মামলায় বলা হয়েছে, মামলার আসামিরা বেতনভুক্ত সরকারি কর্মচারী হওয়ার পরও পরস্পর যোগসাজশে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে বন্দীদের মধ্যে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করেন। তাঁরা বন্দীদের ফাইল কাটা, জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত আসামিদের কাগজে ভুল আছে বলে বন্দীদের কাছ থেকে টাকা আদায়, কয়েদি বন্দীদের পাহারার জন্য, বন্দীদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য অফিস কল বাবদ, বাইরের কারা ক্যানটিনে বন্দীদের আত্মীয়স্বজনদের আনা মালামালের ব্যাগপ্রতি, বাইরের কারা ক্যানটিনের ম্যানেজারের কাছে, বন্দীদের সাক্ষাৎপ্রার্থী ব্যক্তিদের কাছ থেকে স্লিপপ্রতি, ওকালতনামা স্বাক্ষর করাসহ বিভিন্ন খাতে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ আদায় করতেন। এমনকি কারাগারের ভেতরের ক্যানটিন থেকে বন্দীদের খাবার কিনতে বাধ্য করা, অতিরিক্ত মূল্যে খাবার বিক্রি করা, বন্দীদের কম পরিমাণ খাবার দেওয়া এবং বিভিন্ন বন্দীর কাছ থেকে সাপ্তাহিক, মাসিক বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন অঙ্কের চাঁদা হিসেবে গ্রহণ করে কারাগারের ভেতরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করছেন।
এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে আসামিরা বাদীর ভাই কারাবন্দী মো. শাহী মিয়াকে গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিদিন প্রায় সময় শারীরিক নির্যাতন চালান এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অপারগতা জানালে গত ২৭ সেপ্টেম্বর আসামিরা শাহী মিয়াকে বেদম মারধর করেন। ১ নম্বর আসামি জেলার আকতার হোসেনের নির্দেশে অন্য তিন আসামি শাহীর তলপেটে বুট দিয়ে পিষে গুরুতর জখম করেন। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে রক্তবমি করতে থাকেন এবং তাঁর কিডনি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য শাহীকে গোপনে দ্রুত যশোর জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেন তাঁরা। বর্তমানে সেখানে শাহী মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৮৪/৩৮৫/৩৮৬/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৪ ধারামতে অপরাধ আমলে নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে সুবিচারের আবেদন করেন বাদী মনিরুল ইসলাম।
আইনজীবী এহান উদ্দীন আজ সোমবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন,‘জেলা কারাগারের অভ্যন্তরে মারধরসহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলাটির নথি পর্যালোচনা করে আমলে নেন মেহেরপুর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মো. ছানাউল্ল্যাহ। তিনি নিজে মামলাটি তদন্ত করেন। এতে বাদী, সাক্ষী ও আসামিদের জবানবন্দি নেন। আজ দুপুরে জেলার আকতার হোসেন ও তিন কারারক্ষীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদেশের কপি দু-তিন দিনের মধ্যে মেহেরপুর সদর থানায় পৌঁছে যাবে।’
মামলা দায়েরের পর জেলার আকতার হোসেন বদলি হয়ে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে চলে আসেন।