন্দে নতুন,
পুরানো প্রজন্ম সকলের প্রান উল্লাসে ভরে যায় ।
‘মা’ শুধু দাঁড়িয়েই থাকে,
নির্বিকার নিঃশব্দ উদাস চোখে
প্রিয় তাঁর হারাল যে, অচিন দেশের বাঁকে ।
অনেক রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি বিজয়
পেয়েছি বাংলাদেশ,
বিনিময়ে হারিয়েছি হাজার মায়ের সুখি সুন্দর বেস ।
গদ্য,পদ্য লিখে যায় কত লেখক,
কত কবি, শিল্পির তুলিতে অঙ্কিত হয়
অত্যাচারিত কত মুক্তিসেনার বীভৎস ছবি ।
মধুর কণ্ঠে কত গায়ক গায়িকা
গেয়ে যায় স্বাধীনতার গান,
গদ্যপদ্য ছন্দলয়ে ছেয়ে যায়
জননী জন্মভুমি আমার..
তবু মা নির্বাক দাঁড়িয়েই থাকে
বিজয়ের আনন্দ উল্লাসে
দোলায় না দুঃখিনি মায়ের প্রান ।
যন্রনার দাবদাহ বুকে লয়ে দাঁড়িয়েই থাকে ‘মা’
ভাবনার মাঝেও ভাবনা আসে,
যাবার বেলায় প্রিয়তমর শেষ কথাটি,
তার বিষন্ন মলিন মুখ,
কান্নেভেজা উদাস দুটি আঁখি
স্মৃতি জানালায় মেঘ হয়ে ভাসে….।
দক্ষিনের জানালায় দাঁড়িয়ে
দুঃসহ দহন দুঃখে ‘মা’ যেন বলছে……..
আহ্ সে কি যন্রনা ? ৪৪ টি বছর …….
জীবনের শুরুতেই যে কাহিনী হল গত,
কি দিয়ে পূর্ণ করবো বলো প্রিয়হীন সে ক্ষত ?
দিবারাএি একই কষ্ট একই ব্যথা শেষ হয়েও হয়না শেষ,
সকল কাজে পাই যে শুধুই প্রিয়তমর রেশ ।
মাগো তুমি আর কেঁদনা,
প্রিয় হারানোর বেদনায় অন্তঃপ্রহর
কষ্টের জালে নিজেকে আর বেঁধনা ।
এই দেশ,কোটি জনতা পাহাড়া দিচ্ছে
তোমার আশেপাশে,
তোমার সম্মান হতে দেব নাকো
ম্লান কোন কালে ,
চেয়ে দেখ ‘মা’ সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুটিও ভিড়ছে
তোমার দুয়াড়ের কাছে ।
মা দাঁড়িয়েই আছে…….
এত সান্তনা এত ভালবাসা মন কি ভরে তাতে ?
মায়ের দীর্ঘশ্বাস বেড়েই যায়….
অবচেতন মনে নিজেকেই প্রশ্ন রাখে…..
ঘৃন্য রাজাকারদের বিচার আজো কেন
শেষ হয়েও হয় নাকো শেষ ?
ফাঁসির মঞ্চ থেকে ফিরে আবার বাংলার জমিনে
কেন হয় ঘৃন্য হায়েনার প্রবেশ ?
দক্ষিনের জানালা ভেদ করে মায়ের দী্র্ঘশ্বাস ছড়িয়ে পড়ল……
বাংলাদেশর ধুলিমাখা প্রতিটি কোন,
প্রজন্ম চত্বরে শুরু হল আন্দোলনের নব জাগরন ।
মায়ের দী্র্ঘশ্বাস থামেনা,থামবে না……
যতদিন বেঁচে থাকা ততদিন ভরা থাক
বাংলাদেশের সবুজ-শ্যামল প্রান্তর আমার মায়ের দীর্ঘশ্বাস….
যেন ভুল করেও আমরা ভুলে না যাই কত রক্ত,
কত ত্যাগের বিনময়ে পেয়ছি বিজয়
পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ ।
…….আমরা কি সত্যিকার স্বধীনতা পেয়েছি ?
বিজয় পেয়েছি?মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ সবাই একটু ভাবুন?
২০-২২ বছর বয়সেই যে মেয়েটি হল স্বামি হারা ,
৪৪ বছর ধরে জীবনের সাথে,
সময়ের সাথে যুদ্ধ করে সে আজো বেঁচে আছে
রাজাকার মুক্ত দেশ দেখার জন্য কিন্তূ
আমরা কি মুক্ত হতে পেরেছি?
৯মাসের যুদ্ধে বিভিন্ন বয়সে যারা হারিয়েছেন
প্রিয়তম কে তাদের সবার প্রতি
বিন্ম্র শ্রদ্ধায় লেখাটি উৎসর্গ করে লেখাটি….