রংপুর ডেস্কঃ রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামের মোছাম্মত আসিরুন্নেসার বিয়ে হয়েছিল নয় বছর বয়সে, তখন তিনি ক্লাস থ্রি-তে পড়তেন। পরিবারে অনেক অভাব থাকার কারণে বোঝার বয়সের আগেই আসিরুন্নেসার বিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা।
১৪ বছর বয়সে প্রথমে ছেলে সন্তান এবং ১৬ বছর বয়সে মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। অল্প বয়সে মা হওয়ার পর বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে পড়েছিলেন আসিরুন্নেসা।
সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি বলছিলেন “সংসারে খুবই অভাব ছিল। ছেলেটা আমার যখন মারা গেল মেয়েটার তখন দুই বছর বয়স। স্বামী অসুস্থ ছিল। বাল্যবিবাহ আমার হইলেও আমার মেয়েরেও ছোট অবস্থাতেই বিয়ে দিছিলাম।”
নিজে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছিলেন, কেন মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়েছিলেন আসিরুন্নেসা?
“স্বামীর অবস্থা এমন ছিল বাঁচা না বাঁচা সমান কথা ছিল। যে ছেলেটার সাথে মেয়ে কোহিনুরের বিয়ে দিছিলাম তার মা ছিল না, আমার বাসাতেই থাকতো। উপকারের জন্যই মেয়ের বিয়ে দিচ্ছিলাম।কিন্তু বিয়ে দিয়ে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। মেয়েটার সংসারও টালমাটাল অবস্থা ছিল।”
ওই সময়ে নিজেকে সামাল দিয়ে একটা কিছু করার জন্য গ্রামীন ব্যাংক থেকে দেড় হাজার ঋণ নিয়ে একটা সেলাই মেশিন কেনেন আসিরুন্নেসা।
ওই সেলাই মেশিনই আসিরুন্নেসার দিন ঘুরিয়ে দেয়। একটু একটু করে কাজ করে এগুতে থাকেন, আস্তে আস্তে দোকানের অর্ডারও পেতে থাকেন তিনি।
নানা প্রতিকূলতা সামাল দিয়ে তিনি এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। ১৯৯৮ সালে নিজের একটা প্রতিষ্ঠানও দাড় করান তিনি। চল্লিশোর্ধ আসিরুন্নেসা এখন নিজ গ্রামসহ বিভিন্ন বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন ।
“আমারতো শিক্ষা নাই, একটা মূর্খ মেয়ে। কিন্তু তারপরও বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে যখন দেখি বাল্যবিবাহের ঘটনা তখন কথা বলি। বলি আমার কথা, আমার মেয়ের কথা-দুজনেই নির্যাতনের মধ্যে পড়ছিলাম। কী সমস্যা হইছিল সব বলি। বিয়ে হইতে থাকলে বাধা দেই। বিয়ে না দেয়ার জন্য বুঝাই” বলছিলেন আসিরুন্নেসা।
নিজের প্রতিষ্ঠানের কাজের পাশাপাশি এখন বাল্যবিবাহ রোধেও কাজ করে যাচ্ছেন আসিরুন্নেসা।