ঢাকা; আগস্টে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সফরের সময় গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ। কেরির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের কথা জানিয়ে পাঠানো হয়েছিল ওই বিজ্ঞপ্তি। বিরোধী দলের নেতার প্যাডে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তুও। কিন্তু ঘটনা ছিল ভিন্ন। কেরির সফরে নির্ধারিত কোনো সাক্ষাৎ সূচি ছিল না বিরোধী দলের নেতার। তার সাক্ষাতের জন্য কয়েক দফা চেষ্টাও করা হয়েছিল জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে। কিন্তু সেই সূচি মিলেনি। ওই সময়ে ধানমন্ডির ইএমকে সেন্টারে আয়োজিত তরুণদের এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন রওশন। ওই অনুষ্ঠানে মার্কিন দূতের মাধ্যমে নিজের ভিজিটিং কার্ড পাঠিয়ে কেরির সঙ্গে কুশল বিনিময়ের সুযোগ পেয়েছিলেন জাতীয় পার্টির নেত্রী। আর ওই কুশল বিনিময়ের ঘটনাকে বৈঠক বলে দেয়া হয়েছিল কল্পিত বিজ্ঞপ্তি। সে সময় বিরোধী দলের নেতার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছিল রওশন এরশাদের নির্দেশনাতেই পাঠানো হয়েছিল ওই বিজ্ঞপ্তি। রওশনকে সময় না দিলেও কেরি সে সময় পৃথক বৈঠক করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে। তখনকার এ ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। দুই মাসের মাথায় ফের একই ধরনের আলোচনার কেন্দ্রে বিরোধী দলের নেতা। এবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গেও সাক্ষাতের সুযোগ মেলেনি তার। অথচ সংসদের বাইরে থাকা দল বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন শি জিনপিং। তবে এবার বিরোধী নেতার পক্ষ নিশ্চুপ। মন খারাপ রওশন এরশাদেরও। শুক্রবার রাতে বঙ্গভবনে চীনা প্রেসিডেন্টকে দেয়া নৈশভোজের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। এ অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদকে। জাতীয় পার্টির দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে চীনা নেতার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বিরোধী দলের নেতার পক্ষ থেকে চেষ্টাও করা হয়েছে। তবে তারা সে সুযোগ পাননি। এ কারণে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেও হতাশা দেখা দিয়েছে। নেতারা বলছেন, সংসদে বিরোধী দলে থাকা দলটি আদতে যে কার্যকর কোনো বিরোধী দল নয় গত দুটি ঘটনায় আরো বেশি স্পষ্ট হয়েছে। একই সঙ্গে বিরোধী দল হিসেবে জাপা নিজেদের অবস্থানও যে তুলে ধরতে পারেনি তারও বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এ ঘটনায়। এ ঘটনাকে দলের কূটনৈতিক ব্যর্থতা বলেও দেখছেন অনেকে। দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, চীনা প্রেসিডেন্ট বা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীই শুধু নয়, বাংলাদেশ সফরে আসা বিদেশি অতিথিদের কাছ থেকেও তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না জাতীয় পার্টি। এ বিষয়ে এর আগে নিজ দপ্তরের কর্মকর্তাদের ওপর রওশন এরশাদ ক্ষোভ ঝাড়েন বলেও গণমাধ্যমে খবর আসে। গত নির্বাচনের পর থেকেই বিরোধী দল হিসেবে আলোচনার কেন্দ্রে জাতীয় পার্টি। একই সঙ্গে সরকার এবং বিরোধী দলে অংশ নিয়ে উদ্ভট এক অবস্থান নেয় দলটি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে এমন অবস্থান বিরল। কোনো দল সরকারি সুবিধা নিয়ে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে পারে না। দলটির এমন অবস্থান নিয়ে বিরোধ রয়েছে খোদ দলের ভেতরেই। অনেক নেতা বলছেন, দ্বৈত অবস্থান থেকে না সরলে ক্রমে বিলীন হবে সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের হাতে গড়া এ দলটি। দলের এই দ্বৈত ভূমিকার মূলে পার্টি চেয়ারম্যানের ভূমিকাকেও বড় করে দেখছেন নেতাকর্মীরা। এরশাদ নিজে বলে আসছেন সরকারে থেকে প্রকৃত বিরোধী দল হতে পারবে না জাতীয় পার্টি। মন্ত্রিসভা থেকে দলের নেতাদের সরিয়ে আনার বিষয়ে কয়েক দফা ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। যদিও তিনি কোনো বক্তব্যেই স্থির থাকেন না বেশিদিন।