শ্রীপুরে পুলিশ ও প্রভাবশালীদের ছত্র-ছায়ায় চলছে অবৈধ গ্যাসের সংযোগ

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ

IMG_20140922_100512
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
শ্রীপুর অফিস: শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গ্যাস সংযোগ প্রাপ্ত শিল্পকারখানা ও আবাসিক সংযোগের গ্যাস সঞ্চালন পাইপ থেকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পুলিশ, প্রভাবশালী ও তিতাস গ্যাসের অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারীদের যোগসাজসে চলছে অবৈধ গ্যাসের সংযোগ। বাধাগ্রস্থ হচ্ছে শিল্প কারখানার উৎপাদন। গ্যাসের চাপ কমে যাচ্ছে সিএনজি পাম্পগুলোতে। কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। রাতারাতি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালালচক্র।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকার দলের প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় এমপি’র মৌখিক অনুমতির অপপ্রচার ছড়িয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল, পুলিশ ও তিতাস গ্যাসের এক শ্রেনীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে মোটা টাকার বিনিময়ে চালিয়ে যাচ্ছে এসব অবৈধ গ্যাসের সংযোগ বানিজ্য। প্রায় এক বছর পুর্বে শ্রীপুরে সচেতন মহল ও সাংবাদিক অবৈধ গ্যাস সংযোগের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠে। সংবাদ প্রকাশিত হয় বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়। একুশে টেলিভিশনে প্রচারিত হয় প্রতিবেদন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গ্যাস চোর চক্র ২১ নভেম্বর’১৩ তারিখে হামলা চালিয়ে আহত করে সাংবাদিকদের। ২২ নভেম্বর এ ঘটনায় ২৭ ব্যক্তির নামে শ্রীপুর থানায় ৩২(১১)১৩ নং মামলা রুজু হয়।

গ্যাস চোর চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবীতে শ্রীপুর প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সংবাদ কাটিং সহ স্বচিত্র প্রতিবেদনের ছবি সম্বলিত আবেদনপত্র দাখিল করা হয় জেলা প্রশাসক, গাজীপুর ও তিতাস গ্যাস এর গাজীপুর জোনাল অফিসের প্রধান নির্বাহী ও শ্রীপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে। এরই ধারাবাহিকতায় শ্রীপুর থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন এ বছরের শুরুর দিকে রাজাবাড়ী, মাওনা, ২নং সিএন্ডবি, জৈনা বাজার সহ বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধ সংযোগ প্রদানকারীদের ধরে নিয়মিত মামলা বা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা অথবা সাজা প্রদান করা হতো। রহস্যজনক কারনে হঠাৎ করেই থেমে গেছে প্রশাসনিক তৎপরতা। বেপরোয়া ও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে গ্যাস চোর চক্র। অল্প সময়ে অতি মুনাফার আশায় অবৈধ গ্যাসের সংযোগ ব্যবসার সাথে ইতিমধ্যেই জড়িয়ে পড়েছে এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি, অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা, নামধারী সাংবাদিকসহ সংঘবদ্ধ চক্র। গ্যাস চুরির সাথে জড়িত চক্রটি স্থানীয় এমপি’র মৌখিক অনুমতির ভিত্তিতেই গ্যাসের সংযোগ দিয়ে যাচ্ছে এমন প্রচারের সত্যতা খোঁজে পাওয়া যায়নি।

আওয়ামীলীগ দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ন্যায় নীতির আদর্শপুরুষ স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব এড. মো: রহমত আলী কখনোই এরুপ অবৈধ কাজের সমর্থন করেন না। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পার্শ্ব দিয়ে বয়ে গেছে গ্যাসের মূল সঞ্চালন লাইন। এ লাইন থেকেই ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশের বিভিন্ন সংযোগ সড়ক দিয়ে বিভিন্ন শিল্প কারখানা ও কতিপয় আবাসিক গ্যাসের সংযোগ দেয়া হয়েছিল। দীর্ঘদিন গ্যাসের সংযোগ বন্ধ থাকার কারনে গ্যাস সুবিধা পেতে ওই সমস্ত এলাকাবাসী অতি আগ্রহী হয়ে উঠে। বাড়ীতে গ্যাসের সংযোগ থাকলেই  বাড়ী ভাড়া বেড়ে যায় কয়েকগুন। স্থানীয় একটি দালালচক্র বিভিন্ন এলাকায় অতি গোপনে অবৈধ গ্যাসের সংযোগ দিতে শুরু করে। প্রথম দিকেই সংযোগ প্রতি ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা লাগলেও এখন সংযোগ অতি সহজলভ্য হওয়ায় ১০/২০ হাজার টাকায় মিলছে অবৈধ গ্যাসের সংযোগ। ২নং সিএন্ডবি এলাকা আনসার রোডের দুই পাশে ওমেদ আলী, সেলিম, হানিফা, আলম, আলামিন, আব্দুস সালাম, জাকির হোসেন, ইমান উদ্দিন, আব্দুল হালিম, বাদশা মিয়া, আব্দুস সালাম, আফজাল হোসেন, আজগর আলী, বৈরাগীরচালা গ্রামের সাজাহান খান, বদিউজ্জামান খোকন, আউয়াল খান, নুরুল ইসলাম, আখিনুর, মান্নান সিকদার, জহিরুল ইসলাম, সফির উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন, জসিম উদ্দিন, আকতার হোসেন, আব্দুল হালিম, কেওয়া দক্ষিন খন্ড এলাকার গাড়ো পাড়ায় একরাম হোসেন একচান, কালাম, মাসুদ, দুলাল, দেলোয়ার, সামসু, আজাদ, মফি, সিমসং, শামসু, সাইফুল এর বাড়ী সহ বিস্তৃর্ন এলাকায় হাজার হাজার বাড়ীতে রয়েছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। অবৈধ সংযোগ দাতারা বিভিন্ন শিল্প কারখানার ও আবাসিক সংযোগের সঞ্চালন লাইন থেকে ফুটো করে রাতের আধারে কখনো কখনো এসব সংযোগ দিয়ে থাকে। ১নং সিএন্ডবি বাজার এলাকার আলহাজ্ব তাইজ উদ্দিন এর বাড়ীর আবাসিক সংযোগ লাইন থেকে অবৈধ সংযোগ নেয়ায় তিনি ১৫ সেপ্টেম্বর তারিখে শ্রীপুর থানায় ২৪৪২নং সাধারন ডায়রী করলেও এ বিষয়ে পুলিশ কোন কার্যকরি ভূমিকা নেয়নি। তাইজ উদ্দিন জানান, শ্রীপুর থানার সেকেন্ড অফিসার এস.আই জিয়াউল হকের সাথে আতাত করে দালাল চক্র এসব সংযোগ দিয়ে থাকেন।

এলাকাবাসী জানায়, শ্রীপুরের দু’একজন সাংবাদিক সরকার দলের নাম ব্যবহার করে সংঘবদ্ধ দালাল চক্র শ্রীপুর থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে অবৈধ গ্যাসের সংযোগ বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। শ্রীপুরের জৈনা বাজার, ধনুয়া, নয়নপুর, মাওনা, এমসি বাজার, মুলাইদ, কেওয়া, দারগার চালা, সিংগারদীঘি, জৈনা বাজার, গিলার চালা, চন্নাপাড়া, মাওনা, বেড়াইদেরচালা, মাধখলা, ভাংনাহাটি, বাগেরবাজার, ভবানিপুর, মাস্টারবাড়ী, রাজেন্দ্রপুর, রাজাবাড়ী, বনখড়িয়া, ধলাদিয়া, নালিয়াটেকি, পাবুরিয়ারচালা, লোহাগাছিয়া সহ বিস্তৃর্ন এলাকায় প্রায় প্রতিটি বাড়ীতেই ডালের মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অবৈধ গ্যাসের সংযোগ। নিম্নমানের নির্মান সামগ্রী, অদক্ষ কারিগর দিয়ে দেয়া এসব সংযোগ থেকে যে কোন সময় বিস্ফোরন ঘটে হতে পারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড। ৩০ আগস্ট তারিখে সাপ্তাহিক গাজীপুর দর্পন পত্রিকায় জেলা প্রশাসকের তাগাদা  আমলে নিচ্ছে না তিতাস শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা যায়, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশেই গাজীপুর জেলা প্রশাসন আইন শৃঙ্খলা কমিটি ও বিশেষ সভা করে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের সিদ্ধান্ত নেয়। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মানছে না তিতাস গ্যাসের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এলাকাবাসী জানায়, গ্যাস সংযোগ ব্যবসায় শীর্ষ তালিকায় রয়েছে বৈরাগীর চালা গ্রামের আ: মান্নান সিকদার।  গ্যাসের হাইপ্রেসার লাইন পাইপ ফুটো করে অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে চলছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। অপ্রতিরোধ্য গ্যাস চোর চক্র অবৈধ সংযোগ নিলে বৈধ করা যাবে এমন অঙ্গীকারের ভিত্তিতে এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করে অবৈধ সংযোগ বানিজ্য  করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

এলাকার সচেতন মহল জানায়, শ্রীপুরের সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিজ হায়দার ভূইয়া ও ওসি আমির হোসেনের দায়িত্বকালে অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীদের ধরে আইনের আওতায় আনা হতো। বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শ্রীপুর থানার ওসি যোগদানের পর থেকে নিরাপদ নির্বিঘেœ রাতদিন চলছে অবৈধ গ্যাসের সংযোগ। গ্যাস চোরেরা শ্রীপুর তথা গাজীপুরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় মাননীয় সংসদ সদস্যের নাম ব্যবহার করে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ কর্মকান্ড।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রত্যেক এলাকায় তিতাস গ্যাস কর্মচারীদের মনোনীত বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে এসব সংযোগ। প্রতি সংযোগকৃত প্রতি চুলা থেকে ঐ সমস্ত এজেন্ডদের মাধ্যমে মাসিক ৫ শ টাকা হারে আদায় করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বিভিন্ন শিল্প কারখানা সূত্রে জানা যায়, সকাল সন্ধ্যায় গ্যাসের চাপ একেবারেই কমে যাওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই তাদের উৎপাদন কার্যক্রম বাধা গ্রস্থ হচ্ছে। নিয়ন্ত্রনহীন ভাবে গ্যাসের সংযোগ চলতে থাকলে অচিরেই শ্রীপুরের অধিকাংশ শিল্প কারখানা গ্যাস সংকটে পড়বে।

অবৈধ গ্যাসের সংযোগ প্রসঙ্গে শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মহসিনুল কাদির জানান, অবৈধ গ্যাস সংযোগের সাথে শ্রীপুর থানা পুলিশের কোন যোগসূত্র নেই। খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবৈধ সংযোগকারীদের প্রতিহত করে থাকে। ১৭ আগস্ট রাতে মাওনা এলাকার মমিন মোল্লার বাড়ীতে অবৈধ সংযোগ দেয়ার সময় বিপুল পরিমান পাইপ পুলিশ আটক করে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: সাদেকুর রহমান জানান, তিনি অতি সম্প্রতি শ্রীপুরে যোগদান করেছেন। অবৈধ গ্যাসের সংযোগের বিষয়ে অবগত হওয়ার পরে ইতিমধ্যেই তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অবহিত করেছেন এবং দ্রুতই এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *