ঝিনাইদহে স্কুলের কম্পিউটার এবার শিক্ষকের বাসায় প্রজেক্টরের বদলে এখন ব্লাকবোর্ড ! শিক্ষার্থিরা দিশেহারা !
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ শ্রেণিকক্ষে প্রজেক্টর থাকলেও ব্লাকবোর্ডে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক। টেবিলে সাজানো কম্পিউটারগুলো অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে ব্যবহার না করার কারণে। যেগুলো ভালো আছে, সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ও অফিসের কাগজপত্র টাইপের কাজে। কোনো কোনো স্কুলের শিক্ষক প্রভাব খাটিয়ে কম্পিউটার বাসায় নিয়ে গেছেন !
এতে ডিজিটাল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। সব মিলিয়ে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেওয়া কম্পিউটার, ল্যাপটপ শিক্ষার্থীদের কাজে লাগছে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে তৃণমূল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কম্পিটারে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে ঝিনাইদহের ৬টি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়েছে ল্যাব, কম্পিউটার ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর।
এসব কম্পিউটার ও ল্যাপটপ ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদানে ব্যবহার হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অফিসের কাগজপত্র টাইপের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ল্যাপটপগুলো কোনো কোনো শিক্ষক বাড়িতে নিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। সরকারের নির্দেশ আছে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষা দান করানোর। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারের সেই নির্দেশ মানছে না।
ঝিনাইদহ সরকারি বয়েজ স্কুলের একাধিক শিক্ষার্থী সাংবাদিকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, আমাদের স্কুলে যে কম্পিউটার দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে বেশ কয়েকটি নষ্ট হয়ে গেছে। যেগুলো সচল আছে। সেগুলো শিক্ষকরা অধিকাংশ সময় ব্যবহার করেন। আমাদের কোনো কাজে লাগে না। কম্পিউটার না থাকার কারণে প্রতিনিয়ত সমস্যা হয়, অধিককাংশ শিক্ষার্থী ভালো মতো কম্পিউটার শিখতেও পারে না।
ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চননগর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাধিক ছাত্রীরা বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে যে ল্যাব ছিল তা অচল। আইসিটি ক্লাস করি শুধুমাত্র বই পড়ে। কম্পিউটার না থাকায় সেগুলো মুখস্ত করতে হচ্ছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের প্রজেক্টর চুরি হয়ে গেছে। যেকারণে সেখানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেওয়া বন্ধ রয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলার হাটগোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যে ল্যাব দেওয়া হয়েছিল, তার অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে।
ওই বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক মাজেদুল ইসলাম সাংবাদিককে বলেন, যে ল্যাব দেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে কয়েকটি নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েকটি সচল আছে, তা অফিসের কাজ আর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
এদিকে ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চননগর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রদীপ কুমার বিশ্বাস সাংবাদিককে বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে যে ল্যাব দেওয়া হয়েছিল, তা ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে।
কম্পিউটারগুলো যা মেরামতের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। সদর উপজেলার মাওলানাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষকরা ব্লাকবোর্ডে ক্লাস নিচ্ছেন। বন্ধ রয়েছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এবং ল্যাপটপটি রয়েছে প্রধান শিক্ষকের টেবিলে।
মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেওয়া হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষক আমানত হোসেন সাংবাদিককে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে যে কক্ষগুলো রয়েছে তা মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার উপযোগী না। মাঝে মধ্যে দু’একটি ক্লাস নেওয়া হয়।
ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক মফিজুর রহমান আকাশ সাংবাদিককে বলেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে বুঝতে পেরেছি, প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া কম হচ্ছে। এর কারণ শিক্ষকদের অজ্ঞতা আর প্রতিষ্ঠানের ভৌত অবকাঠামো সমস্যা বলে মনে হচ্ছে।
ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোকছেদুল ইসলাম সাংবাদিককে বলেন, শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার বিষয়ে দক্ষ করে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে জেলা শিক্ষা অফিস। কেউ যদি কম্পিউটারগুলো ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজগুলোতে সরকার থেকে ৪ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ, কম্পিটার ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী রয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪৭৭ জন।
ঝিনাইদহে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মনবাড়িয়ার সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে !
ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে ও দোষী ব্যাক্তিদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে । ৪ঠা নভেম্বর শুক্রবার সকাল ১২টার দিকে শহরের পেষ্টি অফিস মোড়ে এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়।
বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিষ্ট্রান ঐক্য পরিষদ এবং পূজা উদযাপন পরিষদ এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। ঘন্টা ব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশ নেয় হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিষ্ট্রান ঐক্য পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুবীর কুমার সোমার্দ্দার,
কেন্দ্রীয় পুজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি কনক কান্তি দাস, প্রচার সম্পাদক বিনয় কৃষ্ণ বিশ্বাস, সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পষিদের সভাপতি প্রফুল্লহ কুমার সরকার, ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রসেন্জিৎ ঘোষ শিপন, সাধারণ সম্পাদক পলাশ কুমার বিশ্বাসসহ জেলা বিভিন্ন পেশার অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, ব্রাক্ষনবাড়িয়াসহ সারাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন,নিপিড়ন, মন্দীরে হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানান। অবিলম্বে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানান।
শৈলকুপায় কিশোরীর মায়ের উপর অভিমানে আত্মহত্যা !
ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় মায়ের উপর অভিমান করে কিশোরী সোনিয়া খাতুন গলাই ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সে পৌর এলাকার ঝাউদিয়া গ্রামের রাজমিস্ত্রি আশরাফ আলীর মেয়ে। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার সকালে।
স্থানিয়রা জানায়, সোনিয়া তার মায়ের উপর অভিমান করে শুক্রবার সকালে ঝাউদিয়া গ্রামের নিজ ঘরে গলাই ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।
শৈলকুপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি শুনেছি তবে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অপমৃত্যু মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
ঝিনাইদহের সেই পুলিশ কর্মকর্তা ঢাবি শিক্ষার্থীকে নির্যাতনে ক্ষমা চাইলেন !
ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বিনা অপরাধে থানা হাজতে ২২ ঘণ্টা আটকে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের ছাত্র জাহাঙ্গীর আলমের ওপর নির্যাতন চালায় পুলিশের এক এএসআই তৌহিদুর রহমান। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, নিউজপোর্টাল, ফেসবুকে ঝড়ের বেগে এ সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর জেলাব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের ওই কর্মকর্তা জাহাঙ্গীরের পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন এবং দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া ছেলেকে ছাড়িয়ে নিতে তার বাবার কাছ থেকে নেওয়া ঘুষের টাকা ফেরত দেন তৌহিদ। তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত এএসআই তৌহিদুর গত দুইদিন ধরে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাপ শুরু করেন। ঘটনা ধামাচাপা দিতে প্রথমে জাহাঙ্গীর ও তার পরিবারকে ভয়ভীতিও দেখানো হয়। কিন্তু ওই ছাত্রের পরিবার শক্ত অবস্থানে থাকার কারণে পরে তেমন কোনও সুবিধা করতে না পেরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ধরণা দিয়ে ঘুষের টাকা ফেরত দিয়ে বিষয়টির সমাধান করেন।
এ ব্যাপারে ঢাবি শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলমের বাবা হকার মিরাজুল ইসলাম জানান, ‘খবর প্রকাশিত হওয়ার পর দারোগা বিভিন্ন স্থানে দেনদরবার শুরু করে। অবশেষে বৃহস্পতিবার রাতে এমপি আনার সাহেবের উপস্থিতিতে বিষয়টি সমাধান হয়। দারোগা আমার ছেলের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছে এবং ঘুষের টাকা ফেরত দিয়েছে। এজন্য আমি মিডিয়া ও এমপি সাহেবের প্রতি কৃতজ্ঞ ও সন্তুষ্ট।’
ঘটনার ব্যাপারে ঝিনাইদহ-৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজীম আনার বলেন, ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া একটি মেয়েটিকে উদ্ধারের জন্য তাকে পুলিশ আটক করেছিল। হয়ত সামান্য মারপিট করেছে এবং মেয়েটিও উদ্ধার হয়েছে। উভয় পক্ষকে এক জায়গায় করে বিষয়টির সমাধান করে দিয়েছি।’
উল্লেখ্য স্থানীয় প্রভাবশালী এক পরিবারের একটি মেয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ২৮ অক্টোবর গভীর রাতে কালীগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের শ্বশুরবাড়ি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করেন থানার এএসআই তৌহিদুর রহমান।
পরে থানায় এনে হাত-পা ও চোঁখ বেধে তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। দেয়া হয় বাঁশকল। এ সময় দারোগা বলে, ‘তুই ঘটনার সাথে জড়িত, যদি বিষয়টি স্বীকার না করিস তাহলে তোকে ক্রসফায়ারে দেবো’ বলে ভয়ও দেখায়।
অথচ যে ঘটনায় তাকে আটক করা হয় সে ঘটনার সাথে সে আদৌও জাড়িত ছিল না বলে পরিবারের দাবি। পরে ঢাবি’র ছাত্র জাহাঙ্গীর আলমের পিতা হকার মিরাজুলের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে ২২ ঘন্টা পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ বিষয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র ও কালীগঞ্জ উপজেলার কলেজপাড়ার হকার মিরাজুলের ছেলে।