উত্তরবঙ্গে  বিপাকে পরীক্ষার্থীরা

Slider সারাদেশ

 ad680b4e608017a6cb29feb7bf2c6e3d-bogura

বগুড়া প্রতিনিধি ; পূর্বঘোষণা ছাড়াই আজ বুধবার উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের বাস মালিক ও শ্রমিকেরা। বগুড়ার বাস মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে সিরাজগঞ্জ বাস মালিক-শ্রমিকদের বিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটে। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে যাত্রীরা। বিশেষ করে আগামী শুক্রবার অনুষ্ঠেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ ​বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার্থীরা ​বিপা​কে পড়েছেন।
উত্তরবঙ্গ-ঢাকা মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনা থেকে যাত্রীবাহী সব বাসকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আজ সকালে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে বগুড়ার মালিকদের কয়েক শ দূরপাল্লার বাস উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রী নিয়ে রওনা দিয়ে সিরাজগঞ্জে এসে বাধার মুখে পথে আটকে থাকে।

জানা গেছে, সকাল থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত দেড় শতাধিক বাস মহাসড়কে আটকে থাকে। কিছু বাস বগুড়ার ঠনঠনিয়া কোচ টার্মিনালে ফিরে এসে যাত্রী নামিয়ে দিয়েছে। হঠাৎ এ ঘটনায় চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে যাত্রীরা। এসব বাসের বেশির ভাগ যাত্রীই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার্থী। মাঝরাস্তায় বাস থেকে নামিয়ে দেওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন ভর্তি পরীক্ষার্থীরা। আগামী শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিট এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে দূরপাল্লার বাসে ঢাকায় যাচ্ছিলেন তাঁরা।

সকাল আটটায় নওগাঁ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের একটি বাসে রওনা দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন ভর্তি পরীক্ষার্থী।

পরীক্ষার্থী পৃথা মজুমদার বলেন, শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের ওই বাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীই ছিলেন ১০ জনের মতো। সকাল ১০টার দিকে বাসটি সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনায় পৌঁছালে সেখানে আটকে দেওয়া হয়। পরে বাস থেকে যাত্রীরা নেমে দেখতে পান, অর্ধশত বাস রাস্তায় আটকে আছে। ঘণ্টা খানেক অপেক্ষার পর বাসটি যাত্রী নিয়ে বগুড়ার শেরপুরে এসে নামিয়ে দেয়।

শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের আরেকটি বাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ জন ভর্তি পরীক্ষার্থী বগুড়া থেকে সকালে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। বেলা ১১টার দিকে বাসটি সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনায় বাধার মুখে পড়ে। দুপুর ১২টার দিকে বাসটি বগুড়ার ঠনঠনিয়া কোচ টার্মিনালে এসে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা এসব শিক্ষার্থী জানান, শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা। কাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছাতে হবে। এমনিতেই আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের কারণে আগামী বৃহস্পতিবার বাসের টিকিট মিলছে না। এখন রিজার্ভ বাসও ঢাকায় যেতে দিচ্ছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার্থী ফারজানা সুলতানা বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই হুট করে মাঝরাস্তায় বাস আটকে দিয়ে চরম অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের শত শত ভর্তি পরীক্ষার্থী মাঝরাস্তায় চরম বিপাকে পড়েছেন। অথচ প্রশাসনের কোনো টনক নড়ছে না।

বগুড়ার মোটর মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ভোর থেকে বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, পাবনার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া দেড় শতাধিক বাস মহাসড়কের চান্দাইকোনা থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে সিরাজগঞ্জের বাস মালিক-শ্রমিকেরা।

বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, সিরাজগঞ্জ বাস মালিক সমিতির দুটি বাস এত দিন নওগাঁ সড়কপথে চলছিল। তারা নতুন করে আরও দুটি বাস একই সড়কপথে চালাতে চায়। বিনিময়ে বগুড়া মালিক সমিতিও নতুন করে দুটি বাস সিরাজগঞ্জের অভ্যন্তরীণ সড়কে চালাতে চায়। কিন্তু সিরাজগঞ্জ বাস মালিক সমিতি এতে রাজি নয়। আলোচনা ছাড়াই হুট করে আজ সকাল থেকে বগুড়ার মালিকদের দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ সব ধরনের বাস সিরাজগঞ্জ থেকে ফিরিয়ে দিচ্ছে সেখানকার বাস মালিক-শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে এসব বাস বগুড়ায় ফিরে এসেছে। যাত্রীদের বেশির ভাগই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার্থী হওয়ায় বিষয়টি সিরাজগঞ্জের পুলিশ প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান মুঠোফোনে  বলেন, বিষয়টি নিয়ে বৈঠক চলছে। সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ মুঠোফোনে  বলেন, সিরাজগঞ্জের মালিকেরা বাস আটকেছেন সত্যি। তবে সব বাস নয়। শুধু বগুড়ার মালিকদের বাস তাঁরা আটকে রেখেছেন। এটা পরিবহন মালিকদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বগুড়ার মালিকদেরও সমঝোতায় এগিয়ে আসতে হবে। বাস চলাচল বন্ধ হলে যাত্রী দুর্ভোগ হবেই। সেখানে ভর্তি পরীক্ষার্থী থাকলেও সেটা দেখার বিষয় পুলিশের নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *