ঢাকা; মার্কিন নির্বাচন ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ঢাকা। নির্বাচনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে ঢাকার পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম ততই জোরালো হচ্ছে। দেশটিতে থাকা বাংলাদেশের একাধিক কূটনৈতিক মিশন সরকারকে নিয়মিত রিপোর্ট পাঠিয়ে নির্বাচনের খুঁটিনাটি আপডেট করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এবং নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী নেতৃত্ব নির্বাচনের বিস্তৃত ওই কর্মযজ্ঞের ওপর নজর রাখছে। মিশনের রাজনৈতিক সেলের কর্মকর্তাদের এজন্য বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মূলত সেখানে নিযুক্ত কূটনীতিক ও কর্মকর্তারা বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন এবং এ নিয়ে প্রতিনিয়ত তারা সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাদের মূল্যায়ন ও রিপোর্ট সরবরাহ করছেন। এছাড়া তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে সেগুনবাগিচার একাধিক কূটনীতিক প্রতিষ্ঠানিক নির্দেশনা এবং ব্যক্তি উদ্যোগেও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ওপর চোখ রাখছেন। মার্কিন গণমাধ্যমসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশিত নির্বাচনী রিপোর্ট, মন্তব্য প্রতিবেদন, বিতর্ক, আগাম জরিপের ফল এবং নির্বাচনে এর প্রভাবের বিষয়টি বিচার-বিশ্লেষণে আনছেন ঢাকার কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মিশনের পাঠানো রিপোর্ট এবং সেগুনবাগিচার কর্মকর্তাদের পর্যালোচনায় মোটা দাগে যে বিষয়টি আসছে তা হলো- এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও ডনাল্ড ট্রাম্পের পরস্পরের প্রতি ব্যক্তিগত আক্রমণ! সেখানে কদর্য ভাষার ব্যবহার। ভবিষ্যৎ নয়, অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটির বিষয়টি। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে ঢাকার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আধুনিক জমানায় এমন প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন। তাদের মতে, ৩ দফা বিতর্কে পরবর্তী সরকারের পলিসি বা নীতি-কৌশল নিয়ে আলোচনাই কাম্য ছিল। কিন্তু না, এবার সবকিছুকে পিছনে ফেলে হিলারির ‘ই-মেইল’ আর ট্রাম্পের ‘ফিমেইল’ কেলেঙ্কারি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ই-মেইল আর ফিমেইল নিয়ে মাতামাতির ওই বিতর্কে অবশ্য হিলারি হ্যাটট্রিক জয় পেয়েছেন। এ জয়ে দেশটির বাংলাদেশ কমিউনিটি উল্লসিত বলে মিশনের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। ডনাল্ড ট্রাম্পের ফিমেইল কাণ্ডই নয়, তার অভিবাসী ও মুসলিমবিরোধী অবস্থানের কারণেও বাংলাদেশ কমিউনিটি হিলারির প্রতি ঝুঁকছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশের পর্যবেক্ষকরা। সেখানে অতি সমপ্রতি নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করে ট্রাম্প যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নিয়েও বিস্তর সমালোচনা চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা গণতন্ত্রে এমন আশঙ্কার কথা অতীতে কখনও শোনা গেছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর এমন মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের প্রতি অসম্মান বলেই মনে করেন ঢাকার কর্মকর্তারা। ট্রাম্পে আগ্রাসী মনোভাব, নোংরাভাবে প্রতিপক্ষকে ঘয়েল করার চেষ্টা এবং পুরুষাধিপত্যবাদী চরিত্রের বিষয়টিও বিবেচনায় আসছে। আগামী ৮ই নভেম্বরের মার্কিন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পরস্পরবিরোধী অভিযোগ, নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কা এবং ফল মেনে না নেয়ার হুমকির প্রেক্ষাপটে সেগুনবাগিচার কর্মকর্তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে মার্কিন কূটনীতিকদের মন্তব্য, মূল্যায়ন এবং পরামর্শের বিষয়টি স্মরণ করার চেষ্টা করছেন। অতি সমপ্রতি নিরাপত্তা সংলাপ উপলক্ষে ঢাকা সফরকারী মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক কর্মকর্তা বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে কিছু সুপারিশ করেন। বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ যুক্তরাষ্ট্র দেখতে চায় জানিয়ে দেশটির গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রমবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি বরার্ট বারশিনস্কি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। দেশের জনগণ যাতে সত্যিকার অর্থে পছন্দ অনুযায়ী ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনে সব দলের সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করার তাগিদও দেন ওই কর্মকর্তা। সংলাপ শেষে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আকাঙক্ষার বিষয়টি স্পষ্ট করেন। কিন্তু আচমকা নির্বাচন নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তার ওই মন্তব্য বা সুপারিশ বিশেষত নিরাপত্তা সংলাপের বাইরে আলাদাভাবে গণমাধ্যমকে ডেকে এটি বলাকে সহজভাবে নেনটি সেগুনবাগিচার কর্মকর্তারা। অবশ্য তাদের সেই অসন্তোষের কথা তৎক্ষণাৎ ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের উচ্চপর্যায়ের নজরে আনা হয়। সেগুনবাগিচার এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপারিশ থাকতেই পারে। কিন্তু সেটি উপযুক্ত ফোরামে বলাই কাম্য। তা না করে বাইরে বলা হলে সেখানে বিভ্রান্তির অবকাশ থাকে। এতে রাজনৈতিক পর্র্যায়েও প্রতিক্রিয়া হয়, যা কূটনীতিকদের আওতায় থাকে না। সেই বিষয়টিই দূতাবাসের নজরে আনা হয়েছে। মার্কিন নির্বাচনের ফল যাই হোক, জনরায়ে হিলারি বা ট্রাম্প যিনিই হোয়াইট হাউসে যান, ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক এগিয়ে নিতে তিনি আন্তরিক হবেন বলে দৃঢ় আশাবাদী ঢাকা।