প্রকৃতি ও হৃদয়
———–মৌসুমি টিকলি
শরতের আকাশটা যেন গাঢ় নীল রঙের আচ্ছাদন,
পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘেরা
ভেসে বেড়ায় অবিরাম
যেন নাগালের বাইরের অলীক আনন্দ,
ছুঁতে চাইলেও ছোঁয়া যায় না;
কাশফুলে ছাওয়া মন ধবল বকের
পাখার মতোই চঞ্চল।
বাতাসের হিমেল পরশে হেমন্তের বিদায়বেলার
বিরান মাঠের শুন্যতা নবান্নের অর্ঘ্যে পরিপূর্ণ।
শীতবেলার রুক্ষতা কেটে যায়
প্রিয়জনের ভালোবাসার কবোষ্ণ ছোঁয়ায়,
বিকেলের লাল মখমলি সূর্যটা
যেতে যেতে রাঙিয়ে তোলে বিশ্ব চরাচরকে,
সেই সাথে নিয়ে আসে তারাভরা অনন্ত যৌবনা রাত।
মোহময় বসন্ত যেন ভালোবাসার চিরকালীন পাঠশালা,
প্রগাঢ় প্রেমের সবুজের মাঝে
অমার্জনীয় লাল গোলাপের বাগান।
চৈতী বাতাসে উদাসী প্রেমিকের ভাটিয়ালী সুর,
রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষাদের জোছনা।
বৈশাখী দাবদাহে নববর্ষের আহবান
যেন উষ্ণতার মাঝে সুশীতল গিরি প্রস্রবণ ধারা।
জ্যৈষঠের বিদীর্ণ জমিনে শ্রাবণের জলধারা সিঞ্চন,
যেন মন ময়ূরীর কলাপের নৃত্য।
ভরা বাদরের অবিরাম বর্ষণ
দুরুদুরু বক্ষের গুরুগুরু মেঘমল্লার।
খেয়ালী এই প্রকৃতি যেন
বেখেয়ালি মনের খোলা আচল
উড়িয়ে দিয়ে চঞ্চলা দিগঞ্চলা রূপে
হৃদয়ের স্রোতস্বিনীকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়
নবধারা জলে।।
১৯/১১/২০১৬
শীতকাতরতা
———–মৌসুমি টিকলি
পাতা ঝরার দিন এলো বলে,
ঐ দেখ গাছেদের খোলস পাল্টানোর পালাশুরু;
বাতাসের হিমেল পরশ হঠাৎ নেমে আসা সন্ধে,
চুপিচুপি বলে যায় শীতের আগমনী ধবনি বদলে যায়
রোজকার দিনলিপি স্যুটকেসের ভাঁজে
তুলে রাখা নরম সোয়েটারখানা,
স্পর্শেই স্মৃতিকাতরতা কোন পুরাতন সময়ের ভাবনা,
দোলা দিয়ে যায় মনে বাবার পুরোনো মাফলার,
মায়ের সেই প্রিয় কাশ্মীরি শাল কতদিনের আনন্দ,
বেদনার কাব্য মিলে মিশে একাকার
ব্যস্ত শহরের উষ্ণতা বাধাগ্রস্ত করে
ঝতুবৈচিত্রের চিরায়ত প্রক্রিয়াকে মনে পড়ে যায়
সুদুর অতীতের শীত সন্ধ্যা শৈশব স্মৃতি
রান্নাঘরের মেঝের পিঁড়িতে বসে
চুলা থেকে নামানো সদ্য ধোঁয়া
ওঠা ভাপা পিঠার রস আস্বাদন,
ইস্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষে সন্ধ্যা বেলা
পাড়ার মাঠে ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট;
মধ্যাহ্ন ভোজনের পরে লেপের ওমেরভেতরে
শুয়ে সদ্যকেনা গল্পের বই এর মন মাতানো ঘ্রান
বারান্দায় বসে শীতের সকালে রোদ পোহানো;
ছোট ছোট গল্প,ছোট ছোট সুখস্মৃতি
ফেলে আসা অস্থির শৈশব
কোথায় গেল সেই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো
স্মৃতির মণিকোঠায় আজও রয়েছে
তা জাজ্বল্যমান!
২/১১/২০১৬