দিনের মাত্র দ্বিতীয় বল ছিল সেটি। আগের রাতে ব্যাটিংয়ে ভরসা হয়ে টিকে ছিলেন। রাতভর বিশ্রাম নিয়ে নতুন করে দিনটা শুরু করবেন। কিন্তু সাকিব খ্যাপাটে ভঙ্গিতে মঈন আলীকে ছক্কা মারতে চলে গেলেন ডাউন দ্য উইকেটে। পড়লেন স্টাম্পিংয়ের ফাঁকে। পুরো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিল ওই একটা মুহূর্ত। সাকিব পরে বল হাতে ৫ উইকেট নিয়েও যা পুষিয়ে দিতে পারছেন না।
ইংল্যান্ডের ৮ উইকেট পড়ে গেছে বটে, কিন্তু লিডটাও ২৭৩ রানের। আগামীকাল বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় কে জানে। এখন পর্যন্ত যা সংগ্রহ, সেটা পার করতেই বাংলাদেশকে অসম্ভব কিছু একটা করে দেখাতে হবে। এশিয়ায় হওয়া ৬১১টি টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে দুই শর বেশি তাড়া করে জেতার ঘটনাই মাত্র ২৬টি। ২৭০-এর বেশি তাড়া করে জয় তো আরও কম। মাত্র ১০টি!
অথচ সাকিব যে সময় আউট হয়েছিলেন, তখন ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের সংগ্রহ ২৯৩ থেকে মাত্র ৭২ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। ৩১ রানে অপরাজিত সাকিব। অনেক দায়িত্ব। দলের সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের নেতৃত্বটা মূলত তাঁরই কাঁধে। কিন্তু নেতাই যেখানে ভুল পথে হাঁটলেন, সেখানে তিনি বাকিদের পথ দেখাবেন কীভাবে!
সাকিবের আউটের পর রীতিমতো হুড়মুড় করেই ভেঙে পড়ল বাংলাদেশের টেল এন্ড। সাব্বির রহমান ও মেহেদী হাসানের ওপর ভরসা ছিল, কিন্তু ব্যর্থ হলেন তাঁরাও। সাব্বিরের ফেরাটা অবশ্য দুর্ভাগ্যজনক। স্টোকসের বলে স্লিপে তাঁর ক্যাচটি অধিনায়ক কুক ধরেছিলেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। টেলিভিশন রিপ্লে দেখেই অবশ্য তৃতীয় আম্পায়ার আউট ঘোষণা করেছেন। তৃতীয় দিনের সকালে বাংলাদেশ খেলল মাত্র ১২ ওভার। তাতে মাত্র ২৭ রান যোগ করে ২৪৮ রানে অলআউট হয়ে ৪৫ রানে পিছিয়ে থাকতে হলো দলকে।
বাংলাদেশের শেষ ৬ উইকেটও পড়েছে ওই ২৭ রানে। এর দায়টা কাল কিছুটা ছিল মুশফিকের কাঁধে। কিন্তু আজ সাকিবের ওই মুহূর্তের ভুলটা এত বড়, হয়তো ইংল্যান্ডকে টেস্টে হারানোর সুযোগ, হয়তো টেস্টেও নতুন এক যাত্রা শুরুর সম্ভাবনাও শেষ হয়ে গেল। ম্যাচ এখনো ঢের বাকি। বাংলাদেশ পারবেই না ধরে নেওয়া হয়তো চরম হতাশাবাদীর লক্ষণ। কিন্তু ইংল্যান্ড ৩০০-র মতো লক্ষ্য বেঁধে দিলে, চতুর্থ ও পঞ্চম দিনের ভাঙা উইকেট আর শরীরের চ্যালেঞ্জ সামলে সেটি পার করে ফেলবে বাংলাদেশ—এতটা ভাবতেও সাহসী আর আশাবাদী হতেই হয়।
সাকিব পাপমোচনের চেষ্টা করলেন বোলিংয়ে। বাংলাদেশ কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডকে আরও কাঁপিয়ে দিল। ৬২ রানেই তুলে নিল ৫ উইকেট। ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ব্যাটিংয়ের ওই মুহূর্তটিকে পেছনে ফেলে সাকিব করলেন দুর্দান্ত বোলিং। এই ৫ উইকেটের তিনটি নিয়ে তিনিই হানলেন মূল আঘাত। বেন ডাকেট, জো রুট ও মঈন আলী—উইকেটগুলোও দামি। পাশাপাশি কুককে মেহেদী ও গ্যারি ব্যালান্সকে তাইজুল ফিরিয়ে দিলে আবারও আশা জেগেছিল।
কিন্তু সেই স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন বেন স্টোকস ও জনি বেয়ারস্টো। খুব ধীরে-সুস্থে টেস্টের লাগামটা টেনে নিলেন নিজেদের দিকে। ১২৭ রানের জুটি গড়লেন চাপের মুখে। স্টোকস ১৫১ বলে ৮৫ করলেন, বেয়ারস্টো করলেন ৪৭।
বাংলাদেশের জন্য মানসিক যন্ত্রণা হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙলেন কামরুল ইসলাম রাব্বী। রাব্বীর বলে প্লেড অন বেয়ারস্টো। স্টোকসকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেললেন সাকিব। তবে এই দুজন সাজঘরে ফেরার আগে যা সর্বনাশ করার করেই গেছেন।
টেস্টের এখনো দুই দিন বাকি। কিন্তু বাংলাদেশ তরফে এই মুহূর্তে এই টেস্টের একটাই হাইলাইটস—ইশ্, সাকিব যদি ওই শটটা না খেলতেন…!