গ্রাম বাংলা ডেস্ক: সাকিব আল হাসান ও উম্মে আহমেদ শিশির সাকিব আল হাসান এই বাড়িতে থাকেন? দারোয়ান নিতান্ত অনিচ্ছার সঙ্গে মাথা ঝাঁকাল ‘জি। এই বাড়ি।’ যাক, ঠিকানায় ভুল নেই তাহলে। সন্ধ্যা নেমেছে একটু আগে। বনানীর এই দিকটায় বেশ সুনসান। লিফটে উঠছি আর ভাবছি, সাকিবের দেখা কি মিলবে?
আমাদের আলাপ যে আসলে শিশিরের সঙ্গেই। দুজনকেই পেয়ে গেলে তো সাকিবে-শিশিরে মিলে একদম সোনায় সোহাগা। কসমিক জোভিয়ান নামে একটি দোকান মাস কয়েক আগে চালু হয়েছে ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কে। বিশ্বের নামজাদা সব ব্র্যান্ডের প্রসাধনসামগ্রী মেলে সেখানে। উদ্যোগটা পুরোপুরি সাকিব আল হাসানের স্ত্রী শিশিরেরই হবে, এ আর আশ্চর্য কী! ভুলটা অবশ্য ভেঙেছে অচিরেই। সে কথায় পরে আসছি। আপাতত সামনে সাকিব আল হাসান। হাসিমুখে দরজা খুলে দিয়েছেন তিনি নিজেই। ‘আসেন। কেমন আছেন? বসেন।’ এই পর্যন্ত বলে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ভেতরে নিয়ে বসালেন আমাদের। তারপর ত্বরিত চলে গেলেন ভেতরের ঘরে।
বসার ঘরটা দেখার মতো। মাথার ওপরে জমকালো ঝাড়বাতি। সোফা থেকে ঘরের দেয়াল। আভিজাত্যের ছাপ সবখানে। ঘরের এক কোনায় বিশেষেভাবে নজর কাড়ে বর–কনের জোড়া পুতুল।
ওসব দেখতে দেখতে শিশির চলে এলেন হাসিমুখে।
‘আপনার কাছে পৌঁছানো অনেক কঠিন।’ বলতেই শিশির যেন একটু লজ্জাই পেলেন।
‘না না, মোটেও সে রকম কিছু না। ওপর থেকে দেখলে হয়তো অনেক কিছু মনে হয়। আমরা আসলে খুবই সাধারণ, সহজ আর নরম মনের মানুষ।’ বিনয়ের সঙ্গে বললেন শিশির।
রয়েসয়ে আলাপচারিতা শুরু করব। এর মধ্যেই বসার ঘরে উঁকি দিলেন সাকিব। ‘সময় কিন্তু ১০ মিনিট।’ বলেই আবার হাওয়া হেয় গেলেন ভেতরে।
যা–ই হোক। সময়ের ফাঁড়া মাথায় নিয়েই শিশিরের সঙ্গে আলাপ শুরু।
শুরুটা শিশিরের কসমিক জোভিয়ান দিয়েই ।
প্রসাধনসামগ্রীর দোকান চালু করার ভাবনাটা কীভাবে মাথায় এল?
সাকিব আল হাসান ও উম্মে অাহমেদ শিশির ছোটবেলা থেকে আমি সাজতে পছন্দ করি। মেয়েদের তো সব সময় কসমেটিসক নিয়ে দুর্বলতা থাকেই। আমেরিকায় স্কুলে আমার বান্ধবীরা মোটামুটি ভালোই সাজগোজ করত। ওদের দেখাদেখি আমিও। এমনও হয়েছে সাজগোজ করতে করতে স্কুলে দেরি। বাসায় অনেক বকাও শুনেছি। এখনো শপিং সেন্টারগুলোতে গেলেই কিছু না কিছু কেনা হয়। কসমেটিকস খুব ভালো লাগে। সাকিব অনেক সময় মজা করে বলে, তোমার যত কসমেটিসকস আছে, সেগুলো নিলামে তুললেও অনেক আয় হবে। আমার ইচ্ছেটা ছিল আগে থেকে। সবাই বলতো আমারও কিছু করা উচিত। এবার একটা সুযোগ হলো। সব মিলে করে ফেললাম।
কসমিক জোভিয়ান কি পুরোপুরি আপনারই আইডিয়া?
সাকিব–শিশিরের কসমিক জোভিয়ান। ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কে নিজের পছন্দের সব প্রসাধন পণ্য দিয়েই দোকানটি সাজিয়েছেন শিশির। আমাদের দুজনেরই আইডিয়া। সাকিব আর আমি মিলেই এটা করার কথা ভেবেছি। বাংলাদেশে বিশ্বের ভালো ব্র্যান্ডের মেকআপ সরঞ্জামের নির্ভরযোগ্য কোনো দোকান আমার চোখে পড়েনি। সবাইকেই দেখি বিদেশ থেকে আনার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আমাদের কসমিক জোভিয়ান থেকে সবাই বিশ্বের ভালো কসমেটিকসগুলো পাবে।
মেকআপসহ নাকি মেকআপ ছাড়া—সাকিব আপনাকে কোন রূপে দেখতে বেশি পছন্দ করেন?
মেকআপ ছাড়াই বেশি পছন্দ করে। বেশি মেকআপ করলে উল্টো ও বিরক্ত হয়ে যায়।
সেটা কি মেকআপ করতে বেশি সময় লাগে বলে?
না না! সে রকম কিছু না। বিয়ের আগে থেকেই এ রকম। ও সব সময় বলে, তুমি তো এমনিতেই সুন্দর। আমি অবশ্য সব সময় খুব সিম্পল মেকআপ নিই। হালকা মেকআপ আমার বেশি পছন্দ।
ভেতর ঘর থেকে সাকিব কি টের পেয়ে গেলেন আলাপটা তাঁকে নিয়েই হচ্ছে?
অতএব, আবারও বাংলাদেশের গর্বের ধন সাকিব আল হাসানের আগমন। ‘আমার কোনো দরকার আছে? আমি কি আসব?’ বসার ঘরের দরজা থেকে তাঁর প্রশ্ন।
অবশ্যই। কেন নয়?
কিন্তু চিরচেনা সেই হাসিটা দিয়ে সাকিব এর মধ্যে আবার উধাও। বুঝলাম তাঁকে খুঁজতে যাওয়া বৃথা। অতএব, আমরা আবারও আলাপে ফিরে যাই।
সাকিবেরও তো মাঝে মধ্যে মেকআপ নিতে হয়। কী বলেন?
(হাসি) তা তো নিতে হয়ই। শুটিংয়ে গেলে তো মেকআপ লাগেই। মাঝেমধ্যে ওকে বলি, চলো, তোমার মেকআপ আমিই করে দিচ্ছি।
প্রসাধনসামগ্রীর বেলায় কোন ব্র্যান্ডগুলো আপনার প্রিয়?
অনেক ব্র্যান্ডই তো প্রিয়—শ্যানেল, ম্যাক। স্কিন কেয়ারের জন্য ক্লিনিক অনেক ভালো মনে করি।
সংসারের সব সিদ্ধান্তই কি আপনারা দুজনে মিলে নেন?
হ্যাঁ, আমরা দুজনে মিলেই নিই। সোফা থেকে শুরু করে ঝাড়বাতি—এগুিলো সবই অবশ্য আমার পছন্দ। বাইরে ওই যে ট্রফি রাখার জায়গাটা দেখছেন ওটা শুধু সাকিব নিজে করেছে।
কার পছন্দ বেশি ভালো? আপনার না সাকিবের?
মনে হয় আমার। সাকিব নিজেও এটা স্বীকার করে সব সময়। ও আসলে পছন্দের দিকটায় আমাকে বেশ বিশ্বাস করে। সাকিব কোথায় কী পরে যাবে না যাবে, সেটাও তো আমিই ঠিক করে দিই।
সাকিব আল হাসান ও উম্মে অাহমেদ শিশির ছবি: প্রথম আলোএকটা ‘ভিনটেজ’ বা পুরোনো বনেদি থিম আছে আপনাদের গৃহসজ্জায়। ঝাড়বাতিটা অনেক সুন্দর…
থ্যাংক ইউ। ওটা ঢাকার পল্টন থেকে কেনা। আমি ক্লাসিকস পছন্দ করি। পুরোনো জিনিসপত্রে আমার খুব আগ্রহ। পুরোনো ধাঁচের আসবাব, এমনকি পুরোনো দিনের গানও আমার পছন্দ।
আচ্ছা একটু অন্য দিকে যাই। কেউ কেউ বলে, বিয়ের পর খেলোয়াড়দের নাকি খেলা খারাপ হয়ে যায়। বাংলাদেশের পরম সৌভাগ্য সাকিবের বেলায় সে রকম কিছু হয়নি। কৃতিত্বটা তো আপনাকেও দিতে হবে। নাকি?
আমাদের মধ্যে আসলে খেলা নিয়ে তেমন কথা হয় না। ওর খেলা যদি কখনো খারাপ হয়, সেই দিনটাও অন্য সব দিনের মতো কাটে। ওর আমার মধ্যে এমন সম্পর্ক না যে খেলা নিয়েই সারা দিন কথা বলব। ঘরে এলে আমরা ক্রিকেট নিয়ে খুব একটা কথা বলি না। যদি ওর কোেনা সাপোর্ট লাগে, সেটা আমার দিক থেকে শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করি।
আপনি বড় হয়েছেন দেশের বাইরে। ঢাকায় থাকতে কেমন লাগে?
অনেক ভালো লাগে। এই এলাকাটা থাকার জন্য আমার পছন্দ। ছোটখাটো কিছু সমস্যা ছিল, তবে মানিয়ে নিতে আমার কোেনা সমস্যা হচ্ছে না।
আপনি যখন মাগুরা যান, তখন নিশ্চয়ই আপনাদের দেখতে অনেক িভড় হয়? আপনারা কি গাড়িতে যান?
হ্যাঁ, অনেক মানুষ দেখতে আসে। বিমানে বা হেলিকপ্টারে যাওয়া হয় বেশি। লোকজন আমাদের পছন্দ করে, এটা তো ভালোই লাগে। প্রথমবার যখন গেছি অনেক মানুষ এসেছে। সব মিলিয়ে ভালোই লাগে।
রান্নাবান্না কি এরই মধ্যে শিখে ফেলেছেন?
খুব একটা না। মাঝে কয়েক দিন বুয়া ছিল না। আমিই রান্নাবান্না করেছি। সাকিব যখন কাউন্টি খেলতে ইংল্যান্ডে গেল, ওখানে রান্না করতাম। দুজনে মিলেই রান্নাবান্না করেছি। তখনই মোটামুটি রান্না শেখা হয়েছে। খুব যে ভালো পারি, তা না। এখন মাংস রান্নাটা শিখেছি। ডাল রাঁধতে পারি। নুডলস বানাতে পারি। এই তো।
সাকিব যখন খেলার জন্য দূরে থাকেন, তাঁকে মিস করেন?
আমরা দুজন তো সব সময় একসঙ্গেই থাকি। তাই কোেনা সমস্যা হয় না। আর আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া অনেক ভালো। দেশের বাইরে গেলেও ফোনে–স্কাইপে সারাক্ষণ কথা হয়। তবু মিস তো করিই। কিন্তু বোঝাপড়া ঠিক থাকলে মনে হয় না এটা কোেনা সমস্যা।
আপনাদের পরিচয় সম্ভবত ইন্টারনেটে?
আমি তো ভেবেছি কসমিক জোভিয়ান নিয়ে কথা বলব। আপনি তো সব অন্য প্রশ্ন করছেন। (হাসি) হ্যাঁ, আমাদের পরিচয় ইন্টারনেটে। ফোনে–স্কাইপে কথা হতো। তারপর যখন বাংলাদেশে এসেছি, তো বিয়েই হয়ে গেছে।
এর মধ্যেই শিশিরের ফোন বাজল। ওপাশে সাকিবের মা। শিশির সালাম দিয়ে শাশুড়ির ফোন ধরলেন।
‘এই তো আম্মা ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন? প্রথম আলোতে সাক্ষাৎকার দিচ্ছি…’
শিশির ফোন রাখলেন।
চলুন, কসমিক জোভিয়ানে ফেরত যাই। এটা নিয়ে আপনার সামনের পরিকল্পনা কী?
শুরু থেকেই আমরা অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছি। সামনে ছেলেদের স্কিন কেয়ার, হেয়ার প্রোডাক্টস—এসবও রাখতে চাই। আমি চাই, এসব জিনিস কিনতে যাতে কারও আর বিদেশে যাওয়া না লাগে। আস্তে আস্তে এটাকে বড় করতে চাই।
সাকিব ১০ মিনিট সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। সেটা পেরিয়ে এর মধ্যে ‘এক্সট্রা টাইম’ আলাপই হয়ে গেছে ১৫ মিনিটের মতো।
সাকিব আল হাসান তৃতীয়বার যখন আড্ডায় ফিরলেন, তখন আর তাঁকে দোষ দেওয়া যায় না। একটা প্রশ্ন তাঁকে না করে পারি না।
ঘর সাজানো, আসবাব কেনা—সবই কি স্ত্রীর পছন্দেই হয়?
সাকিব মানলেন। ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ। সব ও–ই করেছে।’
যাক। স্বামী-স্ত্রীর বোঝাপড়া দেখা যাচ্ছে সত্যিই বেশ ভালো।