ডেস্ক রিপোর্ট; ফেসবুকে যোগাযোগ। তারপর প্রেম। সে প্রেমের এমনই টান, দেশ ছাড়তে তৈরি হলেন প্রেমিকা। কিন্তু বিধি বাম। প্রেমিক আর কেউ নন, আইএসের জঙ্গি। প্রেমিকের কাছে যাওয়া তো হলোই না, জঙ্গির সঙ্গে যোগসূত্রের অভিযোগে তরুণীকে দাঁড়াতে হলো আদালতের কাঠগড়ায়।
২০ বছরের এই রুশ তরুণীর নাম ভারভারা কারাওলোভা। যাঁর সঙ্গে প্রেম, তিনি এখন সিরিয়ায়। দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে আইএসের হয়ে লড়ছেন।
মস্কো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের ছাত্রী কারাওলোভা। রাশিয়ার নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর এই তরুণী যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তাঁর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। আর আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যেই রায় ঘোষণা হওয়ার কথা।
সিরিয়ায় আইএস বাহিনীতে যোগ দেওয়া বিদেশি যোদ্ধাদের একটি বড় অংশ রাশিয়ার। মস্কো দাবি করে, আইএসবিরোধী অভিযানে রাশিয়া ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশগুলোর ২ হাজার ৭০০ নাগরিক মারা গেছে।
সিরিয়ায় আইএসবিরোধী যুদ্ধে বাশারের পক্ষে বিমান হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। সমাজকে একটি সতর্কবার্তা দিতে কর্তৃপক্ষ এই তরুণীর বিচার করছে বলে সমর্থকেরা মনে করছেন।
আদালতে কারাওলোভা জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়। ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা। তবে পছন্দের এই মানুষটি বিভিন্ন নাম ব্যবহার করতেন। কখনো ভ্লাদ, কখনো আরতুর সোকোলোভ, আবার কখনো আদম। পরে জানা যায়, তাঁর প্রকৃত নাম আইরাত সামাতোভ। তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়ার এই নাগরিক সিরিয়ায় আইএস যোদ্ধা হিসেবে লড়ছেন।
নিজেকে নির্দোষ দাবি করে কারাওলোভা বলেন, তিনি শুধু ভালোবেসেছেন। যুদ্ধে জড়ানোর কোনো ইচ্ছা তাঁর ছিল না। শুধু ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে থাকতে চেয়েছেন। তবে আদালতে তাঁর নাম আলেকজান্দ্রা ইভানোভা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। গণমাধ্যমের নজর এড়াতে নাম পাল্টানো হয়েছে বলে জানানো হয়।
বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানায়, ৫ অক্টোবর বিচারকালে কারাওলোভা বলেন, ‘আমি কোনো কিছুতে যোগ দিইনি। আমি কোনো সন্ত্রাসী নই। আর এমন কোনো ইচ্ছেও আমার ছিল না।’
কারাওলোভার আইনজীবী সার্গে বাদামশিন এএফপিকে বলেন, যেখানে আমাদের দেশে সন্ত্রাসীদের পরিবারের সদস্যদেরও কোনো শাস্তি পেতে হয় না, সেখানে এ ধরনের বিচার একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা কারাওলোভা ২০১৫ সালের ২৭ মে নিখোঁজ হন। এরপর তাঁর বাবা পুলিশকে বিষয়টি জানান। এরই মধ্যে তুরস্কে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন তিনি। সঙ্গে ছিলেন বেশ কয়েকজন নারী। তাঁরা তুর্কি সীমান্ত পেরিয়ে সিরিয়ায় ঢোকার চেষ্টা করছিলেন।
তবে সিরিয়ায় আর যাওয়া হয়নি কারাওলোভার। ফিরিয়ে আনা হয় রাশিয়ায়। এ নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা। তদন্তকারীরা প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন, কারাওলোভা কোনো অপরাধ করেননি। ছয় মাস পর এই তরুণীকে আটক করা হয় এবং অভিযুক্ত করা হয়।