নারায়ণগঞ্জে উন্নয়ন আর অধিকারের লড়াই, বলছেন প্রার্থীরা

Slider টপ নিউজ বাংলার মুখোমুখি

dcbbfe28158da79f31b52bc99224f3fb-112

 

নারায়ণগঞ্জ; নাসিক নির্বাচনে দুই ইস্যুতে মাঠে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থী। একদিকে  উন্নয়ন অন্যদিকে ভোটের অধিকার। কোন দিকে রায় দেবে নারায়ণগঞ্জের পৌনে ৫ লাখ ভোটার। তারই বিশ্লেষণ চলছে। আওয়ামী লীগের সমর্থকরা বলছেন, উন্নয়নই প্রাধান্য পাবে। গত ৫ বছর সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী নাসিকে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। আবার বিএনপি সমর্থকরা বলছেন, গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরে মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করায় মানুষ ক্ষমতাসীনদের ওপর নারাজ। তাছাড়া বিরোধী দলকে নিষ্ক্রীয় করতে হামলা, মামলা, দমনপীড়ন ও নির্যাতন ছিল চোখে পড়ার মতো।
এ বিষয়ে আইভী বলেন, গতবার নির্দলীয় নির্বাচন ছিল। এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। আমি মনে করি এ নির্বাচনটা স্থানীয় সরকারের নির্বাচন সেহেতু প্রতীকের কারণে সেভাবে প্রভাব পড়ার কথা নয়। এখানে একটা ব্যক্তির পরিবর্তন হচ্ছে, ক্ষমতার পরিবর্তন হচ্ছে না। সুতরাং আমি মনে করি যে এ নির্বাচনে জাতীয় রাজনীতির কোনো প্রভাব পড়বে না।
আইভী বলেন, গত ৫ বছর সিটি করপোরেশনে কাজ করেছি। কতটুকু করতে পেরেছি তার মূল্যায়ন নগরবাসী করবেন। আমি প্রতিটি মুহূর্ত চেষ্টা করেছি। গত ৫ বছরে ৬০০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নয়ন কাজের মধ্যে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা সিটি করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়ন। বাকিটা সরকারসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থাগুলো থেকে পাওয়া। বিগত দিনে যেসব উন্নয়ন কাজ হয়েছে তার সব হিসাব নগর ভবনে রয়েছে। যে কেউ চাইলে নগর ভবনে গিয়ে দেখতে পারেন। আল্লাহকে হাজির-নাজির রেখে আমি জনসেবা করেছি। আমি এক টাকাও দুর্নীতি করি নাই। আমি আশাবাদী মানুষ উন্নয়নের পক্ষেই রায় দেবে।
তবে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ নির্বাচন অবশ্যই জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। কারণ, নাসিকে দুটি প্রতীকে ভোট হচ্ছে। একটি হচ্ছে মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করার প্রতীক। আরেকটি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলনের প্রতীক। নৌকা গণতন্ত্র হরণের প্রতীক। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য মানুষ এবার ধানের শীষে ভোট দেবে। তাছাড়া বিরোধী মতকে দমনের নামে ক্ষমতাসীন দলের হামলা, মামলা, জুলুম, নির্যাতনে মানুষ অতিষ্ঠ। তাই নারায়ণগঞ্জবাসী পরিবর্তন চায়।
সাবেক মেয়রের উন্নয়ন বিষয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বর্তমান মেয়র নারায়ণগঞ্জে কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল কলেজ নেই। ফ্লাইওভার করতে পারেনি। পার্ক করতে পারেনি। পানির সমস্যা, মাদক, সন্ত্রাস এটা নিত্যদিনের সঙ্গী।
এদিকে ভোটযুদ্ধে নামার আগে ঘর গোছাতে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী। বিভিন্ন কৌশলে তারা দলের, নেতাদের মান-অভিমান ভাঙিয়ে মাঠে নামানোর চেষ্টা করছেন। কেউ ওভার টেলিফোনে আবার কেউ সশরীরে শীর্ষ নেতাদের বাসায় যাচ্ছেন। আগামী ৪ঠা ডিসেম্বরের মধ্যে তারা এ কাজটি সম্পন্ন করতে চান। কারণ, ৫ই ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পরই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ভোটযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রার্থীদের প্রচারণা চালানো আচরণবিধি লঙ্ঘন। তাই ভোটযুদ্ধে আগে নেতাদের মন জয় করতে হেভিওয়েট দুই প্রার্থী নিজ দলের নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. আইভী জানান, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর আমি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার কাকার বাসায় গিয়েছি। কিন্তু ঘর তালাবদ্ধ থাকায় দেখা হয়নি। শুক্রবার রাতে ল্যাবএইডে তাকে দেখতে গিয়েছি। স্থানীয় এমপি শামীম ওসমানের কাছেও যাবো। ভোট চাইবো। তিনিও নৌকার জন্য মাঠে নামবেন। মনোনয়ন জমার দিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সোনারগাঁয়ের সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত আমার সঙ্গে ছিলেন। এছাড়া অনেকের সঙ্গেই আমার টেলিফোনে কথা হয়েছে। সময় মতো তারা নৌকার পক্ষে মাঠে নামবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। তাছাড়া মঙ্গলবার রাতে গণভবনে নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমাদের সবাইকে নিয়ে বৈঠক শেষে মিলমিশ করে দিয়েছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে আমার পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। ফলে শেষ পর্যন্ত আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ থাকবে না।
আইভী বলেন, আমাকে নৌকা প্রতীক দেয়ার পর তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে। আশা করি ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝি যা আছে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। সবাই মিলে আমরা ইলেকশন করব, ইনশাল্লাহ। আমি সবাইকে অনুরোধ করবো প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর নৌকা প্রতীকের পক্ষেই কাজ করতে। তাছাড়া তৃণমূল গতবারও আমার জন্য কাজ করেছে, এবারও আমার সঙ্গে তারা কাজ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দলের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মনোনয়ন দেয়ার আগেই জেলার সব নেতাকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। সবার কথা শুনেছেন। সবার মত নিয়েছেন। এরপরেই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। ম্যাডামের (দলের চেয়ারপারসন) কাছে নারায়ণগঞ্জের সব নেতা প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন সবাই সিটি নির্বাচনের জন্য কাজ করবেন। তাই দলের মধ্যে কোনো বিভেদ হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তার প্রমাণ মনোনয়নপত্র জমার দিন জেলার সব শীর্ষ নেতার উপস্থিতি। তারপরও আমি নেতাদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি। আজও (শনিবার) সকালে জেলা বিএনপি নেতা জান্নাতুল ফেরদৌস, শহর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর কমিশনার, জাসাসের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আনিসুল ইসলাম সানিসহ অনেকের বাড়িতে গিয়ে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। দুপুরের পর নাসিকের ৩নং ওয়ার্ড সানারপাড় ও ৯নং ওয়ার্ড জালকুড়িতে গিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছি। এছাড়া গত দুদিনে সাবেক এমপি আবুল কালাম, প্রবীণ বিএনপি নেতা জামল উদ্দিন কালু, আব্দুল মজিদ, শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালসহ অনেকের বাড়িতে গিয়েছি। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করার আগে আশা করি সিটি এলাকার সব নেতাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ শেষ করতে পারবো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নেতাদের মধ্যে মান-অভিমান থাকাটা স্বাভাবিক। আমি আশা করি দলের বৃহত্তর স্বার্থে সেই মান-অভিমান প্রশমিত হবে।

১০ জনের মনোনয়ন বাতিল
এদিকে মনোনয়নপত্র যাছাই-বাছাইয়ের প্রথম দিন গতকাল শনিবার ১০ জন কাউন্সিলরের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ ক্লাব মিলনায়তনে ১ থেকে ১৮নং ওয়ার্ডের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই হয়। আজ বাকি ওয়ার্ড ও মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই হবে।
নাসিক নির্বাচনের রির্টানিং অফিসার মো. নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, ‘তথ্য ভুল, ঋণখেলাপি, তথ্য গোপন ও বয়স কম থাকায় ১নং সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর আবেদনকারী সুমন কাজী, ৩নং ওয়ার্ডে নূর সালাম, ৪, ৫, ৬ নং সংরক্ষিত আসনের মোসা. সুমি বেগম, বয়স কম থাকায় ৫নং ওয়ার্ডে গোলাম মো. তানভীর, ৭নং ওয়ার্ডে আবুল কালাম দেওয়ান, ৮নং ওয়ার্ডে দেলোয়ার হোসেন খোকন, ১২নং ওয়ার্ডে জিল্লুর রহমান লিটন, ১৩নং ওয়ার্ডে মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও শাহ ফয়েজ উল্লাহ, ১৪নং ওয়ার্ডে দিদার খন্দকারের মনোনয়নপত্র বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
রিটার্নিং অফিসার আরো জানান, ‘যাদের প্রার্থিতা অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে তারা আগামী ২৯শে নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে অভিযোগ করার সুযোগ পাবেন। এছাড়া তাদের প্রার্থিতা বৈধ প্রমাণিত করার জন্য আগামী ৫ই ডিসেম্বর সকাল ১০টা পর্যন্ত সময় রয়েছে। তবে যাদের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে অবশ্যই তারা নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করবেন না। অন্যথায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উল্লেখ্য, নির্বাচনে ৯ জন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী, সংরক্ষিত (নারী) কাউন্সিলর পদে ৩৮ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৭৫ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *