উপবাস ভেঙে আমেরিকানরা সংগঠিত হতে প্রস্তুত

Slider সারাবিশ্ব

40770_lila

 

ঢাকা; শুক্রবারের একটি উজ্জ্বল ও শীতল বিকালে শ’খানেক নারী-পুরুষ-শিশুর একটি দল ব্রুকলিনের কেনসিংটনে একটি মসজিদের বিপরীতে জড়ো হন। সেখানে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় প্রতিনিধি, গোষ্ঠীর বয়জ্যেষ্ঠ ও আন্দোলনকর্মীরা। এসব ব্যক্তি মূলত বাংলাদেশি অভিবাসী সম্প্রদায়ের। এখানে যারা বক্তব্য রেখেছেন তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে নানা ধরনের আশঙ্কার কথা যেগুলো বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে। ব্রুকলিনের ৩৯তম ডিস্ট্রিক্টের প্রতিনিধিত্বকারী ডেমোক্রেটিক নিউ ইয়র্ক সিটির কাউন্সিল মেম্বার ব্র্যাড ল্যান্ডার বলেন, ‘এটা এমন একটি শহর যা অভিবাসীদের স্বাগত জানায়। আর নিউ ইয়র্ক সিটি সবসময়ই অভিবাসীদের স্বাগত জানাবে, এটা নিশ্চিত করতে আমাদের লড়াইয়ে এই শহর আরো শক্তিশালী ও আরো আগ্রাসী হয়ে উঠবে।’
নিউ ইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়েটিং ল এনফোর্সমেন্ট অ্যাকাউন্টিবিলিটি অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটি (ক্লিয়ার) প্রকল্পের অ্যাটর্নি তারেক ইসমাইল আরো সুনির্দিষ্ট করেন তার বক্তব্য। তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল মুসলিম বলেই এফবিআই প্রশ্ন করে। যদি এফবিআই অথবা এনওয়াইপিডি আপনার দরজায় হাজির হয় এবং দরজায় কড়া নেড়ে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই, আপনারা কোনো অ্যটর্নি ব্যতিরেকে তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না।’
ডনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য প্রস্তুত। আর নিউ ইয়র্ক ও বাকি আমেরিকায় নিশ্চিতভাবেই মুসলিম ও অন্যান্য অভিবাসীরাসহ বিভিন্ন বর্ণের মানুষ নাড়া খেয়েছেন মূল থেকে। ব্রেইটবার্ট নিউজের সাবেক প্রধান স্টিফেন ব্যানন শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী, ইহুদিবিদ্বেষী, বিদেশিদের নিয়ে অহেতুক ভীতিতে থাকা ব্যক্তি ও নারীবিদ্বেষীদের নিয়ে গড়ে তোলা ‘অল্ট-রাইটে’র অন্যতম মুখপাত্র। তাকে ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে তার প্রধান কৌশলী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। প্রতিটি সংখ্যালঘু মানুষের শিরদাঁড়ায় নিশ্চিতভাবেই কাঁপুনি ধরিয়ে দেয়ার মতো এই নিয়োগের খবরটি।
এর আগে এক রাতে নিউ জার্সির একটি ভারতীয় রেস্টুরেন্টে রাতের খাবারের সময় আলোচনার মোড় ঘুরে যায় ৮ই নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পর ঘৃণা প্রকাশমূলক ঘটনা বেড়ে যাওয়ার দিকে। দ্য সাউদার্ন পোভার্টি ল সেন্টার (এসপিএলসি) বলেছে, নির্বাচনের পরের এক সপ্তাহে তারা ৩১৫টি বর্ণবাদী ঘটনার রিপোর্ট পেয়েছে। এই সংখ্যা নাইন-ইলেভেনের অব্যবহিত পরে সংঘটিত ঘটনার চেয়েও বেশি। গোটা যুক্তরাষ্ট্রের ঘৃণা ছড়ানো দলের সংখ্যার দিক থেকে নিউ জার্সি চতুর্থ। এখানে কু ক্লুক্স ক্ল্যান (কেকেকে) ছাড়াও বর্ণবাদী স্কিনহেড গ্রুপের উপস্থিতি রয়েছে। গোঁড়ামি ও অসহিষ্ণুতায় ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা ও নিউ ইয়র্কের পরেই নিউ জার্সির স্থান। আমরা খাবার টেবিলে নিউ জার্সি ইউনিভার্সিটির একটি ঘটনা নিয়ে কথা বলছিলাম। তবে টেবিলে উপস্থিত অনেকেই নিশ্চিত হতে পারছিলেন না যে ওই ঘটনা ঘৃণারই বহিঃপ্রকাশ না কি এটি কেবলই একটি ক্যাম্পাস সহিংসতার ঘটনা। আমার ভাই আমার মতোই ভারত থেকে অভিবাসী হওয়া একজন নিরপেক্ষ মার্কিন নাগরিক। সে তার যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া কিশোর ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘কেউ যদি ঘৃণামূলক বা জঘন্য কোনো কথা বলে তুমি সেখান থেকে সরে যেও।’
ফেসবুকে আমার দক্ষিণ এশিয়ান আমেরিকান বন্ধুরা এমন সব আশঙ্কার কথা প্রকাশ করছেন যা আমি কখনোই ভাবিনি যে আমেরিকায় বসে দেখতে হবে। নাইন-ইলেভেনের সেই অন্ধকার দিনগুলোতে আমি মাসের পর মাস কাটিয়েছি টুইন টাওয়ারের ধ্বংসস্তূপে। আফগানিস্তানে সামরিক অভিযানের শুরু থেকেই আমি নিউ ইয়র্কে এটা নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখিও আমি হয়েছি পেশাগত কারণেই। ওই সময়ও এখনকার মতো এত খারাপ ছিল না। নাইন-ইলেভেন হামলার অল্প কিছুদিন পরই শিখ একজন মার্কিন ট্যাক্সিচালককে বলা হয়, ‘বাড়ি ফিরে যাও, ওসামা বিন লাদেন।’ ওই ট্যাক্সিচালকের একজন চাচাও বলেন, ভারতের চেয়ে তার পরিবার আমেরিকাতেই বেশি নিরাপদ বোধ করত। ১৯৮৪ সালে একজন শিখ দেহরক্ষীর হাতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর নিহত হওয়ার পর শিখদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালানোর ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেছি। শিখদের ওপর চালানো হামলার জন্য দায়ীদের কোনো শাস্তির মুখে পড়তে হয়নি। মধ্যবয়সী ওই শিখ চাচা আবেগ নিয়ে বলেন, ‘এটা আমেরিকা। রাজনীতিবিদরা আমাদের রক্ষা করবেন। এটা ভারত নয়।’ এর কয়েক মিনিট আগেই আমরা স্টারবাকসের প্রবেশ করেছিলাম ওই সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য। আমরা যখন প্রবেশ করছিলাম কফি খেতে থাকা নিউ ইয়র্কের অধিবাসীরা সবাই উঠে দাঁড়িয়ে আমার বসার জায়গা করে দিয়েছিল। আামাদের তাদের আসনেই বসতে জোর করে। আমি যাতে সাক্ষাৎকার নিতে পারি সে জন্য তারা নিচু স্বরে কথা বলে। ওই দিনগুলোতে নিউ ইয়র্কের অধিবাসীরা তেমনই আচরণ করত।
ওই একই ধরনের সক্রিয়তা ও সমর্থন আজকের আমেরিকার সমাজের বড় একটি অংশকেই জেঁকে ধরেছে। নির্বাচনের রাতে ট্রাম্প জয়লাভ করলে আমার ফ্রেঞ্চ সহকর্মীরা হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন করা ইস্ট ভিলেজ বারে উপস্থিতদের প্রতিক্রিয়ায় বিস্মিত হয়েছেন। রাত যতই বেড়েছে এবং ট্রাম্পের জয় স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে, উপস্থিত নারীরা কান্নায় ভেঙে পড়েছে, পুরুষরা আরো বেশি পান করেছে এবং মদ্যপ হয়ে পড়েছে। আমি এটাই দেখেছি। অন্যদিকে, আমার অন্যান্য ফ্রেঞ্চ সহকর্মীরা এটা দেখে আহত হয়েছে যে ট্রাম্পবিরোধী এমন আচরণের অবসানের ৫-১০ মিনিট পরই বারের মালিকরা কৌতুক করেছেন, হেসেছেন। আমার সহকর্মীরা বিড়বিড় করে বলছিলেন, ফ্রান্সে এমনটি ঘটলে এক মাসেও কারো মুখে হাসি ফুটত না। ঠিক তার পরের সন্ধ্যাতেই ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নামতে শুরু করে। আমার অনেক বন্ধুই তখন এ নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে এ ধরনের বিক্ষোভকে সমর্থন করা যায় কি না এবং এই বিক্ষোভকে সমর্থন না করলে সংগঠিত হওয়ার সর্বোত্তম উপায়টি কী হতে পারে। আমার এক বন্ধুর ফেসবুক প্রোফাইলেই তার ছবির বদলে স্থান করে নেয় অন্য একটি ছবি। তাতে লেখাÑ ‘শোক কোরো না, সংগঠিত হও।’
শুক্রবার বিকালে ব্রুকলিনের ওই অনুষ্ঠানে বক্তারা অধিকার জানার জন্য কর্মশালা ও অনিবন্ধিত অভিবাসীদের জন্য উদ্যোগ নেয়ার ঘোষণা দিচ্ছিলেন। আর আন্দোলনকারীরা আগামী বছরের ২০শে জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি ইভেন্টের পরিকল্পনা করছিলেন। ওই দিনই হোয়াইট হাউসে অভিষেক ঘটবে ট্রাম্পের। এটাই আমেরিকানদের যেকোনো কিছু করতে পারার স্পিরিট। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও পশ্চিম ইউরোপের অনেক দেশে অনেকের সঙ্গে আমি দেখা করেছি, তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তারা তীব্রভাবে আমেরিকাবিরোধী। তাদেরকে আমি আমেরিকান সমাজের এই অংশটির কথাই বলতে চেষ্টা করেছি। পশ্চিমা বামপন্থি ঘরানায় এবং অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে আমেরিকাকে আঘাত করা এবং ভিন্ন গল্প তুলে না ধরাটা অনেক সহজ। আমি বিশ্বের যে অংশটিতে কাজ করি সেই অংশে যখন আপনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি বা এর অতীত ইতিহাসকে আঘাত করেন আপনি শেষ বিচারে নিজেকে স্মার্ট ভাবতে পারেন এবং আপনাকে সবাই পছন্দও করবে। আর আপনি ভিন্ন কোনো তথ্য দিলে সবাই এমনভাবে আপনার দিকে তাকাবে যেন এইমাত্র ডিক চেনি ঘরে প্রবেশ করেছে।
আমি ওই পার্থক্য সম্পর্কে জানি। কারণ আমি বেড়ে উঠেছি এমন একটি দেশে যেখানে নব্বইয়ের দশকে বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আগেই ডানপন্থিরা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আর সে কারণেই আমি তুলনাও করতে পারি। ভারতে পর্যায়ক্রমে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর ওপর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, গণহত্যা, দাঙ্গা, লোকজনকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এটি বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে সাহসী ও সক্রিয় গণমাধ্যম রয়েছে, রয়েছে সাহসী ও সক্রিয় সুশীল সমাজের প্রতিষ্ঠান। তা সত্ত্বেও বেশিরভাগ ভারতীয়ই জানে যে ক্ষমতাধর ঘৃণাপ্রচারকারীরা সবসময়ই পার পেয়ে যায়। তাদের কেউ কেউ আবার প্রধানমন্ত্রীও বনে যান।
গত কয়েক বছরে একটি বিষয় লক্ষ করা যায়। এ সময়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায় হয় ডানপন্থি জাতীয়তাবাদের সুধা পান করেছে নয়তো সরলভাবে ভিন্নভাবে ভেবেছেÑ এটা বেশ মজার। এর লক্ষণগুলো সবসময় একইরকমÑ কোনো একটি পারিবারিক মিলনমেলায় কারো হিন্দু একজন পুত্রবধু কোনো একজন বলিউড অভিনেতাকে নিয়ে বিষোদগার করেন। তিনি এক সময় ওই অভিনেতাকে পছন্দই করতেন। কিন্তু এখন তাকে সহ্য করতে পারছেন না। কারণ অন্য অনেক ভারতীয় মুসলিমদের মতো ওই অভিনেতার বিরুদ্ধেও রয়েছে ‘পাকিস্তানপন্থি’ হওয়ার অভিযোগ। আপনার বন্ধুদের মধ্যে যাদের আপনি জনপ্রিয় ঘৃণার পথে দেখার প্রত্যাশা করেন না, তারা ডানপন্থি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলকে নিয়ে লড়াইয়ে জড়িয়ে যায়। হোয়াটসঅ্যাপের কিছু দল ভারতীয় ঘরানার অল্ট-রাইট লিংক ও পোস্ট দিয়ে ভাসিয়ে দেয়। মুক্ত কণ্ঠস্বর রোধে সরকারের খড়গহস্ত হওয়ার আলাপে নেমে আসে সুনশান নিরবতা। প্রচ-ভাবে মুসলিমবিরোধী কোনো ব্যক্তি, দল বা সরকার তাদের নতুন ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে পরিণত হয়ে যায়।
এরপর খানিকটা আশঙ্কার কারণ হলো এই যে, আমেরিকায় ইসরায়েলকে সমর্থন করা ডানপন্থিরাই ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় সমর্থকদের অংশ। তারা নিজেদের এমনভাবে ধোঁকা দিয়ে রেখেছে যে তাদের সম্প্রদায় কোনো না কোনোভাবে ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে অবস্থান করছে। নিশ্চিতভাবে অনেক ভারতীয় সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষক ও সুশীল সমাজের গোষ্ঠী জনপ্রিয় ডানপন্থি ঘৃণামূলক ঢেউয়ের বিরুদ্ধে সাহসী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। হিন্দু ডানপন্থি ধারা মূলধারায় প্রবেশ করেছে। এবং এক সময়ের ধারণাতীত বিষয়টিই এখনকার বাস্তবতা। যখন একদল জননেতা জাতীয় জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ একদল মানুষকে লক্ষ্যে পরিণত করে এবং তাদের কোনোভাবে বুঝাতে সক্ষম হয় যে তারা হুমকির মুখে রয়েছে, তখন এটাই ঘটে। সংখ্যালঘুরা তখন উদ্বায়ী হয়ে পড়ে।
আজকের আমেরিকার ঘটনা এমন নয়। ট্রাম্পের তুলনায় অনেক বেশি মানুষ হিলারিকে ভোট দিয়েছে। এমনকি জনপ্রিয় ভোটের সংখ্যাও ট্রাম্পের বিরোধী অবস্থানকে তুলে ধরতে সক্ষম নয়। কারণ, ‘নীল রঙের রাজ্যে’র (রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ) অনেক ভোটারও জিল স্টেইনের মতো স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট দিয়েছে। তারা জানতেন, আমেরিকার বিদ্যমান হাস্যকর ইলেক্টোরাল কলেজ ব্যবস্থায় তাদের ভোট গণনার আওতাতেই পড়বে না। তারপরও তারা ভোট দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। মিলেনিয়ালরা (২০০০ সালের আশেপাশে যারা তরুণ হয়েছেন) সারাবিশ্বেই অবিশ্বাস্যরকমভাবে নষ্ট ও সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠী। আমেরিকার বাস্তবতায় তা আরো বেশি সত্য। কিন্তু হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের প্রবেশ এসব তরুণদের অনেককেই সারাজীবনের শিক্ষা দিয়ে দিবে।
নতুন প্রেসিডেন্ট-ইলেক্টকে নিয়ে হতভম্ব আমেরিকানরা এরই মধ্যে কী করতে হবে সেই আলোচনায় জড়িয়ে পড়েছে। ব্রেক্সিট গণভোটের পর বৃটেনে একজন আমেরিকানের শুরু করা প্রচারণা বৃটিশদের আহ্বান জানাচ্ছে অভিবাসীদের প্রতি সংহতি প্রকাশে ‘সেফটি পিন’ ধারণের জন্য। আমার ফেসবুকে যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে এটা তীব্র বিতর্ক তুলে দিয়েছে। একজন শ্বেতাঙ্গ অধ্যাপক বন্ধু আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, আমরা যদি একটি সেফটি পিন ধারণ করি, এটা  ১. সংহতি প্রকাশে স্বাগত জানানো, না কি ২. সুবিধা দেয়ার বহিঃপ্রকাশ, না কি ৩. অন্য কোনো কিছুকে (সুনির্দিষ্ট করুন) নির্দেশ করবে। এর প্রত্যুত্তর যা এসেছে তার মধ্যে হাফিংটন পোস্টের ‘প্রিয় শ্বেতাঙ্গ জনগণ, আপনাদের সেফটি পনগুলো বিব্রতকর’ শীর্ষক একটি কলামও রয়েছে। ওই লেখায় শ্বেতাঙ্গ কলামনিস্ট তার বক্তব্যে কৃত্রিমতার আশ্রয় নেননি। ক্রিস্টোফার কিটলি ওই কলামে লিখেছেন, ‘শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিরা, আমাকে কিছু বিষয় ব্যাখ্যা করতে দিন। আমরা ধ্বসে পড়েছি। আমরা বাজে। আমরা একজন বর্ণবাদী নেতাকে নির্বাচিত করেছি যিনি এমন প্রায় সব ব্যক্তিরই গুরুতর ক্ষতি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যারা সরাসরি শ্বেতাঙ্গ পুরুষ নন। এবং তার বাগাড়ম্বর এরই মধ্যে গোটা জাতির মধ্যে ঘৃণামূলক অপরাধকে নাড়িয়ে দিয়েছে। একটি সেফটি পিন পরিধান করে আমরা নিজেদের ভালো বোধ করার মতো অবস্থায় নেই এবং তার মিত্র হিসেবে নিজেরাই নিজেদের অভিহিত করার অবস্থাতেও নেই।’ তবে বেশিরভাগ মুসলিম ও অন্যান্য অভিবাসীরাই, বিশেষত অভিবাবকরা, ওই পোস্টে বলেছেন, তারা ওই উদ্যোগের প্রশংসা করছেন। একজন লিখেছেন, ‘একজন ‘শ্যাম বর্ণের নারী’ হিসেবে আমি বলতে চাই, আমি ব্যক্তিগতভাবে ওইসব শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে অনেক বেশি আক্রান্ত বোধ করছি যারা ‘সুবিধা দানের’ মাধ্যমে বিভিন্ন বর্ণের মানুষদের সুরক্ষার কথা বলেন। আমি প্রকৃত অর্থে গালিগালাজ শোনার ও সম্ভাব্য শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছি।’
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এই আলোচনা চলতে থাকবে। এই আলোচনা আমেরিকাজুড়ে চলতে থাকবে খাবারের টেবিলে, বিভিন্ন বৈঠকে, সামাজিক মিলনমেলায় এবং বিভিন্ন স্কুলে। আমেরিকানরা হয়তো বাকি বিশ্ব সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। কিন্তু তারা নিজেদের বিষয়ে অনেক বেশি সংশ্লিষ্ট এবং একবারের জন্য হলেও এটা ভালো একটি দিক। বিশ্বের অন্যান্য অংশে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যাদের নিজেদের সমস্যা সমাধানে ব্যস্ত থাকার কথা, তারা নিজেদের সময় ও সম্পদের অপচয় করেন অশুভ সুপারপাওয়ার আমেরিকার বিরুদ্ধে গালভরা বক্তৃতাবাজি করে। আমেরিকানদের ‘অন্য কাউকে দায়ী’ করার সুযোগ নেই। আর সেটাই আমেরিকার সবচেয়ে ভালো দিক।

(লিলা জ্যাকিনটো একজন পুরস্কারপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক রিপোর্টার। নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী লিলা এর আগে নিউ ইয়র্কে এবিসি নিউজে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি ফ্রান্স ২৪-এ কর্মরত। এই গণমাধ্যমে ‘নিউজহাউন্ডিং দ্য ওয়ার্ল্ড’ শিরোনামের ব্লগে তিনি সংবাদের পিছনের ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করেন। এই ব্লগে ‘আমেরিকানস গেট পাস্ট মর্নিং ফাস্ট, অ্যান্ড গেট সেট টু অর্গানাইজ’ শীর্ষক লেখার অনুবাদ করেছেন তরিকুর রহমান সজীব)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *