রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, নিহত মুক্তিযোদ্ধার ছেলে গতকাল রাত নয়টার দিকে বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় ঝালকাঠির রাজাপুরের সাতুরিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শাহ আলম ও ওই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানসহ আটজনকে আসামি করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য আজ বুধবার ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, গত সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে আবদুস ছালাম খান তাঁর কিন্ডারগার্টেনের এক শিক্ষিকার বকেয়া বেতন পরিশোধ করার জন্য রাজাপুরের সাতুরিয়া ইউনিয়নের বকুলতলা গ্রামে যান। তিনি ওই শিক্ষিকার বাড়ি থেকে ফেরার পথে সাতুরিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শাহ আলম কয়েকজনকে নিয়ে তাঁর বাবার পথ আটকে ওই বাড়িতে যাওয়ার কারণ জানতে চান। একপর্যায়ে ওই শিক্ষিকার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক আছে—এমন অভিযোগ তুলে তাঁকে মারধর করেন শাহ আলম। পরে আবদুস ছালাম খানকে আমতলী বাজারে নিয়ে সাতুরিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন মিলে দ্বিতীয় দফায় বেদম মারধর করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি রাতে বাড়িতে আসেন এবং লোকলজ্জার ভয়ে পরিবারের কাউকে কিছু না বলে শুয়ে পড়েন। ভোরের দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
নিহত মুক্তিযোদ্ধার ছেলে বলেন, গতকাল সকালে তাঁর বাবার জানাজা ও দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাঁর। পরে লোকজনের কাছে এসব ঘটনা জানার পর তাঁরা বিষয়টি রাজাপুর থানায় জানান। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, দুই দফায় আবদুস ছালাম খানকে মারধর করা হয়। যাঁরা মারধর করছিলেন, তাঁরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাঁদের নিবৃত্ত করার সাহস দেখাননি।
এ ঘটনায় রাজাপুর ও ভান্ডারিয়া উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রাজাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. শাহ আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল রাষ্ট্রের ক্ষমতায় থাকাকালে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়—এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।’
ভান্ডারিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মান্নান বিশ্বাস বলেন, আবদুস ছালাম খান তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বলেন, ‘হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। অন্যথায় মুক্তিযোদ্ধারা রাজপথে নামতে বাধ্য হবে।