বেলো হরিজন্তের যে মাঠ সিলভাদের অশ্রুবিন্দুতে সিক্ত হয়েছিল জার্মানির কাছে, সেই দুঃসহ পরাজয়ে, সেই মাঠে, সেই বিন্দুগুলোই যেন রূপ নিল রুপালি মুক্তোদানায়।
১২ মিনিটে ১৩ ফাউল দিয়ে শুরু ম্যাচটি প্রথমে যে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছিল, মুহূর্তেই সেটি বদলে গেল। ২৩ মিনিটে লুকাস বিলিয়ার সৌজন্যে ম্যাচে প্রথম গোলে শট। আর্জেন্টিনার চিনিয়ে দেওয়া গোলমুখটা খুব ভালোভাবে খুলে ফেলল আসলে ব্রাজিলই। ২৫ মিনিটে কুতিনহোর গোলে প্রথম এগিয়ে যাওয়া। প্রথমার্ধের শেষ প্রান্তে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে নেইমারের ৫০ তম গোল স্কোরটাকে করে ফেলল ২-০।
সার্জিও আগুয়েরোকে বসিয়ে রাখার ভুলটা শুধরে নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে বেশ ইতিবাচক শুরু করল আর্জেন্টিনা। কিন্তু দুই গোলে পিছিয়ে থাকা আর্জেন্টিনার ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষীণতম সম্ভাবনা দ্রুতই মুছে ফেললেন পাওলিনহো। ৫৫ মিনিটে তাঁরই শট গোলরেখা থেকে ফিরিয়েছিলেন পাবলো জাবালেতা। তিন মিনিট পরেই সেই বকেয়া গোলটি তুলে নিলেন পাওলিনহো। ৩-০!
কপাল ‘ভালো’ আর্জেন্টিনার, আরও গোটা দুই গোল খায়নি! ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার দ্বৈরথের ইতিহাসে সবচেয়ে একতরফা ম্যাচগুলোর একটি আসলে শেষ হয়ে গিয়েছিল ম্যাচ শেষেরও বহু আগে। যে ম্যাচের প্রতিবেদন ৩০ মিনিট বাকি থাকতেই এক রকম লিখে ফেলা যায়।
বেলো হরিজন্তের যে মাঠে গত বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ফুটবলের মৃত্যু দেখেছিলেন অনেকে, সেই মাঠেই নতুন কোচ তিতের দলটি নতুন আশার পতাকা ওড়াল গর্বের সঙ্গে। এই তিতে শুধু বাছাই পর্বে পাঁচে পড়ে থাকা ব্রাজিলকে শীর্ষে তুলে আনেননি, ফিরিয়ে এনেছেন হলুদ জার্সির সুন্দর ফুটবলের নির্যাস। না, এখনো ব্রাজিল তাঁর সেরা ছন্দে ফেরেনি। তবে এই ছন্নছাড়া আর্জেন্টিনাকে গুঁড়িয়ে দিতে ব্রাজিলকে তার সেরা ফুটবলটাও দিতে হলো না।
চোটের কারণে তিন ম্যাচ বাইরে থেকে ফেরা মেসিকে পুরো বোতলবন্দী করে রাখল ব্রাজিল। নেইমারের ব্যক্তিগত বিমানে চেপেই এ ম্যাচ খেলতে এসেছিলেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। নেইমারের বিপক্ষে এই প্রথম কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে আর্জেন্টিনার হয়ে খেলছেন। তাতে নেইমারের হলুদ বিমানটাই শুধু উড়তে দেখলেন মেসি। ছায়া হয়ে রইলেন এক-দুটি ক্ষণিকের ঝলক বাদে। এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে দামি স্ট্রাইকার গঞ্জালো হিগুয়েইন সেই পুরোনো চেহারায়। এদগার্দো বাউজা তাঁর অধীনে ৫ ম্যাচে মাত্র এক জয় নিয়ে চাকরি হারাতে চলেছেন কি না, সময়ই বলে দেবে।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে এভাবে অসহায় হেরে যাওয়া নিয়ে শোক করারও উপায় বোধ হয় নেই দেশটির সংবাদমাধ্যমের। আর্জেন্টিনা যে একেবারে খাদের কিনারে। দিনের অন্য ম্যাচে নিজেদের মাঠে প্যারাগুয়ে ৪-১ গোলে পেরুর কাছে হেরেছে বলে তাও কিছুটা রক্ষা। না হলে দশ দলের মধ্যে আর্জেন্টিনা নেমে যেত সাতে। আপাতত ১১ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে তাদের অবস্থান ছয়ে। অন্য দিকে তিতের অধীনে পাঁচ ম্যাচের প্রতিটাতেই জিতে শীর্ষস্থান আরও সুসংহত করল ব্রাজিল।
এখনো বাছাই পর্বে সাতটি ম্যাচ বাকি আছে। এখনো ২১ পয়েন্টের হিসাব বাকি। কিন্তু চার দিন পর কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটিই হয়ে যাচ্ছে আর্জেন্টিনার জন্য এক অর্থে বাঁচা-মরার! পরিস্থিতি না বদলালে, কে জানে, হয়তো ১৯৭০ বিশ্বকাপের পর আবারও আর্জেন্টিনাকে ছাড়াই দেখতে হবে বিশ্বকাপ!