জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহে ৩ মাদক ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার এসিল্যান্ড ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উসমান গণি এ দন্ড প্রদাণ করেন।
দন্ডিতরা হলো-সাগান্না ইউনিয়নের বাদপুকুরিয়া গ্রামের নাহার উদ্দিনের ছেলে আজিজুল মিয়া (২৮), কুমড়াবাড়ীয়া ইউনিয়নের লেবুতলা গ্রামের আনজের মন্ডলের ছেলে আনিছ মন্ডল (২৫) ও হলিধানী ইউনিয়নের শালিয়া গ্রামের আব্দুস সোবাহানের ছেলে ইদ্রিস আলী।
আদালত সুত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর গোপন সংবাদে জানতে পারে সদর উপজেলা সাগান্না, কুমড়াবাড়ীয়া ও হলিধানী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে মাদক ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন মাদক ক্রয়-বিক্রয় করে আসছে।
এমন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকালে এসিল্যান্ড ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উসমান গণি’র নেতৃত্বে একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই তিন ইউনিয়নে অভিযান চালায়। সেসময় আজিজুল মিয়া, আনিস মন্ডল ও আলীকে হাতে নাতে আটক করা হয়। উদ্ধার করা হয় মাদক ও মাদক সেবনের উপকরণ।
পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আজিজুল মিয়াকে ৮ মাস, আনিস মন্ডলকে ১ বছর ও ইদ্রিস আলীকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদাণ করা হয়।
ভ্রাম্যমান আদালতে জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক রাসেল আলী, এ এস আই জিএম হাফিজুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে উপস্থিত ছিলেন।
ঝিনাইদহের মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাক এখন ভিক্ষুক ! এ লজ্জা কার ?
ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ১৯৭১ থেকে ২০১৬। স্বাধীনতা অর্জনের ৪৫ বছর পার করেছে বাংলাদেশ। সেদিনকার সাড়ে ৭ কোটি বাঙ্গালী এখন ১৭ কোটি ছুই ছুই। উন্নয়ন আর উৎপাদনে বদলে গেছে বাংলাদেশ। সব কিছুতে আধুনিকতার ছাপ। কিন্তু পাল্টায়নি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাকের ভাগ্য। বাংলা জয় করা এই মুক্তিযোদ্ধা অর্ধহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
বয়সের ভারে কাজ করতে না পারায় তার পেশা এখন ভিক্ষা। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পাওয়ায় ভাগ্যে জোটেনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ী মাগুরা সদর উপজেলা নিজনান্দুয়ালি গ্রামে। তিনি যুদ্ধ করেছেন শৈলকুপা অঞ্চলে। জীবীকার তাগিদে ভিক্ষা করেন ঝিনাইদহের বিভিন্ন গ্রামে। সম্প্রতি ভিক্ষা করতে দেখা গেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হাটগোপালপুর বাজারে।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি ভারতের বনগাঁ কাঠাল বাগান এলাকায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে শৈলকুপা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রহমত আলী মন্টুর নেতৃত্বে শৈলকুপার আলফাপুর, কুমিরাদহ, আবাইপুর, এ বাগনী এলাকায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তার সামনে অনেক সহযোদ্ধান মৃত্যু দেখেছেন। দেখেছেন অনেক রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা সাজতে।
অথচ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৫ বছর পুর্তি হলেও আজও তার স্বীকৃতি মেলেনি। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তার পরিচয় পত্র দিয়েছেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আব্দুল আহাদ চৌধুরী। শৈলকুপা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রহমত আলী তার সনদপত্র দিয়েছেন। মাগুরা জেলা মুক্তিযোদ্ধাদের ১২৫ নং তালিকায় তার নাম থাকলেও স্বীকৃতি পাননি তিনি।
সরকারী সহযোগিতার জন্য তিনি বার বিভিন্ন মহলে ধর্ণা দিলেও তার কথায় কর্ণপাত করেনি কেউ। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তো দূরের কথা, বয়স্ক ভাতাও জোটেনি তার কঁপালে। অসুস্থ্য আব্দুর রাজ্জাক একদিন ভিক্ষায় বের হতে না পারলে অভুক্তই থাকতে হয় সারাদিন। চিকিৎসার অভাবে প্রায়ই রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে।
রাজ্জাক সম্পর্কে শৈলকুপা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রহমত আলী মন্টু বলেন, আব্দুর রাজ্জাক আমার নেতৃত্বে বেশ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার স্বীকৃতি মেলেনি। আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ী পার্শবর্তী জেলায় হওয়ার কারণে আমি তার জন্য কিছুই করতে পারছি না।
এ ব্যাপারে মাগুরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নবুয়াত হোসেন মোল্লা বলেন, আব্দুর রাজ্জাককে সেভাবে আমি চিনি না। তিনি হয়তো অন্য এলাকায় যুদ্ধ করেছেন। মাগুরা সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড হয়তো তার বিষয়ে জানতে পারেন।
ঝিনাইদহে এবার এমপি হত্যা ষড়যন্ত্র মামলায় আ’লীগ নেতাসহ গ্রেফতার ২ !
ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ষড়যন্ত্র নসাৎতের দাবী করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার আবু সাঈদ ও সরকারী চাকুরে কাওছার আলীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতারকৃতরা এমপি আনার হত্যার ষড়যন্ত্র করছিলো বলেও আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এ সব তথ্য জানান এমপি হত্যা প্রচেষ্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার এসআই ইমরান আলম। তিনি জানান, বুধবার কালীগঞ্জ এলাকার সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
মামলায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো কয়েক জনকে আসামী করা হয়। বাদী এজাহারে উল্লখ করেন, আসামীরা পরস্পরের যোগসাজসে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার চেষ্টা চালাচ্ছে। পুলিশ মামলাটি দ্রুত রেকর্ড করে আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেন।
বুধবার বিকালে সাদা পোশাকের অস্ত্রধারীরা হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসে হানা দিয়ে সার্টিফিকেট সহকারী কাউছার আলীকে তুলে আনেন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের একজন কর্মচারীকে এ ভাবে পরিচয় গোপন করে আটক করতে পারেন কি না তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়।
সরকারী ওই কর্মচারীকে আটকের সময় হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভিনের অনুমতি নেওয়া হয়নি। তার অফিস থেকেই পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে যায়। এতে তিনি ক্ষুদ্ধ হন। পুলিশ প্রথমে অস্বীকার করলেও কর্মচারীদের আন্দোলনের হুমকীতে বুধবার গভীর রাতে জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদারের কাছে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় কাওছার তাদের হেফাজতে আছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসের সার্টিফিকেট সহকারী কাউছার আলী ও নিয়ামতপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদকে এমপি আনার হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার এসআই ইমরান আলম জানান, উপযুক্ত তথ্য প্রমানের ভিত্তিত্বে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখানে কোন বিতর্ক নেই।
কালীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আলী আজম খান জানান, কাওছার আলী এমপি মেহাদয়কে হত্যার ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত। আমরা প্রমান পেয়ে তাকে আটক করেছি।
এদিকে গ্রেফতারকৃত আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদের ছোট ভাই হাসান অভিযোগ করেন গত ২৭ অক্টোবর কালীগঞ্জের সিঙ্গের বাজার থেকে থানার এসআই আব্দুল গাফ্ফার তার ভাইকে তুলে নিয়ে যান। এ ঘটনা বাজারের শত শত মানুষ দেখেছে। তিনি বলেন বিএনপির সময় তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে ২৪টি মামলা দেওয়া হয়।
ছাত্রদলের পক্ষ থেকে টানানো ব্যানারে আজকের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে ফাঁসির যে দাবী করা হয়েছিলো সেই ব্যাানারে তার ভাইয়ের ছবিও ছিল। অথচ তাকে আজ এমপি হত্যার ষড়যন্ত্রে ফাঁসানো হলো।
এদিকে কালীগঞ্জ উপজেলার দুলালমুন্দিয়া গ্রাম থেকে জেহের আলী ও হরিণাকুন্ডু উপজেলার কেষ্টপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ নামে দুই ব্যক্তিকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
কালীগঞ্জে নিখোঁজ থাকা জেহের আলীর মা জুলেখা বেগম অভিযোগ করেন তার ছেলেকে গত ২৫ অক্টোবর থানার এসআই সুকুমার তার ছেলেকে নিয়ে যান। সেই থেকে জেহের আলীকে পাওয়া যাচ্ছে না।
কালীগঞ্জের পুলিশ কর্মকর্তা ইমরান আলম অবশ্য দাবী করেছেন জেহের আলী নামে তারা কাউকে আটক করেনি। এদিকে র্যাবের সোর্স হিসেবে পরিচিত হরিণাকুন্ডু উপজেলার কেষ্টপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ ৬ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন।
তার পরিবার অভিযোগ করেছেন, পুলিশ পরিচয় দিয়ে কে বা কারা তাকে নিয়ে গেছেন। কোথাও তার হদিস মিলছে না। হরিণাকুন্ডু থানার ওসি মাহাতাব হোসেন জানান আজিজ নামে তারা কাউকে আটক করেননি।
এদিকে হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসের সার্টিফিকেট সহকারী কাউছার আলীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি ঝিনাইদহ জেলা শাখার পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারক লিপি দেওয়া হয়। স্মারকলিপিতে তারা কাওছার আলীকে এ ভাবে অবৈধ ভাবে গ্রেফতারের প্রতিকার দাবী করেন।