গ্রাম বাংলা ডেস্ক: ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ে একটি বাড়িতে গত বৃহস্পতিবার বোমা তৈরির সময় দুই জঙ্গির মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। রাজ্য পুলিশ দিল্লিকে যে রিপোর্ট পাঠিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জেএমবির স্লিপার সেল হিসেবে এই বাড়িতে বিস্ফোরক তৈরি করা হত। আর তা পাচার করা হতো সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে। রাজ্য গোয়েন্দাদের আশঙ্কা বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে সন্ত্রাস চালানোর উদ্দেশ্য নিয়েই বর্ধমানে গ্রেনেড বানানো হচ্ছিল। গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকশ গ্রেনেড ওপারে পাচার করা হয়েছে। অবশ্য গোয়েন্দাদের একাংশের মতে, ভারতের অন্যত্র এই গ্রেনেড ব্যবহারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে কিনা তা নিয়েও খোঁজখবর চালানো হচ্ছে। ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্তজুড়ে কড়া সতর্কতা জারি করেছে রাজ্য পুলিশ। সীমান্তের অরক্ষিত এলাকাগুলো সিল করে দেওয়া হয়েছে। বিএসএফকে বিশেষ সতর্কতা বজায় রাখার নির্দেশ দেবার পাশপাশি সীমান্তবর্তী সব থানাগুুিলকেও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এ বিষয়ে ভারতীয় শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও ডিজিএফআইকে অবহিত করেছেন। গত ২ অক্টোবর বর্ধমানে বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরণে নিহত হন শামীম ওরফে শাকিল আহমেদ ও স্বপন ওরফে সুবহান মন্ডল, যারা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) একটি শাখার সদস্য বলে জানিয়েছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। গোয়েন্দা সুত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, বিস্ফোরণের পর গ্রেপ্তার নিহত শাকিল আহমেদের স্ত্রী গুলশানা বিবি ওরফে রাজিয়া বিবি ও আহত আবদুল হাকিমের স্ত্রী আলিমা বিবি জিজ্ঞাসাবাদে নিরাপত্তা বাহিনীকে জানিয়েছে, তারা গত তিন মাসে চার দফায় কাওসার ও রসিক নামে দুই বাহকের মাধ্যমে বাংলাদেশে বোমা পাঠিয়েছে। ওই দিনও তারা বাংলাদেশে পাঠানোর জন্যই বোমা বানাচ্ছিল। গোয়েন্দাদের দাবি, কাওসরাও বাংলাদেশের নাগরিক। তার খোঁজে জোর তল্লাসি চলছে বিভিন্ন জায়গায়। এদিকে বোমা বিস্ফোরণে নিহত শাকিল আহমেদের মোবাইল ফোনের কল লিস্ট দেখে পুলিশ জানতে পেরেছে, শাকিল আহমেদ বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেটের বেশ কিছু লোকজনের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলত। ওই কলগুলো খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বিস্ফোরণস্থল থেকে ২৫টি গ্রেনেড,১০টি হাতবোমা এবং অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, আয়রন অক্সাইড, হাইড্রোজেন পার অক্সাইডসহ প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক তৈরির উপাদান পাওয়া গেছে। বিস্ফোরণস্থল থেকে বোমার সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য ঘড়িও পাওয়া গেছে। পাওয়া গেছে একটি লেদ মেশিন যা বুলেট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া পাওয়া গেছে জেএমবির বইপত্র সহ প্রচুর জিহাদি কাগজপত্র, মোবাইল ফোনের সিম কার্ড ও নগদ ৪৪ হাজার রুপি। মঙ্গলবার রাজিয়া বিবি ও আলিমা বিবিকে কলকাতায় সিআইডি দপ্তরেও নিয়ে এসে জেরা করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা সুত্রে জানানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে শাকিলের স্ত্রী জানিয়েছে, বিস্ফোরক তৈরির উপাদানগুলো কলকাতা থেকে আনা হত।