ঢাকা; দেশে অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সুপারিশকৃত ওই আইন অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী নিয়োগের বিষয়ে সুপারিশ করেন তারা। একই সঙ্গে সার্চ কমিটি গঠন ও তার কিছু টার্মস অব রেফারেন্সের বিষয়েও মতামত দেন। সোমবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ’ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এই আইন করার সুপারিশ করে সংগঠনটি। পরে আলোচনায় অংশ নিয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এই সুপারিশের পক্ষে মত দেন। বৈঠকের শুরুতেই ইডব্লিউজির পরিচালক আব্দুল আলিম বাংলাদেশের আইনি কাঠামো ও এর সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে সংবিধানের কয়েকটি ধারা পরিবর্তন করে নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়ন করার সুপারিশ করেন। পরে আলোচনায় অংশ নিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠ করতে হলে অবশ্যই সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়ন জরুরি। কিন্তু সরকারের এ ধরনের কোনও চিন্তা ভাবনা আছে বলে আমার মনে হয় না। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়ন করে ওই আইনের মাধ্যমেই নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিতে হবে। অন্যথায় কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ হবে, নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে, মামলাও হবে। এছাড়া আগামী ফেব্রুয়ারির আগেই নির্বাচন কমিশন আইন করার প্রয়োজন জরুরি হয় পড়েছে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশন আইন ছাড়া সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব নয়। তবে এর পূর্ব শর্ত গণতান্ত্রিক চর্চা। দেশে যদি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় তাহলে নির্বাচন কমিশন আইন ছাড়াও সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠ নিরপেক্ষ হতে হলে কমিশন আইন করার কোনও বিকল্প নেই। কমিশনের একটি খসড়া আইন আগেই করা রয়েছে। সেটা নিয়ে কিছুদিন আলোচনা করলেই আইনটি চুড়ান্ত করা সম্ভব। এটা খুব একটা কঠিন কিছু হবে বলে আমার মনে হয় না। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের চেয়ে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভুমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতাসীনদের দ্বারা সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব নয় মন্তব্য করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ক্ষমতাসীনরা কখনই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারে না। এছাড়া এখন সরকার তাদের সহায়ক আইন প্রণয়ন করছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় এবং জনগণ ওই নির্বাচন মেনে নেবে না। তিনি বলেন, সার্চ কমিটির উপর আমাদের কোন আস্থা নেই। সার্চ কমিটির গুরুত্ব বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, শক্তিশালী, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন আইন অবশ্যই দরকার। আর নির্বাচন কমিশনে তিন ভাগের একভাগ নারী সদস্য থাকা উচিত।