জাতীয় পার্টির গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন!

Slider রাজনীতি

528e1c3f9bf30-ershad

ঢাকা; রাজনৈতিক গুরুত্ব হারাচ্ছে একই সঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টি (জাপা)। সংসদে বিরোধী দল হিসেবে জাপার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। সফরে আসা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় অতিথিরাও দলটিকে পাত্তা দিচ্ছেন না। এ নিয়ে দলের ভেতরেও নানামুখী আলোচনা তৈরি হয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ঢাকা সফরে এসে সংসদের বাইরে থাকা দল বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করলেও বিরোধী দল জাপার সঙ্গে কোনো বৈঠক করেননি। এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সফরেও জাপা বা বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি। কেরির একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা মনে করছেন, এসব কারণে রাজনীতির মাঠে জাপা গুরুত্ব হারাচ্ছে। এমনিতে সাধারণ মানুষ জাপাকে বিরোধী দল হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছে না। এ ধরনের ঘটনা দলকে আরও গুরুত্বহীন করে তুলছে। এটি দলের জন্য একধরনের অশনিসংকেত। তাঁরা এ জন্য বিরোধীদলীয় নেতার উপদেষ্টা ফখরুল ইমাম ও হেলালউদ্দিনকে দায়ী করেছেন। তাঁদের দাবি, এঁরাই বিরোধীদলীয় নেতার কর্মসূচি নির্ধারণ করেন। তবে ফখরুল ইমাম এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
জানতে চাইলে জাপার কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের  বলেন, চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোনো বৈঠক না হওয়ায় তিনি হতাশ হয়েছেন। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্কের ভিত তৈরি করেছিলেন জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তাঁর শাসনামলে প্রথমবারের মতো চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে এসেছিলেন। এরশাদ ছয়বার চীন সফর করেছেন। এবার চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোনো বৈঠক না হওয়ায় বোঝা যাচ্ছে যে জাপাকে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে না। চীন বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি বড় বিনিয়োগ করছে, সরকারের বা রাজনীতির পটপরিবর্তন হলে যেন বিনিয়োগ ঝুঁকিতে না পড়ে, সে জন্য রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে চীন একটা সুসম্পর্ক রাখতে চায়। সেখানে চীন জাপার সঙ্গে বৈঠক করেনি কিন্তু বিএনপির সঙ্গে করেছে। এটি জাপার জন্য একটা সংকেত। জাপার রাজনৈতিক গুরুত্ব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কমে যাচ্ছে। সেটা থেকে উত্তরণের জন্য কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। এর একটা কারণ হলো জাপার সংগঠন আছে, কিন্তু রাজনীতির স্বচ্ছতা নেই বলে গ্রহণযোগ্যতা কমছে। মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না।

দলটির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ নিজেও মনে করেন, মানুষ তাঁর দলকে বিরোধী দল হিসেবে গণ্য করে না। গত ৩ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এরশাদ বলেছিলেন, জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল হিসেবে গণ্য করা হয় না। এই ‘ইমেজ সংকটের’ কারণে পৌর নির্বাচনে মানুষ জাপার প্রার্থীকে ভোট দেয়নি। দলটির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য  বলেন, জন কেরি এবং সি চিন পিংয়ের সফর এ সত্যটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এটি জাপার জন্য লজ্জার। সাধারণ মানুষেরা অনেকে হাসিঠাট্টা করছে।
জাপার একাধিক নেতা জানান, সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেতা বা জাপার বৈঠক না হওয়ায় দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। সির সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করতে না পারাকে জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদপন্থীদের ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে রওশন-বিরোধীরা দলের ভেতরে সরব রয়েছেন। দলের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে জাপার বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু এরপর দুজন গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বনেতার সফরে তা হয়নি। কারণ, জাপার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যথাযথভাবে বৈঠকের বিষয়ে ‘অ্যাপ্রোচ’ করতে পারেননি।

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ  বলেন, জন কেরি ও সি চিন পিংয়ের সঙ্গে দেখা না হওয়া দুঃখজনক। এটি দলের জন্য ভালো নয়। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে বিদেশি অতিথিদের দেখা হতে পারে। কিন্তু সংসদের বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে দেখা না করে সংসদের বাইরের বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে দেখা হওয়াটা তাঁদের দলের (জাতীয় পার্টি) জন্য ভালো হলো না।

দলের প্রেসিডিয়ামের এক নেতা বলেন, তাঁদের দল এরশাদ ও রওশনপন্থী দুটি ভাগে বিভক্ত। বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে আলোচনা ও অন্য বিষয়গুলো রওশনপন্থীরা দেখভাল করেন। এ ক্ষেত্রে এরশাদপন্থীদের সহায়তা চাওয়া হয় না, এ কারণে তাঁদের ভূমিকাও থাকে না।

জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে এসেছিলেন ‘বিজনেস ডিল’ নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে নয়। জাপার সঙ্গে বৈঠক হলে হয়তো দলের শুভাকাঙ্ক্ষীরা খুশি হতেন। বৈঠক না হওয়া মুখরোচক আলোচনার ইস্যু হিসেবে ভালো, কিন্তু এটি রাজনীতির জন্য বড় কোনো ‘ফ্যাক্টর’ বলে তাঁরা মনে করেন না।

জাপার মহাসচিব দাবি করেন, রওশন এরশাদ কয়েক দিন ধরে অসুস্থ থাকায় বৈঠক হয়নি। তবে পার্টির চেয়ারম্যান বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজে অংশ নিয়েছেন। চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সেখানে সাক্ষাৎ হয়েছে। চীনের সঙ্গে জাপার অতীতেও ভালো সম্পর্ক ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *