ঢাকা; সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসের অস্ত্রোপচারের পর ৭২ ঘণ্টা অতিবাহিত হয়েছে। তবে তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে গতকাল বিকালে আনুষ্ঠানিক কিছু জানাননি চিকিৎসকরা। তারা বলেছেন, আজ এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানানো হবে। তবে তারা জানিয়েছেন, পর্যবেক্ষণের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খাদিজার শারীরিক অবস্থার কোনো অবনতি হয়নি। এটিই তাদের আশার আলো দেখাচ্ছে। স্বজনরা আশা করছেন, আজই এ বিষয়ে ভালো কোনো সংবাদ পেতে পারেন তারা। স্কয়ার হাসপাতালের মেডিসিন ক্রিটিক্যাল ইউনিটের চিকিৎসক মির্জা নাজিম উদ্দীন বলেন, খাদিজার অবস্থা স্থিতিশীল। উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হলেও অবনতি হয়নি। আপাতত এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি। নার্গিসকে আজ শনিবার দুপুর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রেখে এ বিষয়ে মন্তব্য করবেন চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচারের পর থেকে ভ্যান্টিলেশন দিয়ে তাকে অবজারভেশনে রাখা হয়েছিল হাসপাতালের আইসিইউতে। নার্গিসের চাচা আবদুল কদ্দুস জানান, নার্গিস এখনও একই অবস্থায় আছে। চিকিৎসকরা আশা দিচ্ছেন, আজকালের মধ্যে তার অবস্থার উন্নতি হতে পারে। গতকাল নার্গিসের পাশে ছিলেন তার বড় ভাই এমবিবিএস শেষ বর্ষের ছাত্র শাহীন আহমেদ, চাচা আবদুল কদ্দুস ও মামা আবদুল বাছিত। প্রবাসী পিতা মাসুক মিয়া গতকাল সকালে বাড়িতে গেছেন। সেখানে নার্গিসের অসুস্থ মা সন্তানের দুশ্চিন্তায় শয্যাশায়ী প্রায়। দুপুরে স্কয়ার হাসপাতালের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শাহীন আহমেদ। নার্গিসের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে শাহীন আহমেদ বলেন, তার অবস্থার উন্নতি হয়নি আবার অবনতিও হয়নি। এটাই আমাদের জন্য আশার সঞ্চার করেছে। এখান থেকে সে কামব্যাক করতে পারে। তবে সার্জারি করার পর তার কন্ডিশন আগের চেয়ে ভালো। কিছু নিউজপোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নার্গিসকে নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। শাহীন আহমেদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে তার মৃত্যুর বিষয় নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছেন। আবার অনেকে বলছেন সে চোখ খুলেছে, হাত-পা নাড়াচ্ছে। এসব গুজব ছাড়া আর কিছু না। গোটা জাতি আমার বোনের জন্য দোয়া করছে। তার অবস্থার পরিবর্তন হলে আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে সবাইকে জানাবো। আশা করি কেউ এটাকে নিয়ে গুজব ছড়াবেন না। বোনের জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করে বলেন, ঘটনার পর থেকে খাদিজার সুস্থতার জন্য সবাই দোয়া করছেন। আমরা সবার কাছে দোয়া চাই। আপনারা দোয়া করুন সে যেন সুস্থ হয়ে ওঠে। গত সোমবার এমসি কলেজে পরীক্ষা শেষে কলেজ ক্যাম্পাসে নার্গিসকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে শাহজালার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলম। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার প্রথম দফা অস্ত্রোপচারের পর অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। গত মঙ্গলবার খাদিজার মাথায় অস্ত্রোপচার করেন স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা। বেলা ২টা থেকে শুরু করে বিকাল ৫টা ৩৫ মিনিটে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। অস্ত্রোপচারের নিউরো সার্জন ডা. এ এম রেজাউস সাত্তার বলেছিলেন, নার্গিসের মাথায় ও হাতে অনেকগুলো কোপের চিহ্ন। ধারালো অস্ত্রের কোপগুলো মাথার খুলি ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করেছে। যা তার ব্রেইন ইনজুরি করেছে। অস্ত্রোপচারের ৭২ ঘণ্টা পর তার নিউরোলজিক্যাল স্ট্যাটাস অ্যাসেস করবো। এগুলো অ্যাসেস করার পর শরীরের আঘাতগুলোতে অর্থপেডিক চিকিৎসা দেয়া হবে। তখনই তার উন্নতি সম্পর্কে মন্তব্য করা যাবে বলে জানিয়েছিলেন এই চিকিৎসক।