ঢাকা; মাশুক মিয়ার প্রতীক্ষার অবসান হলো আজ। ৩ অক্টোবর থেকে অচেতন খাদিজা বেগম আজ তাঁর বাবাকে ‘আব্বু’ বলে ডেকেছেন। তিনি তাঁর মাকেও চিনতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা।
সৌদিপ্রবাসী মাশুক মিয়া মেয়ের ওপর হামলার খবর পেয়ে ৬ অক্টোবর দেশে ফেরেন। একই দিনে দেশে আসেন খাদিজার ভাই শাহীন আহমেদ। চীনের একটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী শাহীন গতকাল সোমবার চীনে ফিরে গেছেন।
কিছুক্ষণ আগে খাদিজার বাবা মাশুক মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাদিজা আজ আমাকে আব্বু বলে ডেকেছে। খুব আস্তে। আমি নিজে শুনেছি। আমার মনে হলো, ও আমাকে, ওর মাকে এবং আমাদের আত্মীয়স্বজনদেরও হালকা হালকা চিনতে পারছে। ব্যথা পেলে গোঙাচ্ছে। চিকিৎসকেরা আমাদের বলেছেন, দু–চার দিনের মধ্যেই ওকে কেবিনে দিয়ে দেবেন।’ তিনি আরও জানান, খাদিজা এখন কোনো কৃত্রিম যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই অল্পস্বল্প খাওয়াদাওয়া করছেন। বেশির ভাগ সময়ই তাঁকে তরল খাবার দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে মাশুক মিয়া বলেন, তাঁরা ধারণ করছেন, দু–তিন মাস পরে খাদিজার শারীরিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে।
রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খাদিজা বেগম এখন হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে আছেন। তাঁর শরীর থেকে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের যন্ত্রপাতি ও খাওয়ানোর জন্য যন্ত্রপাতি খুলে নেওয়া হয়েছে। শারীরিক অবস্থার আরও উন্নতি হওয়ায় হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট থেকে খাদিজাকে কেবিনে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
খাদিজা বেগমের চিকিৎসক স্কয়ার হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের পরামর্শক রেজাউস সাত্তার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের পর খাদিজার শরীরের ডান দিকে সাড়া ফিরলেও বাঁ হাত ও বাঁ পা নাড়তে পারছিলেন না। এই সপ্তাহের শুরু থেকে খাদিজা বাঁ পা–ও সামান্য নাড়াতে পারছেন। তবে বাঁ পা নাড়তে তাঁর খুব কষ্ট হচ্ছে।
১৭ অক্টোবর তাঁর ডান হাতে অস্ত্রোপচার করেন স্কয়ার হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান পরামর্শক মেজবাহুল হক। বাঁ হাতটি খাদিজা এখনো নাড়তে পারছেন না। এই হাতে অনুভূতি ফিরে এলে আরও একদফা অস্ত্রোপচারের মুখোমুখি হতে হবে তাঁকে।
৩ অক্টোবর সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের (ডিগ্রি) ছাত্রী খাদিজা বেগম পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে বদরুল আলমের হামলার শিকার হন। মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে প্রথমে খাদিজাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর অচেতন অবস্থাতেই খাদিজাকে ওই দিন দিবাগত রাতে তাঁর স্বজনেরা স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সংকটজনক অবস্থাতেই খাদিজার মাথায় দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচারের ৯৬ ঘণ্টা পর চিকিৎসকেরা জানান, খাদিজার আর জীবন সংশয় নেই।