ঢাকা: ঘণ্টায় প্রায় ২১০ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের কৈলাশগিরি পার্ক ও তৎসংলগ্ন এলাকায় আঘাত হেনেছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ। আর ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের শুরুতেই দুই জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টার কিছু পর রাজ্যের রাজধানী বিশাখাপত্তমের বন্দরের পাহাড়ি পার্কটিতে হুদহুদ আঘাত হানে বলে জানায় ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতর।
ইতোমধ্যে হুদহুদের প্রভাবে সৃষ্ট ভারি বৃষ্টিপাত ও জলোচ্ছ্বাসে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ব্যাপক ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বিপর্যয়ে বিশাখাপত্তম ও শ্রীকাকুলাম জেলায় দু’জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানায়, হুদহুদ আঘাত হানার পরপরই উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে শ্রীকাকুলাম জেলা ৫টি উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়। এছাড়া, বিশাখাপত্তমে পাঠানো হয় আরও ১০টি উদ্ধারকারী দল।
স্থানীয় আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, হুদহুদের প্রভাবে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তম, বিজয়নগরম ও শ্রীকাকুলাম জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনকি ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস এবং তৎপরবর্তী ভারি বর্ষণের কারণে রাজ্যটিতে দুপুরের আগে ব্যাপক ভূমিধসের শঙ্কাও করছেন আবহাওয়াবিদরা। এছাড়া, ভারি বৃষ্টিপাতে প্লাবনের আশঙ্কা করা হচ্ছে এর আশপাশের জেলাগুলোতেও।
যদিও ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে অন্ধ্রপ্রেদেশের বিভিন্ন জেলার কয়েক লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ভুবনেশ্বর ও বিশাখাপত্তম রুটের ট্রেন যাত্রা বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, দুপুর সোয়া ১২টার দিকে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল অতিক্রম করছিল হুদহুদের চোখ। তবে এর কেন্দ্রস্থল তখনও উপকূলের ২০-২৫ কিলোমিটার নিকটে অবস্থান করছিল। ঝড়ের কেন্দ্রস্থল আঘাত হানলে অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলেও জানানো হয় কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়ে এনডিটিভির খবরে আরও বলা হয়, অন্ধ্রপ্রদেশের রাজধানী বিশাখাপত্তমই ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নৌবাহিনীর মুখপাত্র জানান, আগামী ছয় ঘণ্টার মধ্যে বাতাসের গতিবেগ অন্তত ৫০ শতাংশ হ্রাস পাবে। তবে, এক ঘণ্টার মধ্যে অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে বৃষ্টিপাত।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সার্বিক বিষয় নিয়ে রোববার জরুরি বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বাংলাদেশ উপকূলে ৩ নং সতর্ক সংকেত
এদিকে হুদহুদের প্রভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন উপকূলীয় জেলা ও সমুদ্রবন্দরগুলোতে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
উপকূলীয় ও চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা এবং পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি রয়েছে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১-৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে আবহাওয়া দফতর।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতেও বলা হয় আবহাওয়া দফতরের পক্ষ থেকে।