ঢাকা; দীপা খন্দকার। ছোটপর্দার জনপ্রিয় মুখ। ১৯৯৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নিয়মিত মিডিয়াতে কাজ করছেন। নাটক, উপস্থাপনায় সরব তিনি। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই এ যাবৎ দক্ষ অভিনয়শৈলীর মাধ্যমে মিডিয়াতে নিজেকে বেশ শক্ত অবস্থানে ধরে রেখেছেন। একটি কাজ করেই কখনো ক্লান্তি আসে না দীপার। আর সেটা হলো অভিনয়। যতক্ষণ পরিচালকের ‘প্যাক আপ’ শব্দটি কানে না বাজবে ততক্ষণ যন্ত্রের মতো অভিনয় চালিয়ে যান। কখনো বলেন না ‘আর পারছি না’। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পৃথিবীতে সব মানুষের কিছুু না কিছুর প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা থেকেই থাকে। আর সে ভালোবাসার ক্ষেত্রে কখনো কোনো ক্লান্তি আসে না। অভিনয় আমার ঠিক সে রকমের ভালোবাসা। এটা আমাকে যতক্ষণ করতে বলা হবে ততক্ষণই করতে পারব। আর দশজন বাঙালী মেয়ের মতোই স্বামী, সংসার ও সন্তান নিয়ে জীবনযাপন করেন দীপা। কিন্তু যখনই শুটিং স্পটের দিকে এগিয়ে যান তখনই তার চেহারা একটু একটু করে পরিবর্তিত হতে থাকে। শুটিং স্পটের দিকে রওনা হওয়া মাত্রই ব্যক্তি দীপা খন্দকারকে ভুলে যান তিনি। শুধু তাই নয়, সেখানে গিয়ে আরো একবার রূপ বদল করেন। যখন মেক-আপ রুমে গিয়ে হাজির হন হারিয়ে ফেলেন নিজেকে। এটা ইচ্ছে করে নয়। অবচেতন মনেই হয়ে যায়। এর অবশ্য কারণও রয়েছে। অভিনয়ের প্রতি যার ধ্যান-জ্ঞান তখন স্বাভাবিকভাবে তিনি কাজ করতে গেলে বাস্তব জীবন থেকে নিজেকে তো সরিয়ে ফেলবেনই। এ মুহূর্তে একাধিক ধারাবাহিকের শুটিং নিয়ে ব্যস্ত আছেন দীপা খন্দকার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑবাংলাভিশনের ‘লড়াই’, মাছরাঙা টিভির ‘হাউস ওয়াইফ’, বিটিভিতে প্রচার প্রতীক্ষিত ‘নীল জোছনা’সহ আরো কয়েকটি। অভিনয়ের ব্যস্ততার বাইরে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে ‘হাউস ওয়াইফ’ নামের একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনার কাজও করছেন দীপা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ধরনের একটি কাজ করার জন্য অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল। মনে মনে ভাবছিলাম। আর সে সঙ্গে চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর থেকে প্রস্তাব এল। সত্যিই বেশ ভালোলাগার একটি কাজ। ইতিমধ্যে দর্শক সাড়াও পেয়েছি অনেক। আশা করছি সামনে আরো চমকপ্রদ কিছু থাকবে অনুষ্ঠানটি ঘিরে। ‘কাকতাড়ুয়া’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে অভিনয়ের শুরুটা করেছিলেন দীপা খন্দকার। তার অভিনীত বেশকিছু দর্শকপ্রিয় নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘মেঘে ঢাকা মানুষ’, ‘এবং আমি’, ‘অন্ধকারের ফুল’, ‘ঘর-সংসার’, ‘মহুয়া’, ‘স্বপ্নভোগ, ‘সোসাইটি’, ‘সাক্ষী কুটুম’, ‘অপেক্ষার বৃষ্টি এবং একটি গোল্ডফিশের অপমৃত্যু’, ‘মন তার সঙ্গিনী’, ‘জীবনের এই স্বাদ’, ‘কাঁচের মেয়ে’, ‘পাথরগলা স্রোত’, ‘আলোকনগর’, ‘ধুপখালির ঘটকালি’, ‘ফু’, ‘সুসংবাদ, ‘পলাতক সন্ত্রাসী’, ‘বলি বলি করি তবু বলা হলো না’, ‘নিমগ্নতায় স্রোত’, ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’, ‘সেই তুমি এই তুমি’ ইত্যাদি। অভিনয়ের দীর্ঘ জীবন কেটে গেছে দীপার। কিন্তু এ সময়ে টিভি মিডিয়া সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়াননি তিনি। সম্প্রতি নাটকের সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। বিদেশী সিরিয়াল বন্ধের দাবিতে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে সমবেত হবেন। কোনো সংগঠনের সঙ্গে না থাকলেও এ বিষয়ে নিজের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন দীপা। তিনি বলেন, আমি কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িত নই। তবে নাটকের স্বার্থে, আমাদের সংস্কৃতির স্বার্থে এই আন্দোলনকে আমি সমর্থন জানাই। সে সঙ্গে ৩০শে নভেম্বর সবার সঙ্গে আমিও উপস্থিত থাকবো। আমি চাই আমাদের নাটকের অবস্থা ভালো হোক। সুদিন ফিরে আসুক। হালে নাট্যাঙ্গনে নতুন কিছু অভিনয়শিল্পীর সম্পৃক্ততা ঘটেছে। এসব নতুনকে নিয়ে দীপার মূল্যায়ন জানতে চাইলে বলেন, এখন যেসব নতুন অভিনয় জগতে এসেছেন তাদের অনেকেই ভালো কাজ করছেন। আবার অনেকে এসেই নাটকে কাজ করার পাশাপাশি ফিল্মে অভিনয় করার জন্য তড়িঘড়ি করছেন। কিংবা দ্রুত তারকাখ্যাতির নেশায়ও মেতে উঠেছেন। এটা ঠিক নয়। আগে ছোটপর্দায় কাজ শেখা উচিৎ। রাতারাতি তারকাখ্যাতি পাওয়া যায়। কিন্তু সেটা খুব বেশিদিন স্থায়ী হয় না। এই কথাটি সবার মানতেই হবে। মিডিয়ায় কাজের পাশাপাশি সংসার জীবনটাও বেশ উপভোগ করছেন দীপা খন্দকার। অভিনয়ের বাইরে পুরো সময়টা সন্তানদের জন্য রাখেন। তাদের ঘিরেই তার সবকিছু বলে জানান তিনি।