ঢাকা; জিয়াউর রহমানের লাশ গুম করতে চেয়েছিলেন এইচ এম এরশাদ। প্রয়াত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ রাঙ্গুনিয়া থেকে জিয়ার মরদেহ চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে আসেন।
আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে হান্নান শাহর স্মরণসভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান এসব কথা বলেন।
হান্নান শাহর সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের কথা বলতে গিয়ে চট্টগ্রামের প্রভাবশালী এই নেতা বলেন, ‘হত্যার পর কিছু বিপথগামী সেনাসদস্য জিয়াউর রহমানকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। চট্টগ্রামে অনেক খোঁজাখুঁজির খবর পেলাম, রাঙ্গুনিয়ায় একটি পাহাড়ের তলদেশে তাঁকে রাখা হয়েছে। আমি এবং বিশিষ্ট শ্রমিকনেতা আবদুল গফুর একটি বেবিট্যাক্সি করে সেখানে গেলাম। দেখি, ধানখেতের ওপর দিয়ে কয়েকজন ত্রিপল নিয়ে একটি লাশ নিয়ে আসছেন। দৌড়ে গিয়ে লাশের সামনে গেলাম। একজন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হু আর ইউ। বললাম, আমি আবদুল্লাহ আল নোমান। পরে জানলাম তিনি হান্নান শাহ।’
আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘তখনো হান্নান শাহর অন্তরে জিয়াউর রহমানের প্রতি যে ভালোবাসা, আনুগত্য এবং তাঁর সম্পর্কে জানা—সেটা ছিল বলেই জিয়ার মরদেহ আনতে গিয়েছিলেন তিনি। এ দায়িত্ব তিনি পালন না করলেও পারতেন। কারণ, এরশাদ তাঁকে বলেননি, এরশাদ তো লাশ গুম করে ফেলতে চেয়েছেন। হান্নান শাহ সে সময় চট্টগ্রামে মিলিটারি একাডেমির পরিচালক ছিলেন। সে সুবাদে তিনি জিয়ার মরদেহ প্রথম সেনানিবাসে নিয়ে আসেন। পরবর্তী সময়ে তাঁকে ফোর্স রিটায়ারমেন্টে পাঠানো হলো।’
হান্নান শাহকে একজন সাহসী নেতা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, তাঁর মনের মধ্যে যা কিছু, তা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে তাঁর কোনো ভয়, দৈন্য ছিল না। সেদিনও তিনি ক্ষমতাসীন সরকারের কর্তৃত্ববাদী আচরণ, গুম খুন, জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন পর্যায়ে অত্যাচার-নির্যাতন সম্পর্কে বলিষ্ঠভাবে কথা বলেছেন। এটা কিন্তু সবাই বলেন না।
১ কোটি ৩৫ লাখ ভুয়া ভোটার বানানোর কথা সঠিক নয়
সবার সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে যে কথা বলেছেন, আমার অত্যন্ত লজ্জা হয় এ কথাটা আবার পুনর্ব্যক্ত করতে। তিনি এটাকে হাসিঠাট্টার মধ্যে ফেলে দিয়ে জবাব দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি আজ দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, বিএনপি ১ কোটি ৩৫ লাখ ভুয়া ভোটার বানিয়েছে—প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা যে কথা বলেন, তা সঠিক নয়। আমি দায়িত্বশীলতার সঙ্গেই এ কথা বলছি।’
আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আমার ভোটার আইডি করতে গিয়ে এ প্রকল্পের পরিচালক সাখাওয়াত হোসেনের কাছে বিষয়টি জানতে চেয়েছিলাম। বলেছিলাম, বিএনপি নিজের ভোটটাও নিজে সব সময় নিশ্চিত করতে পারে না। সেখানে ১ কোটি ৩৫ লাখ ভুয়া ভোটার সুন্দরভাবে করে ফেলল, এটা কীভাবে হলো?’ সাখাওয়াত হোসেনকে উদ্ধৃত করে নোমান বলেন, তিনি তাঁকে বলেছেন, আসলে বিএনপি বা কেউ ভুয়া ভোটার বানায়নি। এ ব্যাপারে তাঁরা একটি সার্ভে করেছেন, সেখানে দেখা গেছে, এক ব্যক্তি দু-তিন জায়গায় ভোটার হওয়ায় এই ভোট বৃদ্ধি পেয়েছে—এটাই হচ্ছে মূল কথা।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বর্তমান সরকারের কাছে আমরা নির্বাচন চাই, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন চাই। সেটার জন্য একমাত্র আলোচনা কাজ দেবে না। প্রয়োজন আন্দোলন-সংগ্রামের, প্রয়োজন সামনে এগিয়ে গিয়ে বুকের রক্ত দেওয়ার। সেই সাহস হান্নান শাহর ছিল। তাঁকে হারিয়ে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’
সার্ক হচ্ছে এ অঞ্চলের শান্তিরক্ষার অন্যতম সংগঠন
স্মরণসভায় সার্ক নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থানের সমালোচনা করেন আবদুল্লাহ আল নোমান। তিনি বলেন, ‘সার্ক হচ্ছে এ অঞ্চলের শান্তিরক্ষা ও প্রতিষ্ঠার অন্যতম সংগঠন। সার্কের যে গুরুত্ব, সেটা আমরা সবাই অনুভব করি। হঠাৎ করে সার্কের প্রয়োজন নেই, এমন কথা আওয়ামী লীগ ঘরানার সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং আওয়ামী লীগের নেতারা বলতে শুরু করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘সার্কের প্রয়োজন না থাকলে আমাদের বন্ধুবেশী রাষ্ট্র এবং ভবিষ্যতে আরও যারা বন্ধুবেশে আমাদের সঙ্গে আসতে চায়, তারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করবে। সে ইচ্ছায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে সার্ককে অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার যে ষড়যন্ত্র, আমরা সেটাকে গ্রহণ করি না।’
জাতীয়তাবাদী দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন নামের একটি সংগঠন এ স্মরণসভার আয়োজন করে। কে এম রকিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বিএনপির নেতা শাহ মো. আবু জাফর, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ।