দুঃখগাথা হয়েই রইল

Slider খেলা

 e5f439a23e6fe684b86fc38e0c44245f-end

ঢাকা; কত কাছে, তবু কত দূরে! ৩৩ পেলেই পাস! কিন্তু একেকটি রান তোলা তো হিমালয়ের পথ পাড়ি দেওয়ারই সমান। সেই কাজটা আর হয়ে ওঠা হলো না। শেষ পর্যন্ত ২২ রানে চট্টগ্রাম টেস্ট জিতে নিল ইংল্যান্ড। সাব্বির রহমান এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখলেন, বেন স্টোকসের এক ওভারে কীভাবে পরপর ফিরে গেলেন তাইজুল, এরপর শফিউলও। ২৮৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ২৬৩ রানে অলআউট হলো বাংলাদেশ।
এমন লড়াইয়ে ভাগ্যকেও পাশে পাওয়া লাগে। তার কিছুটা বাংলাদেশ পেয়েছেও। আজ পঞ্চম দিনের শুরুতেই যেন ভাগ্য পায়ে পাওয়ার আভাসটা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুটা দুর্ভাগ্য, কিছুটা আম্পায়ারের প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত, কিছুটা ডিআরএস নিয়ে ভ্রান্তি; যে ভ্রান্তি রিভিউ পদ্ধতি নিয়ে এত দিন ধরে চলা প্রশ্নটাকে বাংলাদেশি সমর্থকদের মনেও গেঁথে দিয়েছে; আর সবচেয়ে বড় ভুল হয়তো নিজেদের রণকৌশলেই-সব মিলিয়ে ২ উইকেট হাতে রেখে ৩৩-এর সমীকরণ মিলিয়ে দেওয়া গেল না।
এত কাছে গিয়েও টেস্ট হারা! এত দিন পর খেলতে নামা দলটার কাছ থেকে কেউ হয়তো এত লড়াই আশা করেনি। খোদ কোচ হাথুরু গতকালও বলে গেছেন, তিনি নিজেও ভাবেননি দল জয়ের মতো অবস্থায় থাকবে। কিন্তু এও তো সত্যি, শেষ পর্যন্ত এর সবই সান্ত্বনা ছাড়া আর কিছুই নয়। শেষ পর্যন্ত এটি পরাজয়ই। ১৩ বছর আগে মুলতানের দুঃখ মোছার সুযোগটা হাতছাড়া তো হলোই, প্রায় শুকিয়ে যাওয়া সেই ক্ষতে উল্টো শুরু হলো নতুন রক্তক্ষরণ।
মাত্র ৩ ওভার ৩ বলের মধ্যেই সকল আশার সমাধি। অথচ দিনটা কী প্রত্যয় নিয়েই না শুরু করেছিল বাংলাদেশ। স্টুয়ার্ট ব্রডের করা দিনের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে ২ রান। সাব্বিরের শটে ফুটে বেরোচ্ছিল সকালের রোদ্দুরের ঝলমলে আত্মবিশ্বাস। পরের বলেই ১ রান। এ-ই রণকৌশল! দুটি বল কেবল পার করে দিতে হবে তাইজুলকে।
কিন্তু এরপরই হিসাবের গরমিল। স্টোকসের দ্বিতীয় বলেই রান নিয়ে স্ট্রাইকিংয়ে তাইজুলকে এনে দিলেন সাব্বির। গতকালও জুটিতে তাইজুলই বেশি বল খেলেছেন। রানও ছিল বেশি। কিন্তু প্রতিটা ডেলিভারিতে তাঁর অস্বস্তি ছিল স্পষ্ট। রান তোলা জরুরি। কিন্তু সবচেয়ে জরুরি ছিল ঝুঁকি নেওয়ার হিসাবটা ঠিকমতো কষা। সারাটা দিন যেখানে পড়ে আছে।

তাইজুল প্রথম বলেই প্যাডে লাগিয়ে চার এনে দিলেন। সবকিছুই চলছে পক্ষে। পরের তিনটা বল ঠেকিয়েও দিলেন। দিনের দুই ওভারেই ৮ রান তুলে ফেলল বাংলাদেশ। ব্রডের পরের ওভারের তৃতীয় বলে সাব্বির এক নিলেন। তা নেবেনই। আবারও মাত্র তিনটি বলই তো ঠেকালেই হয় তাইজুলের। কিন্তু ওই ওভারের শেষ বলে বাংলাদেশ নিয়ে নিল ১ রান! তাইজুল ফিরলেন স্ট্রাইকে! যে এক রানের লোভ সামলানোই উচিত ছিল।
সেটি টের পেতে মাত্র এক বল লাগল। স্টোকসের নতুন ওভারের প্রথম বলে এলবিডব্লুর জোরালো আবেদন নাকচ হলে গেল। কিন্তু ধর্মসেনা না বলেছেন বলেই হয়তো রিভিউয়ে আশা জাগল ইংল্যান্ডের। কিন্তু স্টোকসের নিজেরই ভঙ্গি বলে দিচ্ছিল, বলটা লেগ স্টাম্পের বাইরে যাবে বলে হয়তো শঙ্কা তাঁরও। কিন্তু এই টেস্টে আরও একবারের মতো ক্ষমার ভঙ্গি করে আগের সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নিয়ে তর্জনী তুলে দিলেন ধর্মসেনা। ১৬ করে ফিরে গেলেন তাইজুল। বাকি রইলেন কেবল শফিউল। আর ননস্ট্রাইকিং প্রান্তে সাব্বির!
সাব্বিরকে শেষ পর্যন্ত নীরব দর্শক হয়েই থাকতে হলো। স্টোকসের ওই ওভারের তৃতীয় বলে আবারও জোরালো আবেদন। এবার ধর্মসেনা আঙুল তুলে দিলেন। হক আই দেখাল, বল প্যাডে লাগার সময় পা অফস্টাম্পের বাইরেই ছিল। ক্রিকেটের নিয়ম বলছে, নট আউট। কিন্তু ক্রিকেটেরই আরেকটি নিয়ম, ব্যাটসম্যান কি বলটা শুধু পায়ে লাগিয়ে ঠেকাতে চেয়েছিলেন, নাকি শটও খেলতে চেয়েছিলেন? যদি শুধু পা দিয়ে ঠেকাতে চান, অফস্টাম্পের বাইরে পা থাকার সময় বল প্যাডে লাগলেও আউট, বলের গতিপথ যদি গিয়ে শেষ পর্যন্ত স্টাম্পে গিয়ে লাগে।
শফিউল ব্যাট ব্যবহার করছেন। একটু দেরিতেই। কিন্তু ধর্মসেনার মনে হয়েছে, শফিউল শট খেলতে চাননি। আর এ ধরনের রিভিউয়ে মাঠের আম্পায়ারের ভাবনাটাই আগে প্রাধান্য পায়। তৃতীয় আম্পায়ারও তাই দিয়ে দিলেন আউট। অথচ, হয়তো হয়তো এটি আউট ছিল না। শফিউল ব্যাট ব্যবহার করেছেন। আপনার তা-ই মনে হতে পারে, যদিও এই মনে হওয়ায় কিছুই যায় আসে না।
ইংল্যান্ড তখন উত্সব করছে। আর ওই পাশে একা ৬৪ রানে অপরাজিত সাব্বির তখন পৃথিবীর নিঃসঙ্গতম মানুষ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *