রবিউল ইসলাম, দিনাজপুর প্রতিনিধি ॥ দিনাজপুরে তৈয়বা মজুমদার ব্লাড ব্যাংকে (টর্চার সেল) আটকে রেখে যুবলীগ নেতার অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মঞ্জুরুল ইসলাম (১৮) নামে এক যুবক কে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আজ বৃহস্প্রতিবার রাতে এই মামলার অভিযুক্ত আসামী মিঠুন ও মামুন নামে ২ জন কে আটক করেছে র্যাব-১৩।
জানাযায়, নিহত মঞ্জুরুল ইসলাম সদর উপজেলার ৫নং শশরা ইউনিয়নের মহতুল্লাপুর মন্ডলপাড়া গ্রামের আব্দুল কাদের কসাইয়ের ছেলে। নিহতের পরিবারেরর সদস্যরা জানায়, মঞ্জুরুল ইসলাম একজন ট্রাক হেলপার।
কয়েকদিন আগে তিনি সদর উপজেলার খোদমাধবপুর গ্রামের মির্জা মামুনের ট্রাকের হেলপার হিসেবে চট্টগ্রামে যায়। সেখান থেকে আসার সময় রাস্তায় ট্রাকের চালক নেমে গেলে ট্রাকটি নিয়ে মঞ্জুরুল ইসলাম ফিরে আসে দিনাজপুরে ।
গত ২৫ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে মঞ্জুরুল ইসলামের খোঁজ পাওয়া যায় না । ২৬ অক্টোবর মোবাইল ফোনে জানতে পারি মঞ্জুরুল ইসলাম দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সেখানে গিয়ে মঞ্জুরুল ইসলামের কাছে জানতে পারি ট্রাকের মালিক মির্জা মামুনের নেতৃত্বে যুবলীগ নেতা সালেকিন রানা , মিথুন , রিকো তরিকুল , সিরাজুসসহ আরোও ৫/৬ গত ২৫ অক্টোবর রাতে তাকে তুলে নিয়ে যায় ।
এরপর উপশহর ১ নং ব্লকের তৈয়বা মজুমদার রেডক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংকে আটকে রেখে সারারাত বাংলা সিনেমার ভিলেনের স্টাইলে নির্যাতন করে।
নিহত মঞ্জুরুল ইসলামের বাবা আব্দুল কাদের ও বোন নাসিমা বেগম জানান, প্লাস দিয়ে মঞ্জুরুল ইসলামের হাতের নখ তুলে ফেলা হয়। দুই হাতে ব্লেড দিয়ে চিরে লবন ও মরিচের গুড়া লাগিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে দিনাজপুর র্যাব-১৩ সদস্যরা দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। ওই দিন র্যাব সদস্যরা ক্ষমতাসীন দলের যুবলীগ সদস্য সিরাজুস সালেকিন রানাকে আটক করে।
পরে তাকে জিঙ্গাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়। দিনাজপুর র্যাব-১৩ এর দিনাজপুর অফিসের ইনচার্জ মেজর মেহেদী জানান, মঞ্জুরুল ইসলাম হত্যা মামলার আসামী মির্জা মামুন ও মিঠুনকে আটক করা হয়েছে।
অন্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে খুব শিঘ্রই আসামীরা আটক হবে বলে তিনি জানান।জেলা যুবলীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেনের সাথে যোগায়োগ করা হলে তিনি বলেন, দলীয় শ্রিংখলা ভঙ্গে অপরাধে যারা মঞ্জুরুল হত্যা মামলার সাথে জড়িত সেই সব যুবলীগ কর্মিদের বহিস্কার করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্লাড ব্যাংকের এক কর্মচারী জানান, এই প্রতিষ্ঠানে গত বছর থেকে নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহনের পর বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এখান থেকেই পরিচালিত হয়। এরপর থেকেই প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় তলার রেষ্ট হাউসটি নিজের করে নেন সিরাজুস সালেকিন রানা। সেখানে টেন্ডারবাজি পরিকল্পনা, মাদক সেবন, অস্ত্র বাজি, অসামাজিক কর্মকান্ড, অনেক নিরীহ যুকবকে আটকে রেখে চাদা আদায়সহ বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালিত হয়।
কোতয়ালী থানার ওসি রেদওয়ানুর রহিম জানায় , প্রাথমিক সুরদহাল রিপোর্টে দেখা গেছে নিহতের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে নিহতের পরিবারের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতের বড় ভাই মতিউর রহমান বাদি হয়ে প্রধান আসামী তরিকুল সহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
ক্ষমতাসীন নেতার ভয়ে থানায় মামলা দায়ের করতে পারছেনা ভুক্তভোগি পরিবার। পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা নিহতের গায়ে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও আত্ম হত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্ঠা করছে কোতয়ালী থানা পুলিশ অভিযোগ মঞ্জুরুলের পরিবারের। দুই কোটি টাকার ইয়াবার চালানকে কেন্দ্র করে ওই যুবকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করছে মঞ্জুরুলের পিতা আব্দুল কাদের।