নারায়ণগঞ্জ; দলের ভেতর কোনো বিভেদ নেই। নেতারা ঐক্যবদ্ধ। এখন হয়তো আসেননি বা নামেননি, তবে প্রতীক বরাদ্দের দিন দেখা যাবে। এমন কথাই বলে আসছিলেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনৈক্যের চিত্রই ফুটে উঠেছে প্রতীক বরাদ্দের সময়। মনোনয়নপত্র জমার দিন বিএনপিতে ঐক্য দেখা গেলেও গতকাল দেখা গেছে উল্টো চিত্র। শীর্ষ নেতাদের একটি অংশ গড় হাজির। এ নিয়ে বিএনপি শিবিরে নানা আলোচনা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমার দিনের আর গতকালের চিত্র একই। প্রতীক নেয়ার সময় দলের বিভাজন পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে মাঠ পর্যায়েরর নেতাকর্মীদের মাঝে। এতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র দুই প্রার্থীকে দলের অনৈক্যের মধ্যেই আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে হয়েছে।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতীক বুঝে নিতে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেডে যান ২০ দলীয় জোট প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সসদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, ৪ আসনের সাবেক সাংসদ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, নগর বিএনপি’র সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল প্রমুখ। দেখা যায়নি মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসা নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি আতাউর রহমান খান আঙ্গুর, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপি’র সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার, সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামান, বন্দর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল গংদের। এছাড়াও আসেননি জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. শাহ আলম। এই নেতাদের অনুপস্থিতিতে বিএনপি ভেতরের চিত্র বেরিয়ে এসেছে। গত কয়েকদিন উপরে উপরে বিএনপি প্রার্থী নেতাদের মধ্যে ঐক্যের কথা বলে এলেও গতকালের চিত্র হতাশ করেছে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের। তাছাড়া সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ক্লাবের সামনে এসে পৌঁছান সাখাওয়াত হোসেন খান। তখন সঙ্গে আসেন জেলা বিএনপি’র প্রস্তাবিত কমিটির সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস। যিনি ওয়ান- ইলেভেনের পর নারায়ণগঞ্জে বিএনপিকে সক্রিয় রাখতে কাজ করেছিলেন। ওই সময়ে সাখাওয়াত হোসেন ও তার লোকজন মিলে জান্নাতুল ফেরদৌসকে শরীরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। একপর্যায়ে ফেরদৌস ক্ষুব্ধ হয়ে ওই এলাকা ত্যাগ করেন। তখন আশপাশের লোকজন এসে জান্নাতুল ফেরদৌসকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, ‘ফেরদৌসকে বেশ উচ্চকণ্ঠেই সাখাওয়াত হোসেন বলতে থাকেন ‘আপনি তৈমূর সাহেবের লোক। তৈমূর সাহেব আসে নাই। আপনিও চলে যান।’ এ ব্যাপারে জান্নাতুল ফেরদৌস মুঠোফোনে জানান, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আমি ওই ঘটনায় খুবই ক্ষুব্ধ ও লজ্জিত। এর বেশি আমি কিছুই বলতে চাচ্ছি না। অন্যদিকে সাখাওয়াত হোসেন খান মুঠোফোনে জানান, এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। প্রতীক বরাদ্দের সময়ে কিছু নিয়ম ছিল। সেটা মেনে চলেছি। তখন হয়তো অনেকেই ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। এছাড়াও সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর ও শহর এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডে দলের নেতাদের মধ্যে বিভেদ দৃশ্যমান। নাসিকের ২৭টি ওয়ার্ডে নেতাদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে আওয়ামী লীগের দালাল আখ্যায়িত করে নানা মন্তব্য করে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, উপরে উপরে তারা বিএনপি’র কথা বললেও ভেতরে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে যোগযোগ রক্ষা করে চলছেন। এমনকি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের ছেলে গোলাম মুহাম্মদ সাদরিল ৫ নং ওয়ার্ড, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি আবুল কালামের ছেলে আবু কাউসার ২৩ নং ওয়ার্ডে এবং জেলা বিএনপি’র সভাপতি মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ১৩ নং ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী। এই তিন নেতা যতটা না দলীয় মেয়র প্রার্থী পক্ষে সক্রিয় হবেন তার চেয়ে বেশি তাদের সন্তান আর ভাইকে বিজয়ী করতেই মাঠে সক্রিয় থাকবেন। এমন অভিযোগ স্থানীয় বিএনপি’র নেতাকর্মীদের।
তবে জেলা বিএনপি’র সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার মানবজমিনকে বলেন, আমাদের মধ্যে কোন বিভেদ নেই। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি ম্যাডারের (চেয়ারপরসন) নির্দেশে। মনোনয়নপত্র জমার দিন আপনাকে দেখা গেলেও আজ (গতকাল) প্রতীক বরাদ্দের সময় দেখায় যায়নি কেনো? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজ (গতকাল) দেখা যায়নি। কাল (আজ) দেখা যাবে। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে নামবো। কারণ আমরা কাজ ভাগ করে নিয়েছি।
ওদিকে গতকাল বেলা পৌনে ১২টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতীক বুঝে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে যান ১৪ দলীয় প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, ব্যবসায়ী আবদুর রাশেদ রাশু, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম, জেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল কাদির এবং প্রবীণ আইনজীবী আসাদুজ্জামান। মনোয়নপত্র জমার দিন এবং গতকালও মহানগর আওয়ামী লীগের কোন নেতাকে তার সঙ্গে দেখা যায়নি। যদিও আইভী বলে আসছিলেন প্রতীক বরাদ্দের দিন ঐক্যের চিত্র দেখা যাবে না। কিন্তু বাস্তবে অনৈক্যই দেখেছে নেতাকর্মীরা। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে শামীম ওসমানের সঙ্গে তার দূরুত্ব বাড়ছে বরং কমছে না। দুইজনের দ্বন্দ্বে বেকাদায় দলের নেতাকর্মীরা। যদিও রোববার বিকালে শহরের চাষাড়ায় রাইফেল ক্লাবে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে শামীম ওসমান তার কষ্টের কথা বলেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, শামীম ওসমান বলেছেন, আইভী আমার বাবার নামে সমালোচনা করেছেন যা দুঃখজনক। আমি এতে অনেক কষ্ট পেয়েছি মর্মাহত হয়েছি। এ ধরনের কথা আমাকে পীড়া দিয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার দিন আমি আইভীকে তিনটি এসএমএস দিয়েছি। সে কোনো উত্তর দেয়নি। আমার তিনটি থানা এলাকার নেতাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তাতেও আমি আপনাদের সবাইকে বলেছি পরিস্থিতি সামলে দিতে। কারণ নৌকা প্রতীক কোনো ব্যক্তির না। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতীক, এটা বঙ্গবন্ধুর প্রতীক, স্বাধীনতার প্রতীক ও গণতন্ত্রের প্রতীক। তাই এ প্রতীকের পক্ষে কাজ করতে হবে- এটাই আমার নির্দেশনা। কিন্তু শামীম ওসমানের এই নির্দেশনার প্রতিফলন গতকাল দেখা যায়নি। তার অনুসারী কোনো নেতাকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণার সময় গতকাল আইভীর সঙ্গে দেখা যায়নি। এমনকি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেও আইভীর পক্ষে তার কোনো তৎপরতা নেই। যদিও দলের নেতাকর্মীদের ধারণা ছিল, মেয়র পদে মনোনয়ন না দিয়ে আনোয়ার হোসেনকে দল বঞ্চিত করলেও জেলা পরিষদের মনোনয়ন দিয়ে তাকে মূল্যায়ন করেছে। তাই আইভীর প্রতি তার ক্ষোভ, দুঃখ থাকার কথা নয়। কিন্তু তিনিও নিশ্চুপ।
এদিকে গতকালও আইভীর পক্ষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ১০/১২ জন নেতা নারায়ণগঞ্জে এসে মহানগরের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় বৈঠক করেন। বৈঠকে অল্প সময়ের জন্য আইভীও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ্ বলেন, ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী নৌকা প্রতীক নিয়ে এ নিার্বচনে অংশ নিচ্ছেন। এ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে সবাইকে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় আইভী বলেন, ‘আমি কোনো পদ-পদবি চাই নাই। আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবেই থাকতে চাই। এখন সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে আসুন সবাই নৌকার পক্ষে কাজ করি।’ বক্তব্য দিয়েই আইভী সিটি করপোরেশনের ৬ নং ওয়ার্ডের উদ্দেশে চলে যান।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন খান, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, স্বাচিপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু জাফর প্রমুখ। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, সহ-সভাপতি রোকন উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতীক বুঝে নিতে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেডে যান ২০ দলীয় জোট প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সসদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, ৪ আসনের সাবেক সাংসদ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, নগর বিএনপি’র সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল প্রমুখ। দেখা যায়নি মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসা নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি আতাউর রহমান খান আঙ্গুর, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপি’র সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার, সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামান, বন্দর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল গংদের। এছাড়াও আসেননি জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. শাহ আলম। এই নেতাদের অনুপস্থিতিতে বিএনপি ভেতরের চিত্র বেরিয়ে এসেছে। গত কয়েকদিন উপরে উপরে বিএনপি প্রার্থী নেতাদের মধ্যে ঐক্যের কথা বলে এলেও গতকালের চিত্র হতাশ করেছে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের। তাছাড়া সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ক্লাবের সামনে এসে পৌঁছান সাখাওয়াত হোসেন খান। তখন সঙ্গে আসেন জেলা বিএনপি’র প্রস্তাবিত কমিটির সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস। যিনি ওয়ান- ইলেভেনের পর নারায়ণগঞ্জে বিএনপিকে সক্রিয় রাখতে কাজ করেছিলেন। ওই সময়ে সাখাওয়াত হোসেন ও তার লোকজন মিলে জান্নাতুল ফেরদৌসকে শরীরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। একপর্যায়ে ফেরদৌস ক্ষুব্ধ হয়ে ওই এলাকা ত্যাগ করেন। তখন আশপাশের লোকজন এসে জান্নাতুল ফেরদৌসকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, ‘ফেরদৌসকে বেশ উচ্চকণ্ঠেই সাখাওয়াত হোসেন বলতে থাকেন ‘আপনি তৈমূর সাহেবের লোক। তৈমূর সাহেব আসে নাই। আপনিও চলে যান।’ এ ব্যাপারে জান্নাতুল ফেরদৌস মুঠোফোনে জানান, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আমি ওই ঘটনায় খুবই ক্ষুব্ধ ও লজ্জিত। এর বেশি আমি কিছুই বলতে চাচ্ছি না। অন্যদিকে সাখাওয়াত হোসেন খান মুঠোফোনে জানান, এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। প্রতীক বরাদ্দের সময়ে কিছু নিয়ম ছিল। সেটা মেনে চলেছি। তখন হয়তো অনেকেই ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। এছাড়াও সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর ও শহর এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডে দলের নেতাদের মধ্যে বিভেদ দৃশ্যমান। নাসিকের ২৭টি ওয়ার্ডে নেতাদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে আওয়ামী লীগের দালাল আখ্যায়িত করে নানা মন্তব্য করে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, উপরে উপরে তারা বিএনপি’র কথা বললেও ভেতরে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে যোগযোগ রক্ষা করে চলছেন। এমনকি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের ছেলে গোলাম মুহাম্মদ সাদরিল ৫ নং ওয়ার্ড, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি আবুল কালামের ছেলে আবু কাউসার ২৩ নং ওয়ার্ডে এবং জেলা বিএনপি’র সভাপতি মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ১৩ নং ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী। এই তিন নেতা যতটা না দলীয় মেয়র প্রার্থী পক্ষে সক্রিয় হবেন তার চেয়ে বেশি তাদের সন্তান আর ভাইকে বিজয়ী করতেই মাঠে সক্রিয় থাকবেন। এমন অভিযোগ স্থানীয় বিএনপি’র নেতাকর্মীদের।
তবে জেলা বিএনপি’র সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার মানবজমিনকে বলেন, আমাদের মধ্যে কোন বিভেদ নেই। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি ম্যাডারের (চেয়ারপরসন) নির্দেশে। মনোনয়নপত্র জমার দিন আপনাকে দেখা গেলেও আজ (গতকাল) প্রতীক বরাদ্দের সময় দেখায় যায়নি কেনো? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজ (গতকাল) দেখা যায়নি। কাল (আজ) দেখা যাবে। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে নামবো। কারণ আমরা কাজ ভাগ করে নিয়েছি।
ওদিকে গতকাল বেলা পৌনে ১২টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতীক বুঝে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে যান ১৪ দলীয় প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, ব্যবসায়ী আবদুর রাশেদ রাশু, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম, জেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল কাদির এবং প্রবীণ আইনজীবী আসাদুজ্জামান। মনোয়নপত্র জমার দিন এবং গতকালও মহানগর আওয়ামী লীগের কোন নেতাকে তার সঙ্গে দেখা যায়নি। যদিও আইভী বলে আসছিলেন প্রতীক বরাদ্দের দিন ঐক্যের চিত্র দেখা যাবে না। কিন্তু বাস্তবে অনৈক্যই দেখেছে নেতাকর্মীরা। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে শামীম ওসমানের সঙ্গে তার দূরুত্ব বাড়ছে বরং কমছে না। দুইজনের দ্বন্দ্বে বেকাদায় দলের নেতাকর্মীরা। যদিও রোববার বিকালে শহরের চাষাড়ায় রাইফেল ক্লাবে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে শামীম ওসমান তার কষ্টের কথা বলেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, শামীম ওসমান বলেছেন, আইভী আমার বাবার নামে সমালোচনা করেছেন যা দুঃখজনক। আমি এতে অনেক কষ্ট পেয়েছি মর্মাহত হয়েছি। এ ধরনের কথা আমাকে পীড়া দিয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার দিন আমি আইভীকে তিনটি এসএমএস দিয়েছি। সে কোনো উত্তর দেয়নি। আমার তিনটি থানা এলাকার নেতাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তাতেও আমি আপনাদের সবাইকে বলেছি পরিস্থিতি সামলে দিতে। কারণ নৌকা প্রতীক কোনো ব্যক্তির না। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতীক, এটা বঙ্গবন্ধুর প্রতীক, স্বাধীনতার প্রতীক ও গণতন্ত্রের প্রতীক। তাই এ প্রতীকের পক্ষে কাজ করতে হবে- এটাই আমার নির্দেশনা। কিন্তু শামীম ওসমানের এই নির্দেশনার প্রতিফলন গতকাল দেখা যায়নি। তার অনুসারী কোনো নেতাকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণার সময় গতকাল আইভীর সঙ্গে দেখা যায়নি। এমনকি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেও আইভীর পক্ষে তার কোনো তৎপরতা নেই। যদিও দলের নেতাকর্মীদের ধারণা ছিল, মেয়র পদে মনোনয়ন না দিয়ে আনোয়ার হোসেনকে দল বঞ্চিত করলেও জেলা পরিষদের মনোনয়ন দিয়ে তাকে মূল্যায়ন করেছে। তাই আইভীর প্রতি তার ক্ষোভ, দুঃখ থাকার কথা নয়। কিন্তু তিনিও নিশ্চুপ।
এদিকে গতকালও আইভীর পক্ষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ১০/১২ জন নেতা নারায়ণগঞ্জে এসে মহানগরের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় বৈঠক করেন। বৈঠকে অল্প সময়ের জন্য আইভীও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ্ বলেন, ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী নৌকা প্রতীক নিয়ে এ নিার্বচনে অংশ নিচ্ছেন। এ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে সবাইকে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় আইভী বলেন, ‘আমি কোনো পদ-পদবি চাই নাই। আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবেই থাকতে চাই। এখন সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে আসুন সবাই নৌকার পক্ষে কাজ করি।’ বক্তব্য দিয়েই আইভী সিটি করপোরেশনের ৬ নং ওয়ার্ডের উদ্দেশে চলে যান।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন খান, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, স্বাচিপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু জাফর প্রমুখ। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, সহ-সভাপতি রোকন উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।