শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে রাজনীতি

Slider রাজনীতি

42749_dateline-3

 

ঢাকা; কাছে কোথাও ফজরের আযান হচ্ছে। হাইয়া আলাস সালা, হাইয়া আলাল ফালা। মুয়াজ্জিনের সুললিত কণ্ঠ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। তবে ভোরেও নীরব-নিস্তব্ধ নয় রাজধানী। সংখ্যায় একেবারেই অল্প। তবুও একটু পরপর শোনা যায় হর্নের শব্দ।
ইতিহাস নগরী ঢাকা। এখানে তৈরি হয়েছে ইতিহাস। বহু নির্মমতাও সইতে হয়েছে এ অঞ্চলের মানুষকে। কখনো তারা প্রতিবাদী, কখনো সয়েছেন নীরবে।  ৫২, ৬৯, ৯০ এর জনঅভ্যুত্থানের কেন্দ্রতো ছিল এ ঢাকাই। ২৫শে মার্চ কালো রাতে পাক হানাদার বাহিনী প্রথম আঘাত হানে এ ঢাকার বুকেই। কুখ্যাত অপারেশন সার্চ লাইটে হত্যা করা হয় লাখ লাখ মানুষকে। মানুষ আবার বুক চিতিয়ে লড়াইও করেছে। ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলাদের বীরত্ব ইতিহাসের উজ্জ্বল অধ্যায়।
ইতিহাসের উজ্জ্বল-অনুজ্জ্বল অধ্যায়তো আছেই। যানজট, নিরন্তর গাড়ির হর্নের আওয়াজ। এর বাইরেও ঢাকার একটি সাধারণ দৃশ্য ছিল- মিছিলে, স্লোগানে উত্তাল রাজপথ। অর্ধ-শতাব্দীর বেশি সময় ধরে এমনটাই দেখা গেছে। অ্যাকশন, অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন শোনা যেত কান পাতলেই। সামরিক আধা-সামরিক জমানায় রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার সময়ের  কথা আলাদা। এ কথাও হলফ করে বলা যায়, সব মিছিলের চরিত্র এক ছিল না। হেলাল হাফিজের ভাষায়- ‘মিছিলের সব হাত, কণ্ঠ, পা এক নয়। সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে। কেউ আসে রাজপথ সাজাতে সংসার, কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার।’ সব মিছিল মুক্তি নিয়ে আসেনি। আবার সব মিছিল ধ্বংসও করেনি। মিছিলের ওপর ট্রাক উঠিয়ে দেয়ার মতো বর্বর ঘটনাও ঘটেছে এই ভূমিতে।
নানা তরিকায় ব্যাখ্যা করা যায়। কেউ হয়তো বলবেন, অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য এটাই প্রয়োজন। আবার বিপরীত যুক্তিও আছে কারো কাছে।  কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতি এখন চলছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। কোথাও মিছিল নেই, স্লোগান নেই। পল্টন ময়দান, মানিক মিয়া এভিনিউ  নীরব-নিস্তব্ধ। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ বিরতিতে মাঝে মাঝে সমাবেশ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি। ইতিহাসের প্রত্যাবর্তন হয়েছে। যদিও অভিনব ঘটনাও ঘটেছে। নতুন ধারার এক রাজনীতি করছে জাতীয় পার্টি। স্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতা, স্বামী প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। যা হওয়ার তাই হচ্ছে। ঘরোয়া কিছু সভা-সমাবেশ অবশ্য করে দলটি। সে সমাবেশে কিছু কবিতা পাঠ হয়, হয় কিছু অভিমানও। বিএনপির রাজনীতি পুরোটাই ইমারত কেন্দ্রিক। খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে মাঝে মাঝে রাতে কিছু বৈঠক হয়। প্রেস ক্লাব বা এ ধরনের কোনো মিলনায়তনে বিভিন্ন সাইনবোর্ড সংগঠনে বিএনপির কিছু কেন্দ্রীয় নেতা অতিথি থাকেন। এর বাইরে নিয়মিত কর্মসূচি পল্টন কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং। গৎবাঁধা, বৈচিত্র্যহীন। জামায়াত কোথাও নেই। দুনিয়ার মজদুর এক হও- মাঝে মাঝে স্লোগান শোনা যায়। সুন্দরবন বাঁচাও স্লোগানও উঠে কখনো কখনো। তবে এসব স্লোগান খুবই ক্ষীণ। যেমন ক্ষীণ ইতিহাসের ট্রাক শীতাতপ কক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *