ডেস্ক; চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল। গ্রিন পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী জিল স্টেইন সুইং স্টেট হিসেবে পরিচিত তিনটি রাজ্যের মধ্যে একটি- উইসকনসিনের ফল চ্যালেঞ্জ করেছেন। ওই রাজ্যের ব্যালট তিনি নতুন করে গণনা করার জন্য আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের নির্বাচন কমিশনে।
উইসকনসিন ইলেকশন কমিশন প্রশাসক মাইকেল হ্যাস তার আবেদন হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ভোট পুনরায় গণণার জন্য সময় প্রায় শেষ হয়ে আসার পূর্ব মুহূর্তে জিল স্টেইনের আবেদন জমা পড়েছে। এই আবেদন করার সময় এক ঘণ্টার কিছুটা বেশি বাকি থাককে স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে তার আবেদন জমা দেন রোকি রোক ডি লা ফুয়েন্তে। প্রক্রিয়া অনুযায়ী আগামী সপ্তাহে ওই রাজ্যে ভোট নতুন করে গণনা শুরু হবে। এছাড়া পেনসিলভানিয়া ও মিশিগান রাজ্যের ভোট নতুন করে গণনার আবেদন জানাবেন জিল স্টেইন। ডেমোক্রেটদের ঘাঁটি বলে পরিচিত এ রাজ্যগুলোতে অল্প ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন রিপাবলিকান দল থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্প। যদি এগুলোতে নতুন করে ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন বিজয়ী হন তাহলে তাতে ডেমোক্রেট শিবিরে কিছুটা স্বস্তি হয়তো ফিরে আসবে। কিন্তু গত ৮ই নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। এসব খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স, অনলাইন ইন্ডিপেন্ডেন্ট, এক্সপ্রেস। এতে বলা হয়েছে, শুক্রবার জিল স্টেইনের কাছ থেকে ভোট নতুন করে গণনার আবেদন পাওয়ার পর উইসকনসিনের নির্বাচন কমিশন তাদের কার্যক্রম শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছে। উইসকনসিনের মোট ভোট প্রায় ৩০ লাখ। এত ভোট গণনা করতে নির্বাচন কমিশনের যে খরচ হবে সেই খরচের অর্থ বা ফি জমা দিয়েছেন জিল স্টেইন। ফলে আগামী ১৩ই ডিসেম্বরের মধ্যে উইসকনসিন রাজ্যকে নতুন করে গণনা শেষ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন তার ওয়েবসাইটে বলেছে, গণনার ফি নতুন করে নির্ধারণ করতে হবে। তবে শুক্রবার ফেসবুকে জিল স্টেইন এক বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ খাতে খরচের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১১ লাখ ডলার। এরই মধ্যে তিনি উইসকনসিন, মিশিগান ও পেনসিলভানিয়া রাজ্যে ভোট পুনরায় গণনার জন্য তহবিল সংগ্রহ শুরু করেছেন। তাতে জমা পড়েছে কমপক্ষে ৫০ লাখ ডলার। তবে সব ফি ও আইনি খরচা হিসেবে মোট ৭০ লাখ ডলার সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন জিল স্টেইন। নিজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি শুক্রবার বলেছেন, নতুন করে ভোট গণনার মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ভোট ব্যবস্থায় সততা যাচাই করতে চাইছেন। এর মাধ্যমে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্পকে হেয় করতে চান না। এটা তার উদ্দেশ্যও নয়। তিনি সিএনএনকে বলেছেন, এবারের নির্বাচন ছিল হ্যাকড। বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও ব্যক্তিবিশেষের ই-মেইল একাউন্ট হ্যাক করা হয়েছে নির্বাচনের আগে। মিডিয়ায় কম্পিউটার নিরিাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরাও হিলারিকে ভোট পুনরায় গণনার আবেদন জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে হিলারির পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এমন অবস্থায় এগিয়ে এসেছেন জিল স্টেইন। তিনি শুক্রবার শেষ মুহূর্তে উইসকনসিনে আবেদন করলেন। এখন পেনসিলভানিয়াতে এমন আবেদন জানানোর শেষ সময় আগামী সোমবার। মিশিগানে সর্বশেষ সময় আগামী বুধবার। এ সময়ের মধ্যে এ দুটি রাজ্যে একই আবেদন জানাবেন জিল স্টেইন। তার সঙ্গে এ যাত্রায় রয়েছেন তৃতীয় পার্টির প্রার্থী রোকি রোক ডি লা ফুয়েন্তে। রিপোর্টে বলা হচ্ছে, উইসকনসিন, মিশিগান, পেনসিলভ্যানিয়াতে ডনাল্ড ট্রাম্প অল্প ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন। কিন্তু নতুন করে গণনায় যদি হিলারি সেখানে বিজয়ী হনও তবু তার হোয়াইট হাউসে যাওয়ার টিকিট মেলা ভার। পেনসিলভানিয়াতে হিলারিকে ৭০ হাজার ১০ ভোটে, মিশিগানে ১০ হাজার ৭০৪ ভোটে ও উইসকনসিনে ২৭ হাজার ২৫৭ ভোটে পরাজিত করেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একটি রাজ্যে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পান তিনিই ওই রাজ্যের সব ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেয়ে যান। এ হিসাবে একজন প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেতে হয়। অনেক আগেই তা অর্জন করেছেন ট্রাম্প। তবে চূড়ান্ত কলেজ ভোট সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশের শেষ সময় আগামী ১৯শে ডিসেম্বর। ফলে নতুন করে ভোট গণনা করলে তা এ সময়ের মধ্যে শেষ করতেই হবে। উল্লেখ্য, ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও পপুলার ভোট বেশি পেয়েছেন হিলারি ক্লিনটন। তিনি ট্রাম্পের চেয়ে শেষ পর্যন্ত ২০ লাখ ভোট বেশি পাবেন।