ব্রিকস-বিমসটেকের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

Slider জাতীয় সারাদেশ

file

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিকস-বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর টেকসই উন্নয়ন, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সংস্থা দু’টির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় এই দুই সংস্থার সদস্য দেশগুলোকে একত্রে কাজ করারও আহ্বান জানান। রোববার ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সামিটে ভাষণকালে নি¤œ আয়ের দেশগুলোর সুযোগ-সুবিধার দিকে বিশেষ নজর দিতে ব্রিকস নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, টেকসই উন্নয়নে আমাদের সব প্রচেষ্টা শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভরশীল।
শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের যে কোন কর্মকা-ে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে। এই সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদ দমনেও আমাদের হাত মেলাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের অন্যতম প্রধান ও অর্থনীতির দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত ব্রিকস এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর ফোরাম বিমসটেকের আউটরিচ সামিটে যোগ দিতে ভারতের গোয়ায় অবস্থান করছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দুই গ্রুপের মধ্যে সহযোগিতার লক্ষ্যে পারস্পরিক সম্ভাব্যতা ও যৌথ কর্মপন্থা আমরা কিভাবে নির্ধারণ করবো তার স্বাক্ষর রাখার এটা এক সুযোগ ও যথার্থ সময়। ১৯৯৭ সালে বিমসটেক গঠনের উদ্দেশ্যের কথা উল্লেখ করে সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শেখ হাসিনা বলেন, সম্ভাবনাময় বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়নে এই ফোরাম গঠন করা হয়। এই অঞ্চল কৌশলগতভাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগসস্থলে অবস্থিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ অঞ্চলের দেশগুলোতে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এ অঞ্চলে রয়েছে কর্মক্ষম যুবশক্তি যা আগামী কয়েক দশক পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। শেখ হাসিনা বলেন, বিমসটেক অঞ্চলে ৩০০ গিগাওয়াটের বেশি হাইড্রোইলেকট্রিক এবং বঙ্গোপসাগরের বিপুল সমুদ্র সম্পদের সম্ভাবনা রয়েছে। এই সমুদ্র সম্পদের এখনো আহরণ ও বিশদ বর্ণনা তৈরি করা হয়নি। টেকসই উন্নয়নের জন্য আমরা রূপান্তরের এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ, উন্নয়ন, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিমসটেক দেশগুলোর অর্থায়নে একই ধরনের সুযোগ রয়েছে। সম্ভাবনার সুযোগ গ্রহণে এবং আমাদের চ্যালেঞ্জ মেকাবিলায় ব্রিকস এবং বিমসটেক উভয়ের জন্য বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমসটেকের বৃহত্তম অংশের জন্য মানসম্মত ও স্থিতিস্থাপক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর প্রয়োজন এফডিআই থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ, উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন ইকুয়িটি বিনিয়োগ এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন দেশব্যাপী একশত অর্থনৈতিক জোন (ইজেডএস) উন্নয়ন করছে। যা বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।
তিনি বলেন, হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, ইলেকট্রনিক সিটির কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে, সেখানে বিনিয়োগকারীরা বিপুল সম্ভাবনার সুযোগ নিতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা আপনাদের আশ্বাস দিতে পারি, আমাদের নীতিমালা এবং সুযোগ-সুবিধা প্রতিযোগিতামূলক এবং পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ও নীতি পরিবেশ সহায়ক।
ব্রিকস কাঠামোর অধীনে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিন্ম আয়ের দেশগুলোর সম্ভাবনার প্রতি বিশেষ নজর দেয়ার জন্য ব্রিকস দেশগুলোর প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী সক্ষমতার উন্নয়নে বিমসটেক অঞ্চলের নজর দেয়ার প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব এখন জ্ঞান অর্জনের প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করেছে। আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য চাষাবাদে প্রযুক্তি সুবিধা, পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তন মেকাবিলায় আমাদের উন্নত প্রযুক্তি গ্রহণ করা প্রয়োজন। ব্রিকস এবং বিমসটেক উভয়ই টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে আলাপ-আলোচনায় যুক্ত হতে পারে। এটি বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের প্রবণতা রীতির সঙ্গে আমাদের মূল্য ও বাজার সমতার সংযোগের জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে।
আঞ্চলিক পরিবহন যোগাযোগ প্রক্রিয়া দ্রুততর করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এডিবি’র সক্রিয় সহযোগিতায় পরিবহন যোগাযোগ সংক্রান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপ পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখবে।  যোগাযোগ সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমস্টেক একটি উপকূলীয় জাহাজ চুক্তির কথা বিবেচনা করতে পারে। তিনি সুষ্ঠু উপ-আঞ্চলিক গ্রিড সংযোগ ও জ্বালানি বাণিজ্যের স্বার্থে অবিলম্বে গ্রিড ইন্টারকানেকশন সংক্রান্ত একটি এমওইউ স্বাক্ষরের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ও সহিংসতায় তাঁর উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে বলেন, সকল প্রকার সন্ত্রাস নির্মূলে বিমস্টেক নেতাদেরকে সুদৃঢ় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *