তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চেয়ে তাঁর সামরিক সচিবের সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব কথা বলেছেন। কিন্তু সামরিক সচিব কিছু জানাননি। আজ আবার লিখিতভাবে সাক্ষাতের সময় চাইবেন তাঁরা। আশা করছেন, রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে রাষ্ট্রপতি বিএনপির প্রতিনিধিদলকে সাক্ষাতের সময় দেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব ছাড়াও জ্যেষ্ঠ নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মওদুদ আহমদসহ দলের স্থায়ী কমিটির ছয়জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাঁরা বিএনপির প্রস্তাব সংবিধানের লঙ্ঘন কি না, প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক ক্ষমতা খর্ব করা কি না, নির্বাচনকালে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাবের সমালোচনা, বিএনপির প্রস্তাবে বিচার বিভাগকে উপেক্ষা করা হয়েছে কি না—বিভিন্ন মহল থেকে ওঠা এমন নানা প্রশ্নের জবাব দেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘গণমাধ্যমে এই প্রস্তাবগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে লেখালেখি হচ্ছে, এটা আমাদের অনুপ্রাণিত করছে। যেসব প্রশ্ন উঠেছে, সে বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সংবিধানকে সামনে রেখেই প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করেছি। সুতরাং সংবিধান কোথাও লঙ্ঘিত হয়েছে বলে আমরা মনে করি না। সব দলের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে প্রস্তাবে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সব দল বলতে আমরা কি বলতে চেয়েছি। এখানে অস্পষ্টতার বা কৌশলের কিছু নেই। বাস্তবতার আলোকেই এই প্রস্তাব প্রদান করা হয়েছে।’
ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের গঠন বিষয়ে বিএনপি কোনো আইন করতে চায় না কেন? এমন প্রশ্ন উঠেছে। জবাবে তিনি বিনা ভোটে ১৫৪ জনের সাংসদ নির্বাচিত হওয়া এবং বাকি ১৪৬ জন শতকরা ৫ ভাগের নিচে ভোটার অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিএনপি সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে ১৫৪ জন অনির্বাচিত সাংসদ নিয়ে যে সংসদ বহাল আছে, সে সংসদ যদি কোনো আইন বা বিধি প্রণয়ন করে, তার নৈতিক ভিত্তি হবে খুবই দুর্বল। এ সংসদ প্রণীত আইন নৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থানে থেকে যেভাবে এবং যে ভাষায় প্রণীত হবে, তা অনেক রাজনৈতিক দলের কাছে, এমনকি দেশবাসীর কাছে অগ্রহণযোগ্য হয়ে যেতে পারে। তবে সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সমঝোতা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই আইনের যে কাঠামো এবং শর্তাবলি নির্দিষ্ট করে দেবে, তার হুবহু অনুসরণ করে আইন প্রণীত হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, বলেন, নির্বাচনের সময়ে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতাসহ মোতায়েনের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তাকে কোনো ক্রমেই সামরিক আইন বলা যাবে না। কারণ জাতীয় প্রয়োজনে বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে নিয়োজিত করার সুযোগ আছে সিআরপিসিতে, তার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তা করা হয়েছিল বলে মানুষ স্বস্তিতে ভোট দিতে পেরেছে এবং দেশবাসী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পেয়েছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা খর্ব করার কোনো প্রস্তাব করেনি। বরং চেতনাগতভাবে বিএনপির প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাজকে সহায়তা করবে এবং রাষ্ট্রপতির ভাবমূর্তিকে বিতর্কে ঊর্ধ্বে রাখবে। বিএনপি রাষ্ট্রপতিকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে।
নির্বাচন কমিশন গঠনে বিচার বিভাগকে উপেক্ষা করার বিষয়টি সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের ওপর বিএনপির অবিচল শ্রদ্ধা রয়েছে। তবে হাইকোর্টের এক রায়ে (রিট মামলা নম্বর ৩৮১৮/২০০৫) বলা আছে, আপিল বিভাগ বা হাইকোর্টের কোনো বিচারপতি (কর্মরত বা অবসরগ্রহণের পর) নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না। কেননা নির্বাচন কমিশন আধা–বিচারিক প্রতিষ্ঠান নয়।
নির্বাচনকালীন মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তাদের ‘গণহারে’ প্রত্যাহারের প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা জানেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ বা মহাজোট সরকার কীভাবে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মাঠপর্যায় পর্যন্ত দলীয়করণ করেছে। নির্বাচনের সময় সরকারি দলের সাজানো মাঠ কর্মকর্তারা নির্বাচন পরিচালনা এবং আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকলে ফলাফল কী হয়, তা আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন।’
ফখরুল বলেন, অহেতুক কালক্ষেপণ না করে এবং একগুঁয়েমি ত্যাগ করে জাতির মঙ্গলের জন্য একটি গণতান্ত্রিক কাঠামো গঠনে প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ গঠন অনিবার্য। এ কারণেই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও সাহসী নির্বাচন কমিশনের কোনো বিকল্প নেই।
এত কম সময়ে বিএনপির প্রস্তাব অনুযায়ী কমিশন গঠন সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারের যদি সদিচ্ছা থাকে তাহলে সাত দিনেই সম্ভব, আর সদিচ্ছা না থাকলে সাত বছরেও সম্ভব নয়।
মওদুদ আহমদ বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের এ প্রস্তাবের লক্ষ্য হচ্ছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। সরকার যদি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, তাহলে তাদের উচিত ওয়েলকাম করা। এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার অর্থ হচ্ছে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না।