ঢাকা; বিশেষ ক্ষেত্রে অপ্রাপ্তবয়সী (১৮ বছরের নিচে) মেয়েদেরও বিয়ের সুযোগ রেখে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৬’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আগের মতোই নতুন আইনে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছর ও ছেলেদের ২১ বছর রাখা হয়েছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আইনটি অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন অনুমোদনের কথা জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, অপ্রাপ্ত বয়স্কের সংজ্ঞায় আইনে বলা হয়েছে, বিবাহের জন্য উপযুক্ত ২১ বছর পূর্ণ হয়নি এমন কোনো পুরুষ এবং ১৮ বছর পূর্ণ করেননি এমন কোনো নারী। বাল্যবিবাহ হচ্ছে, যেখানে এক পক্ষ বা উভয়পক্ষ অপ্রাপ্তবয়স্ক। ১৯২৯ সালের চাইল্ড ম্যারেজ রেজিস্টার্ড অ্যাক্টকে পুনর্বিন্যাস ও বাংলায় রূপান্তর করে নতুন আইনটি করা হয়েছে। আইনের ১৯ ধারায় একটি বিশেষ বিধান রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সেখানে বলা হয়েছে, এ আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশে এবং মাতা-পিতার সম্মতিতে বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত পদ্ধতিতে বিয়ে হলে তা এ আইনের অপরাধ বলে গণ্য হবে না। বিশেষ প্রেক্ষাপট কি? এমন প্রশ্নে শফিউল আলম বলেন, কত ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।…হয়ে যায়। ওটাকে লিগ্যালাইজ করার জন্য এ বিধান। খসড়া আইনের বিষয়ে শফিউল আলম বলেন, আদালত নিজ উদ্যোগে বা কারো অভিযোগের ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ বা বিয়ে (বাল্যবিবাহ) থামিয়ে দিতে পারবে। একই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন না হলে প্রত্যাহারও করে নিতে পারবেন। নিষেধাজ্ঞা ভেঙে বিয়ে আয়োজন করলে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা অর্ধদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে। কেউ মিথ্যা অভিযোগ করলে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৩০ হাজার টাকা অর্ধদণ্ড বা উভয়দণ্ড দেয়া যাবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারী বা পুরুষ বাল্যবিবাহ করলে সর্বোচ্চ ১৫ দিনের আটকাদেশ বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষ বাল্যবিবাহ করে বা শিশুকে বিবাহ করলে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড হতে পারে। তিনি বলেন, বাল্যবিবাহের সঙ্গে পিতা-মাতা বা অন্য ব্যক্তি জড়িত থাকলে তাদের জন্যও সর্বোচ্চ ২ বছরের সর্বনিম্ন ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। অর্থদণ্ড অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বাল্যবিবাহ পরিচালনার ক্ষেত্রে কাজীসহ অন্যরা সর্বোচ্চ ২ বছরের কমপক্ষে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। শফিউল আলম বলেন, বাল্যবিবাহ বন্ধে উদ্যোগী হওয়ার শর্তে বাল্যবিবাহের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া যাবে- এমন একটা বিধান রাখা হয়েছে আইনে। বাল্যবিবাহ নিবন্ধনের জন্য বিবাহ নিবন্ধকের সর্বোচ্চ ২ বছর সর্বনিম্ন ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেয়া যাবে। একই সঙ্গে লাইসেন্স বাতিল হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে ইচ্ছুক নারী বা পুরুষের বয়স প্রমাণের জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) বা সমমানের পরীক্ষার সার্টিফিকেট, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) বা সমমানের পরীক্ষা সার্টিফিকেট, প্রাইমারি স্কুল সার্টিফিকেট বা সমমানের পরীক্ষার সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট আইনগত দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে। যে কোনো একটা দিয়ে বয়স প্রমাণ করা যাবে। খসড়া আইনে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে ক্ষতিপূরণের বিধান রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যে জরিমানা আরোপ করা হয় তা ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পরিশোধ করা যাবে। শফিউল আলম বলেন, অন্যান্য ফৌজদারি অপরাধের বিচার যেভাবে হয় (এ আইনের অপরাধের বিচার) সেভাবেই হবে। এখানে সরজমিন তদন্তের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মোবাইল কোর্টও এ আইনের আওতায় প্রযোজ্য হতে পারে। এর আগে ২০১৪ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এদিকে সরকারি কর্মচারী আইন মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আইনটি উপস্থাপন করে। প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, সরকারি কর্মচারী আইন মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়নি। সিদ্ধান্ত হয়েছে, এটি আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পুনরায় পেশ করা হোক। মন্ত্রিসভা আইনটি কেন অনুমোদন দেয়নি? এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা (সরকারি কর্মচারী আইন) ছিল ১৬ ধারার ছোট আইন। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর এটা ৭১টি ধারার অনেক বড় আইন হয়ে গেছে। এ জন্য মন্ত্রিসভা বলেছে, এটা একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার। কারণ অনেক বড় পরিবর্তন হয়ে গেছে। এর আগে গত বছরের ১৩ই জুলাই সরকারি কর্মচারী আইনের খসড়াটি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। এক বছর চার মাসেরও বেশি সময় পরও খসড়াটি মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদন পেলো না।