ল্যাপটপে জালিয়াতির প্রমাণ দেখে হতবাক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা

Slider সিলেট

img_20161206_165725

সিলেট প্রতিনিধি : স্কুল কলেজের সার্টিফিকেটসহ  পুলিশ ক্লিয়াসন্স, এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্র পর্যন্ত তৈরি করে দেয়া তার কাছে অতি সাধারণ কাজ। বিভিন্ন ধরনের জাল কাগজপত্র তৈরি তার মূল পেশা।

অবশেষে সিলেটের জেলা নির্বাচন অফিসে এসে ঘুষ দিয়ে জাল পরিচয়পত্র বৈধ করতে গিয়ে এখন পুলিশের খাঁচায় বন্দি সেই ভয়ংকর জালিয়াত তাজুল ইসলাম।

কে এই তাজুল : তাজুলের বাড়ি জৈন্তাপুরের নিজপাট পানিয়ার আড়ি গ্রামে। তার বাবার নাম এনাম আহমদ। এলাকায় তার রিক কম্পিউটার নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। এই প্রতিষ্ঠান থেকেই সে দীর্ঘদিন থেকে নানান জালিয়াতি চালিয়ে যাচ্ছিল।

যেভাবে পুলিশের খাঁচায় : জৈন্তাপুরের নিজপাট এলাকার মৃত হাসান আলীর ছেলে দুলাল উদ্দিন । তার প্রতিবেশি জয় বাহাদুর ছত্রির স্ত্রী বিঞ্চু মায়া ছত্রির জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি ভূল সংশোধনের জন্য তাজুলের কাছে যান। তাজুল তা সংশোধনের নামে এবং জেলা নির্বাচন অফিসে সেটি সঠিক কি না তা যাচাই করে দেওয়ার নামে ২ বারে দুলালের কাছ থেকে ১৪’শ টাকা নেয়।
০৪/১২/২০১৬ দুপুরে তা যাচাই করতে এসে ফেঁসে যায় তারা দুজন।

উল্লেখ্য, বিঞ্চু ছত্রির জাতীয় পরিচয়পত্রটি সংশোধন করে তাজুল দুলালের হাতে তুলে দেয় সপ্তাহখানেক আগে। বিঞ্চু ছত্রি জেলা নির্বাচন অফিসে বসে এ প্রতিবেদককে জানান, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের সাপ্তাহখানেক অতিবাহিত হলেও জেলা নির্বাচন অফিসে সেটি সঠিক কি না তা যাচাই করার কথা বললে সে নানা টালবাহানা করতে থাকে। কথামতো যাচাই করতে নির্বাচন অফিসে আসতে দিন ঠিক করলেও নানা কারণ দেখিয়ে সে আর আসেনা।

অবশেষে সোমবার তাকে নিয়ে তিনি দুপুরের দিকে জেলা নির্বাচন অফিসে আসেন। এখানে এসে দুলাল সিনিয়র নির্বাচন অফিসার আজিজুল ইসলামকে কার্ডটি সঠিক কি-না দেখতে বললে তারা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেন এটা একটা নকল কার্ড।

এসময় তাজুল অফিসারকে ‘কিছু টাকা পয়সা’ দিবে বলে সাধাসাধি করে। জেলা নির্বাচন অফিসার তখন গোয়েন্দা পুলিশকে খবর দেন। বিকেলে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল নির্বাচন অফিসে এসে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে তাজুল একেকবার একেক তথ্য দেয়।

তাজুল তার বাবার নাম, গ্রামের নাম ইত্যাদি তথ্যে সে একেক সময় একেক কথা বলে। গোয়েন্দারা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সাহায্যে তাজুলের ল্যাপটপ এবং আইডিকার্ডের মূল মালিক বিঞ্চু ছত্রিকেও নির্বাচন অফিসে উপস্থিত করেন।

তাজুলের ল্যাপটপে জালিয়াতির ভুড়ি ভুড়ি প্রমাণ মেলে। যা দেখে হতবাক হয়ে পড়েন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা সেটা চালু করে দেখেছেন সেখানে স্কুল কলেজের সার্টিফিকেট থেকে শুরু করে জাতীয় পরিচয়পত্র এমনকি কয়েকটি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটও রয়েছে।

বিঞ্চু ছত্রি জানান কার্ড সংশোধনের জন্য তিনি দুলালকে দিয়েছিলেন। দুলাল সেটা ঠিক করে দিবেন বললেও তার কাছে কোন টাকা পয়সা দাবি করেননি।

০৪/১২/২০১৬, রাত ১০টার সময় সিলেট মেট্টোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালী থানা পুলিশের কাছে দুলাল ও তাজুলকে তুলেদেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।

জালিয়াতীর শাস্তি প্রসঙ্গে সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচনী কর্মকর্তা এজহারুল হক বলেন, নির্বাচনী আইন অনুযায়ী ভোটার আইডিকার্ড জালিয়াতীর সাজা অনধিক ৭ বছরের জেল। সাথে ১ লক্ষ টাকা জরিমানার বিধানও রয়েছে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। তবে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *