তৈমুর আলম খন্দকারের অনাগ্রহ সত্ত্বেও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকেই প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন।
ওসমান পরিবারের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর তালিকায়ও তাঁর নাম ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ তা মানেনি। এই অবস্থায় ওসমান পরিবার নতুন তৎপরতা শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
জাতীয় পার্টির সূত্রে জানা যায়, ওসমান পরিবারের জাতীয় পার্টির অংশের নেতারা জাতীয় পার্টি থেকে মেয়র পদে একজনকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। তিনি হলেন নারায়ণগঞ্জ সদর আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ এবং ওসমান পরিবারের বড় ভাই প্রয়াত নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান।
সরকারদলীয় সাংসদ শামীম ওসমানই মূলত স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করেন। তবে শামীম ওসমানের বড় ভাই নাসিম ওসমান জাতীয় পার্টির সাংসদ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে ছোট ভাই সেলিম ওসমান সাংসদ নির্বাচিত হন।
আইভীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দাঁড় করানোর ব্যাপারে গতকাল শনিবার বিকেলে চাষাঢ়ায় রাইফেল ক্লাবে জাপার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন সেলিম ওসমান। বৈঠক শুরুর আগে কয়েকটি খণ্ড মিছিল থেকে পারভীন ওসমানের নামে স্লোগান দেওয়া হয়। তাঁরা পারভীনকে মেয়র পদে প্রার্থী করার দাবি তোলেন।
বৈঠকে উপস্থিত জাপার একজন নেতা বলেন, এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে এত দিন তাঁদের কোনো তৎপরতা বা নির্দেশনা ছিল না। কেন্দ্র থেকেও কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে এখন সেলিম ওসমান প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু জাহের। তিনি বলেন, সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তবে দলীয় প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাঁদের দল থেকে প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্র এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। স্থানীয়ভাবে জাতীয় পার্টির নেতারা হয়তো আলোচনা শুরু করেছেন। তবে এই আলোচনা কেন্দ্রের নির্দেশে নয়, স্থানীয়ভাবে হয়েছে। এই নির্বাচনে তাঁরা অংশ নেবেন কি না তা দু-এক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত করবেন।
আগ্রহ না থাকলেও বিএনপির প্রার্থী তৈমুর: বিএনপিমেয়র পদে প্রার্থী করেছে তৈমুর আলম খন্দকারকে। তৈমুর বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। গত শুক্রবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক বৈঠকে তাঁকে প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়।
গতকাল দুপুরে টেলিফোনে তৈমুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে মেয়র পদে প্রার্থী হতে বলা হয়েছে। তিনি দলের প্রতি অনুগত। তবে বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় এবং নির্বাচনী ব্যবস্থায় তাঁর প্রার্থী হওয়ার কোনো আগ্রহ নেই। কেন আগ্রহ নেই, সেটাই চেয়ারপারসনকে তিনি বলেছেন। তবে দল যদি তাঁকে প্রার্থী করার ব্যাপারে অনড় থাকে, তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন।
এর আগের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন তৈমুর আলম। ভোটের আগের দিন বিএনপি ওই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। যদিও বিএনপির এই সিদ্ধান্ত নিজের নয় বলে তখন জানিয়েছিলেন তিনি।
দলের সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চান আইভী: দলের সব নেতা-কর্মীকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চান সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। বাংলাদেশের এমন কোনো জেলা নেই, যেখানে কম-বেশি নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা নেই। নারায়ণগঞ্জও কিন্তু এর বাইরে নয়।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের দেওভোগে সেলিনা হায়াৎ আইভীর বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘১৫ নভেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা থেকে হয়তো কোনো অদৃশ্য শক্তির ইশারায় আমার নাম প্রস্তাব করা হয়নি। কিন্তু সার্বিক বিবেচনায় মনোনয়ন বোর্ড আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। তৃণমূলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী আমার সঙ্গে আছেন।’
আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কাজ করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, ‘আমি মনে করি, আনোয়ার কাকা একজন খাঁটি আওয়ামী লীগ। উনি আমার সঙ্গে কাজ করবেন। অন্যরা যাঁরা কাজ করতে চান, তাঁদেরও স্বাগত জানাই।’
সিটি নির্বাচনে শামীম ওসমানের ভূমিকা কী হবে, এমন প্রশ্নে আইভী বলেন, ‘আমি কী করে বলব ওনার কী ভূমিকা হবে। এ প্রশ্ন ওনাকে করেন। তবে আমি মনে করি, উনি যদি দলের অনুগত কর্মী হন, তবে নিশ্চয়ই দলের নির্দেশ মেনে চলবেন।’ শামীম ওসমানের বাড়িতে যাবেন কি না এমন প্রশ্নে আইভী বলেন, ‘প্রয়োজন মনে হলে যেতে পারি। উনি আমার ভোটার। আমি যদি দলমত-নির্বিশেষে বাড়ি বাড়ি ভোট চাইতে যেতে পারি, তাহলে তাঁর বাড়িতে নয় কেন?’
মেয়র আইভী কাল আনোয়ার হোসেনের বাসায় যান। তবে আনোয়ার হোসেনসহ তাঁর পরিবারের কেউই এ সময় বাসায় ছিলেন না।