ঢেলে সাজানো হচ্ছে রেলওয়ে পুলিশকে

Slider জাতীয়

97c85d46f4eef337aa92b2abb950e95a-18

 

ঢাকা; রেলওয়ে পুলিশকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। বর্তমান দুই জেলার অধীনে রেলওয়ে পুলিশ পরিচালিত হয়ে থাকে। জেলা দু’টি হলো চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুর। এই দুই জেলার অধীনে ১২টি করে রয়েছে মোট ২৪টি থানা। ফাঁড়ি রয়েছে ২৯টি। স্টেশন ও ট্রেন যাত্রীদের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেয়া উপলক্ষে আরো দুটি রেলওয়ে পুলিশের জেলা গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ঢাকা এবং পাকশি নামে দু’টি জেলা গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই দুই জেলার অধীনে আরো ১০টি থানা স্থাপন করা হবে। থানার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হবে আরো ২২টি পুলিশ ফাঁড়ি। ওই ১০টি থানায় ৫০০ পুলিশের সদস্যকে  স্থানান্তর করা হবে।
এ বিষয়ে রেলওয়ে পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম মানবজমিনকে জানান, স্টেশন ও ট্রেন যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য রেলওয়ে পুলিশের আরো দুইটি জেলা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওই দুইটি জেলা গঠন হলে স্টেশন ও ট্রেন যাত্রীদের আরো নিরাপত্তা বাড়বে। তিনি আরো বলেন, এই বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিগগিরই ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।
রেলওয়ে পুলিশের হেডকোয়ার্টার সূত্রে জানা গেছে, স্টেশন চত্বরের যাত্রীদের নিরাপত্তা প্রদান, স্টেশনের মধ্যে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, টিকিট বুকিং কাউন্টারের সামনে  শৃঙ্খলা স্থাপন, যাত্রীদের পণ্য সামগ্রী তল্লাশি করা, ট্রেন ভ্রমণে যাত্রীদের সঙ্গে থেকে যাত্রীদের নিরাপত্তা প্রদান করা, চোরাচালান রোধ ও রেললাইনের ১০ ফুট ডানে ও বামে কোনো লাশ পড়ে থাকলে তা উদ্ধার করে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে রেলওয়ে পুলিশ গঠন করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে রেলওয়ে পুলিশকে আরো আধুনিকায়নের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারই অংশ হিসাবে ঢাকা ও পাকশি নামে দুইটি জেলা গঠন করা হবে।
সূত্র জানায়, দুইটি জেলার অধীনে ১০টি থানা গঠন করা হবে। ঢাকা জেলার অধীনে থানাগুলো হবে ঢাকা রেলওয়ে থানা, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও জামালপুর। আর পাকশি জেলার অধীনে থানাগুলো হবে পাকশি, খুলনা, ফুলতলা, দিঘোলিয়া ও যশোর। সূত্র জানায়, রেল দুর্ঘটনা অথবা যাত্রীদের নিরাপত্তাজনিত কোনো ঘটনা ঘটলে থানা পুলিশের পাশাপাশি ফাঁড়ি পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাবেন। দুই জেলা গঠন হওয়ার পর ঢাকা রেলওয়ে থানা আর কমলাপুর স্টেশনের মধ্যে থাকবে না। এটি রামপুরার বনশ্রীতে স্থানান্তর করা হবে। ওই থানার জন্য ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে জমি ক্রয় করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলার অধীনে ১২টি রেলওয়ে থানা রয়েছে। ওই থানাগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানা, লাকসাম, চাঁদপুর, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, সিলেট ও ঢাকা। আর সৈয়দপুর জেলার অধীনে রেলওয়ে থানাগুলো হচ্ছে সৈয়দপুর রেলওয়ে থানা, দিনাজপুর, পার্বতীপুর, লালমনিরহাট, বোনারপাড়া, সান্তাহার, ঈশ্বরদী, সিরাজগঞ্জ, উল্লাপাড়া, রাজশাহী, রাজবাড়ি ও  পোড়াদহ। ওই দুইটি জেলার অধীনে ২৪ থানা পরিচালিত হয়ে থাকে।  চট্টগ্রামের ১২টি থানার অধীনে রয়েছে ১৭টি ফাঁড়ি আর সৈয়দপুর জেলার অধীনে রয়েছে ১২টি ফাঁড়ি। ওই থানা ও ফাঁড়িগুলো ট্রেন যাত্রীদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রদান করে আসছে।
রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই থানাগুলো স্টেশনের পাশেই অবস্থিত। স্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়ে যাবার সময় প্রত্যেক ট্রেনে রেলওয়ে পুলিশের ১০ সদস্য ট্রেনের আলাদা বগিতে অবস্থান করেন। তারা চলন্ত পথেই ট্রেনের মধ্যে কোনো দুর্বৃত্ত অবস্থান করছেন কিনা বা কোনো চোরাই মাল রয়েছে কিনা তল্লাশি করে থাকেন। সাম্প্রতিক সময়ে ট্রেন থেকে অবৈধভাবে আসা স্বর্ণ, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক সামগ্রী এবং চোরাচালানকৃত পণ্য উদ্ধারে রেলওয়ে পুলিশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশের সবচেয়ে বড় স্টেশন হচ্ছে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন। এই স্টেশন দিয়ে হাজার হাজার যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যস্থলে যাতায়াত করে থাকেন। স্টেশনের মধ্যেই রয়েছে ঢাকা রেলওয়ে থানা। ওই থানাটি হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলার অধীনে। নতুন দুই জেলা যোগ হলে ঢাকা জেলার অধীনে কমলাপুর রেলস্টেশনের আওতায় আসবে।
এতে আগের চেয়ে কমলাপুর স্টেশন ও ওই স্টেশন ব্যবহারকারী যাত্রীরা অধিক নিরাপত্তা পাবেন। জানতে চাইলে ঢাকা রেলওয়ে পুলিশের ওসি ইয়াসিন ফারুক মজুমদার জানান, ঢাকা রেলওয়ে থানা চট্টগ্রাম জেলার অধীনে। সেখান থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হয়। নতুন জেলা গঠন হলে ঢাকা রেলওয়ে থানা ঢাকা জেলার মধ্যে পড়বে। এতে নাগরিকগণ আগের চেয়ে আরো অধিক সেবা পাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *