গ্রাম বাংলা ডেস্ক: শিশিরপবিত্র হজ নিয়ে মন্তব্য করে সমালোচিত মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফিরছেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, দু-তিন দিনের মধ্যেই তিনি দেশে ফিরে আসছেন।
নিজেকে এখনো মন্ত্রী দাবি করে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘এখনো আমাকে কিছু জানানো হয়নি। এখনো আমি মন্ত্রিসভার সদস্য আছি বলে আমার মনে হয়।’
গতকাল বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে নিজে থেকেই বলেন, তিনি দেশে ফিরছেন। সত্যিই তিনি দেশে ফিরছেন কি না, জানতে চাইলে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আসব না তো কী করব। আমি কি মানুষ খুন করেছি যে বাড়ি ফিরব না? আমি দেশে আসতেছি। এখন হিথ্রো বিমানবন্দরে আছি।’
বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে, আপনি আর দেশে ফিরছেন না। জবাবে তিনি বলেন, ‘কেন আসব না! আমার বাড়ি, আমার মানুষের কাছে না ফিরে আমি কোথায় যাব। আমি ঢাকায় ফিরব।’ কবে আসছেন? ‘দু-এক দিন লাগতে পারে। আমার প্রচুর জার্নি হয়েছে। আসতে দু-তিন দিন লাগবে।’
তাঁকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে নিয়ে কিছু হচ্ছে না। আমি ভালো আছি, সুস্থ আছি, জীবিত আছি।’
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার প্রধানমন্ত্রী আমাকে মন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি নিয়োগ দিতে পারবেন আর যদি বাদ দিতে চান, তা পারবেন না কেন? উনি আমার প্রধানমন্ত্রী। সেটা তাঁর বিবেচনা। এ নিয়ে অস্থিরতার কী আছে! আমি তাঁকে নেতা মানছি, মানব, মেনে যাব। পরিস্থিতি এমন যে ‘মেয়ের বাপের চিন্তা নাই, পাড়া-পড়শির ঘুম নাই।’
পদত্যাগ করেছেন বা পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার নেতা আমাকে যেভাবে নির্দেশ দেবেন, যা নির্দেশ দেবেন—সেটাই করব। আমার নেতা, আমার দল সম্পর্কে আমি কখনো বিরূপ কিছু বলব না।’
পবিত্র হজ নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যে দেশে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে—এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া কী, জানতে চাইলে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার নেতার নির্দেশ ছাড়া আমি এ ব্যাপারে কোনো মতামত দিতে পারব না। আমি যুক্তরাষ্ট্রে কোথায় কী বলেছি, সেটা নিয়ে যা হয়েছে, অপব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাই আমি এখন আর বেশি কিছু বলতে পারব না।’
৩ অক্টোবর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা ও দল থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘তাহলে তো জানেনই। আবার জিজ্ঞেস করছেন কেন? প্রধানমন্ত্রী আমার দলনেতা, মন্ত্রিসভার প্রধান, তিনি কী করবেন সেটা তাঁর বিষয়। আমি ঘরোয়া বক্তব্য দিয়েছি তাতেই এত অস্থিরতা, আর এখন এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না গণমাধ্যমে।’
আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালে ৪৬টি প্রতিষ্ঠান বিক্রি বা হস্তান্তরে অনিয়ম হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের যে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখন কোনো জবাব দেব না। এখনো আমি মন্ত্রিসভার সদস্য আছি। আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হলে আদালতে বলব। সাংবাদিকদের কেন বলব?’
গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতির সঙ্গে মতবিনিময়ে লতিফ সিদ্দিকী হজ, তাবলিগ জামাত, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও সাংবাদিকদের সম্পর্কে নানা মন্তব্য করেন। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে, এমনকি শাসক দলেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ৩ অক্টোবর গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁকে মন্ত্রিসভা ও দল থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।