‘প্রেসক্লাব ভাঙবে, কেউ ঠেকাতে পারবে না’

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ

10641261_692244267533696_2281624294235889322_n

গ্রাম বাংলা ডেস্ক: জাতীয় প্রেসক্লাব এখন আর সাংবাদিকদের জায়গা নয়। এটি ‘ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে’ রূপ নিয়েছে। সাংবাদিকদের রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির কারণে এই ক্লাব ভেঙে যাবে, কেউ ঠেকাতে পারবে না।
জাতীয় প্রেসক্লাবের হীরকজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের সাংবাদিকতা ও জাতীয় প্রেসক্লাব’ শীর্ষক এক সেমিনারে কয়েকজন বক্তা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। আজ শনিবার ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এই অনুষ্ঠান হয়।
সেমিনারে দেশের পেশাদার সাংবাদিকদের প্রেসক্লাবের সদস্যপদ না দেওয়া এবং সাংবাদিকদের রাজনীতিতে সরাসরি জড়িয়ে পড়া নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে এক বক্তা বলেন, ‘এই ক্লাব ভাঙবে, ভাঙবে। কেউ ঠেকাতে পারবে না।’ ক্লাবকে ‘দলীয় মঞ্চ’ বানানো হয়েছে বলে বক্তাদের কেউ কেউ অভিযোগ তোলেন। দুই দলের লেজুড়বৃত্তি করতে গিয়ে এই পেশার ক্ষতি হচ্ছে বলে উপলব্ধি সাংবাদিকদের ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে আটজনকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মানিত করা হয়। এ পর্যন্ত ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন ২৭ জন।

সাংবাদিকদের দুই ফোরামের নেতারা আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, ইউনিয়ন বিভক্ত হওয়ার জন্য সাংবাদিকরা দুর্বল ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন । এখন ক্লাব ভাঙলে সাংবাদিকদের অস্তিত্ব সংকট তৈরি হবে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন রাজনৈতিক কারণে ও ব্যক্তিস্বার্থে পণ্ড হয়েছে বলে কয়েকজন বক্তা উল্লেখ করেন ।

প্রবীণ সাংবাদিক ও ক্লাবের সাবেক সভাপতি এ এস এম হাবিবুল্লাহ বলেন, রাজনৈতিক কারণে সদস্যপদ দেওয়ার পরিণতি শুভ হবে না ।

ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান বলেন, প্রেসক্লাব এখন সাংবাদিকদের জায়গা নয়। এখানে সদস্যপদ দেওয়ার ক্ষেত্রে ভোটের চিন্তা আগে আসে। এ অবস্থায় দাবি ও আওয়াজ উঠেছে ক্লাব ভেঙে দেওয়ার। ১৯৯২ সালেও এমন অবস্থায় সাংবাদিকদের ইউনিয়ন ভেঙে গিয়েছিল। তাতে কেউই লাভবান হয়নি । সেমিনারের শেষের দিকে মাইক্রোফোন নিয়ে তিনি আবারও বলেন, ‘এই ক্লাব ভাঙবে, ভাঙবে। কেউ ঠেকাতে পারবে না।’

সরাসরি জবাব না দিলেও বক্তব্য দেওয়ার একপর্যায়ে সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, ক্লাবের ঐক্য কেউ কোনো দিন ভাঙতে পারবে না। সেমিনারটি বার্ষিক সাধারণ সভার মতো হয়ে যাচ্ছে বলে মত দিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকের সেমিনার ক্লাবের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও পথনির্দেশনা নিয়ে । ব্যক্তিগত রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে ক্লাবকে দেখা ঠিক হবে না।’

সাবেক সভাপতি রিয়াজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রেসক্লাব একটি ভেন্যু, বহুমতের প্রতিফলন ঘটানোর জায়গা । কিন্তু কিছু পাওয়ার জন্য ক্লাব ব্যবহার হচ্ছে। কিছু নেতা দলের পেছনে ছুটছেন । তার পরও বলব, অনেক পেশার তুলনায় সাংবাদিকরা এখনো ভালো আছে।’

প্রবীণ সাংবাদিক কামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাংবাদিকতার উত্কর্ষ বাড়ানোর জন্য ক্লাব আগের মতো ভূমিকা রাখতে পারছে না ।

সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী বলেন, ক্লাবের অবদান যদি কিছু থাকে তা ছিল পাকিস্তান আমলে। এখন এটা মূলত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান । আগে প্রবীণ সাংবাদিকদের আলোচনার প্রভাব পেশায় পড়ত, এখন প্রবীণেরাও ক্লাবে আসেন না ।

সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার সাহা বলেন, সাংবাদিকতায় জীবন পার হয়ে গেলেও অনেকে সদস্যপদ পাচ্ছেন না। সাংবাদিকতা বুদ্ধিবৃত্তিক পেশা, ক্লাবে এলে তা বিকশিত হবে এবং তরুণদের সেই সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া বলেন, ‘ইউনিয়ন বিভক্ত হওয়ার জন্য আমরা দুর্বল। তারপর সাংবাদিকদের জন্য যেটুকু, যা হচ্ছে, তাতে ইউনিয়নের ভূমিকা থাকছে ।’

সেমিনারে সাবেক প্রধান তথ্য কর্মকর্তা আবদুল রহিম, বাসসের সাবেক ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভুইয়া, সাংবাদিক নেতা আবদুস শহীদ প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ক্লাবের সহসভাপতি কাজী রওনক হোসেন । স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ। সঞ্চালক ছিলেন সেমিনার উপকমিটির আহ্বায়ক ও নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক পারভিন সুলতানা মুসা ঝুমা।

অনুষ্ঠানে ক্লাবের আজীবন সদস্য হাসানুজ্জামান খান, এ এস এম হাবিবুল্লআহ, সৈয়দ কামালউদ্দিন, রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, শফিকুর রহমান, শওকত মাহমুদ, স্বপন কুমার সাহা ও সৈয়দ আবদাল আহমেদকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষভাগে যোগ দিয়ে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সাবেক সভাপতি হিসেবে ক্রেস্ট গ্রহণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *