হিলারিকে জেলে নেয়ার হুমকি, টেপই বলে দেয় ট্রাম্পের পরিচয়

Slider টপ নিউজ সারাবিশ্ব

file

 

ঢাকা; রোববার রাতে পাল্টে গেছে আমেরিকার রাজনীতি। প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ককে দেখা হয় বিশুদ্ধ এক রীতি হিসেবে। এতে প্রার্থীরা দেশের ভবিষ্যত নিয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। কিন্তু রোববার রাতের বিতর্কে ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে এমন কিছু বিষয় উঠে এসেছে যা হতাশাজনক।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে হিলারি ক্লিনটনের বিচার করার হুমকি দিয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি হিলারিকে তিনি জেলে নেয়ারও হুমকি দিয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে নারী নির্যাতনকারী বলে অভিহিত করেছেন। পাল্টা জবাবে হিলারি ক্লিনটন সম্প্রতি প্রকাশিত ট্রাম্পের যৌন রগরগে কথোপকথনের টেপের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ওই টেপই বলে দেয় ট্রাম্প কে। এ জন্য ট্রাম্প আমেরিকার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে এমনই ব্যক্তিগত আক্রমণ উঠে এসেছে। এসব কথা লিখেছে অনলাইন সিএনএন। স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যা ৯টায় (বাংলাদেশ সময় সোমবার সকাল ৭টায়) সেন্ট লুইসে এ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। সিএনএনের অ্যান্ডারসন কুপার ও এবিসির মার্থা রাডাটজের উপস্থাপনায় এদিন প্রথম বিতর্কের মতো ছিল না বিতর্ক। উপস্থাপক-উপস্থাপিকা যেমন প্রশ্ন ছুড়েছেন দু’প্রার্থীর প্রতি, তেমনি প্রশ্ন ছুড়েছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভোটাররা। অনুষ্ঠানে এমন কিছু ভোটারকে হাজির করা হয় যারা এখনও সিদ্ধান্ত নেন নি কাকে ভোট দেবেন। সিএনএন লিখেছে, বিতর্কে রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি প্রকাশিত তার অশালীন ভাষার টেপের প্রভাবের কথা অস্বীকার করেন। এখন থেকে এক দশক আগে নারীদের নিয়ে তিনি ওই অশালীন ও নোংরা মন্তব্য করেছিলেন। এ জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু বারবারই বলেছেন, ওইসব কথা ছিল ‘লকার রুমের আলোচনা’। বিতর্ক অনুষ্ঠানে দর্শক সারিতে তখন বসা সাবেক প্রেসিডেন্ট, হিলারি ক্লিনটনের স্বামী বিল ক্লিনটন, তাদের মেয়ে চেলসি ক্লিনটন, জামাই মার্ক। এ সময় বিল ক্লিনটনের যৌন জীবন নিয়ে তাকে আঘাত করেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তাকে ‘নির্যাতনকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। এ সময় ট্রাম্প বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে হিলারির বিষয়ে তদন্ত করতে স্পেশাল প্রসিকিউটর নিয়োগ দেবেন। এমনকি তার প্রশাসনের অধীনে হিলারিকে জেলে নেয়ারও হুমকি দেন। তবে এ সময় ট্রাম্পের এ চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেন নি হিলারি। তিনি বরং ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার ডেমোক্রেটিক দলের সম্মেলনে দেয়া দর্শন তুলে ধরেন। সেটা হলোÑ ‘যখন তুমি নিম্নমুখী হবে, আমরা উর্ধ্বমুখী হবো’।
নারীদের নিয়ে রগরগে মন্তব্য করা ভিডিওর কারণে ডনাল্ড ট্রাম্প যে পরিমাণ ক্ষতির শিকার হয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক সময়ের ইতিহাসে বড় কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো প্রার্থীকে এমনটা হতে হয় নি। তিনি ওই বিতর্কে হিলারি ক্লিনটন, তার স্বামীকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আক্রমণ করে নিজের সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। আক্রমণ করেছেন হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল ইস্যুতে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার সফলতা নিয়ে। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে তিনি ভোটারদের কতটা কাছে পৌঁছতে পেরেছেন তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায় নি।
হিলারি ক্লিনটন পরিষ্কার করে বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তার দলগত পার্থক্য আছে। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প নারীদের নিয়ে যে অশালীন ও যৌন আগ্রাসনমুলক কথাবার্তা বলেছেন, সেই ভিডিওর বিষয়ে তিনি ভেবেছেন ৪৮ ঘন্টা। রিপাবলিকানদের সঙ্গে তার নীতির পার্থক্য রয়েছে। হিলারি ক্লিনটন বলেন, আমি কখনোই তাদের (রিপাবলিকানদের) যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলি নি। কিন্তু এক্ষেত্রে ডনাল্ড ট্রাম্প আলাদা। এক পর্যায়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে। এ সময় নিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মাইক পেন্সকে একহাত নিতে ছাড়েন নি ট্রাম্প। গত সপ্তাহে পেন্স ভাইস প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে বলেছিলেন, আলেপ্পোকে মুক্ত করতে সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে প্রস্তুতি নেয়া উচিত যুক্তরাষ্ট্রের। এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, এ নিয়ে পেন্স ও আমি কথা বলি নি। আমি তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি।
ট্রাম্পের অশালীন ভিডিও প্রকাশের পর এর নিন্দা জানিয়েছেন মাইক পেন্স। ট্রাম্পকে বাদ দিয়ে মাইক পেন্সকে প্রার্থী করার জোরালো আহ্বান উঠেছে রিপাবলিকান শিবির থেকে। এ নিয়ে ট্রাম্প-পেন্স সম্পর্ক টান টান অবস্থার দিকে মোড় নিতে পারে। তার ওপর পেন্সের ওই বক্তব্যের এমন বিরোধিতা তাদের সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
রোববারের বিতর্ক চলাকালে ডনাল্ড ট্রাম্প যেন নিজেকে এক স্থানে স্থির রাখতে পারছিলেন না। হিলারি ক্লিনটন যখনই কথা বলতে শুরু করেন প্রথম বিতর্কের মতো এদিনও তিনি তাকে বার বার কথার মাঝে বাধা দেন। হিলারি যখনই কথা বলেন তখন ট্রাম্প নিজে স্থির থাকতে পারেন না। তিনি হাঁটতে থাকেন। অনেক সময় হিলারি যখন কথা বলছেন, তার দিকে ক্যামেরা তাক করা, হাঁটতে হাঁটতে তিনি ক্যামেরা শটের ভিতর চলে আসেন। এ সময় সরাসরি সম্প্রচারে থাকা সিএনএনকে দু’প্রার্থীকে আলাদা করে দেখাতে বেশ বেগ পেতে হয়। হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে যখন ইমেইল ইস্যুতে উত্তপ্ত বিতর্ক চলছে তখন ট্রাম্প এক পর্যায়ে তার ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেন। এ নিয়ে উপস্থাপিকা রাডাটজ কেন প্রশ্ন করছেন তা এ জন্য তাকে অভিযুক্ত করেন তিনি। তিনি উপস্থাপক-উপস্থাপিকাদের অবমাননা করে বক্তব্য রাখেন। বলেন, তারা হিলারির প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছেন। এ সময় ট্রাম্প বলেন, খুব ভাল। একজনই তিনজনের মুখোমুখি। অর্থাং তিনি এ সময় হিলারির পক্ষে দু’উপস্থাপক-উপস্থাপিকাকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে তাদের সংখ্যা তিন বলে উল্লেখ করেন। এর কয়েক ঘন্টা আগে ট্রাম্প কয়েকজন নারীকে সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করেন। এসব নারী সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছিলেন। তার এমন কান্ডকে সিএনএন লিখেছে, সারপ্রাইজ। ওইসব নারী পরে দর্শক সারিতে বসে পড়েন। এরপর বিতর্ক চলাকালে ট্রাম্প বলেন, তিনি সম্মতি ছাড়া কোনো নারীর দিকে অগ্রসর হন নি। তবে যে টেপটি প্রকাশিত হয়েছে তাতে তিনি বিব্রত। হিলারি ক্লিনটন বলেন, তিনি টেপটির বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে ভাবছেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, হ্যাঁ। এই হলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। আমার দেশের কাছে কাছে উত্তর দিতেই হবে এমন মানুষ আমরা নই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *