ঢাকা; প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। একই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে ২৬টি চুক্তি সই হয়েছে। বিকাল ৩টার কিছু আগে প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে পৌঁছান চীনা প্রেসিডেন্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানান। এরপর তার কার্যালয়ের লেভেল ওয়ানের শিমুল কক্ষে একান্ত বৈঠকে অংশ নেন হাসিনা-জিন পিং। একান্ত বৈঠক শেষে চামেলি কক্ষে দুই শীর্ষ নেতা ও প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। সেখানে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ঘন্টাব্যাপী আলোচনার পর দুই নেতার উপস্থিতিতে চুক্তিগুলো সাক্ষরিত হয়। চুক্তি সইয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে চীনের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তি ফলক উন্মোচন করেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের কর্ণফূলি নদীর নিচে টানেল এবং চীনের জন্য প্রস্তাবিত ইকোনমিক জোন রয়েছে। পরে দুই নেতা ভাষণ দেন।
বাংলাদেশ চীনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার-শি জিনপিং: দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা পৌঁছে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, তার দেশ বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চেলের ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার’ বলে মনে করে। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত দৈনিক চায়না ডেইলির এক খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর এক বিবৃতিতে শি জিনপিং এ কথা বলেন। বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বলেন, পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থার সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার জন্য আমরা প্রস্তুত। দুই দেশের সহযোগিতার সম্পর্ককে আমরা আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে চাই। বিবৃতিতে শি জিনপিং বলেন, ৪১ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কের ইতিহাসে বাংলাদেশ ও চীনের বন্ধুত্ব সব সময়ই সামনের দিকে এগিয়েছে। রাষ্ট্রের সমৃদ্ধির জন্য চীন ও বাংলাদেশকে উন্নয়নের একই চ্যালেঞ্জের পথে হাঁটতে হচ্ছে মন্তব্য করে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ওই শীর্ষ নেতা বলেন, তার দেশের মানুষ এক ‘মহৎ রূপান্তরের’ জন্য কাজ করছে। আর বাংলাদেশ কাজ করছে ‘সোনার বাংলা’ গড়তে। শি জিনপিং রাষ্ট্রীয় সফরে দুপুর ১১টা ৩৬ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বিমানবন্দরে বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতা তাকে স্বাগত জানান। রাষ্ট্রীয় এই অতিথিকে ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে লাল গালিচা অভ্যর্থনা জানানো হয়। তাকে বহনকারী বিমানটি বাংলাদেশের আকাশ সীমায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বিমানবাহিনীর দু’টি জেট এসকট করে বিমানবন্দর পর্যন্ত পৌঁছে দেন। রাষ্ট্রীয় অভ্যথৃনার অংশ হিসাবে সশস্ত্র বাহিনীর একটি সুসজ্জিত একটি দল প্রেসিডেন্টকে গার্ড অফ অনার প্রদান করে। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও চীনা প্রেসিডেন্ট পাশাপাশি দাড়িয়ে অনার গ্রহণ করেন। চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেশটির ১৩ সদস্েযর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছে। সেই দলে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা ছাড়াও কয়েকজন মন্ত্রী রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে হেটেলে ফেরার পর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হবে। তারকা হোটেল লা মেরিডিয়ানের প্রেসিডেন্ট স্যুট সংলগ্ন রাঙ্গামাটি কক্ষে পৃথক ওই সাক্ষাত হওয়ার কথা রয়েছে। সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান মো. আবদুল হামিদ ও শি জিনপিং। সফররত প্রেসিডেন্টের সম্মানে নেশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন প্রেসিডেন্ট। শনিবার সকালে সাভারে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন চীনের প্রেসিডেন্ট। এর পরপরই ঢাকা ছেড়ে ভারতের উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি।