গাজীপুর অফিস; গাজীপুরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নির্বাচনী এলাকা চান্দনা চৌরাস্তায় নির্মিত মহান মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য জাগ্রত চৌরঙ্গীর দুই পায়ে শিকল বেঁধে দিয়েছিল চিহিৃত একটি চাাঁদাবাজ চক্র। পল্লী বিদুৎ এর কিছু অসাধু লোক ও ডিস লাইনের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কর্মচারীরা ওই ভস্কর্যের দুই পায়ে তার দিয়ে শিকল বেঁধে দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে গাজীপুর-২ আসনের এমপি জাহিদ আহসান রাসেল প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে ভাস্কর্যকে শৃঙ্খলমুক্ত করেন।
আজ সোমবার বিকেলে প্রশাসনের লোকজন ভাস্কর্যটির দুই পা থেকে শিকল খুলে দেয়।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, একটি অসাধু চক্র গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তায় অবস্থিত মহান মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য জাগ্রত চৌরঙ্গীর দুই পায়ে শিকল দিয়ে তাদের ব্যবসাকে জমজমাট করেন। শিকল বাঁধা ওই ভাস্কর্যটির ছবি গাজীপুর অনলাইন এর সম্পাদক এম এ কবির তার ফেইসবুক ওয়ালে পোষ্ট করে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি চিহৃ ওই ভাস্কর্যকে শৃঙ্খলমুক্ত করার দাবি জানান।
অতঃপর কবিরের ওই পোষ্ট দেখে ভাওয়াল বীর ও গাজীপুরের জনপ্রিয় এমপি শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টারের ছেলে বাবার আসনে নির্বাচিত গাজীপুর-২ আসনের এমপি জাহিদ আহসান রাসেলের আত্মা কেঁপে উঠে। মহান মুক্তিযুদ্ধে পিতা আহসান উল্লাহ মাষ্টারের ভূমিকার সম্মান রক্ষায় রাসেল এমপি উতালা হয়ে উঠেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে মহান মুক্তিযুদ্ধে গাজীপুর জেলার অবদান কে সমুন্নত রাখতে রাসেল এমপি দ্রুত জাগ্রত চৌরঙ্গীকে শৃঙ্খলমুক্ত করার পদক্ষেপ নেন। তিনি গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও গাজীপুর সিটিকরপোরেশনকে দ্রুত ভাস্কর্যকে শৃঙ্খলমুক্ত করার নির্দেশ দেন। ফলে বিকেলে প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে শিকল ছিঁড়ে ভাস্কর্যকে মুক্ত করেন।
এ প্রসঙ্গে জাহিদ আহসান রাসেল এমপি গ্রামবাংলানিউজকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে এই পোষ্ট দেখে তিনি আশ্চর্য ও স্তম্বিত হয়ে যান। অতঃপর দ্রুত তা অপসারণ করে ভাস্কর্য শৃঙ্খলমুক্ত করেন।
প্রসঙ্গত; ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে গাজীপুর জেলার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। “জয়দেবপুরের পথ ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর ” এই শ্লোগান নিয়ে গাজীপুরের বীরযোদ্ধারা মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তারা ১৯ মার্চ দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই স্বশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ করে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করেন। ১৫ ডিসেম্বর তারা গাজীপুরকে মুক্ত ঘোষনা করেন।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য স্মৃতিকে স্বরণ করতে পরবর্তি সময় গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় নির্মিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধের জাগ্রত চৌরঙ্গী। ভিত বা বেদিসহ জাগ্রত চৌরঙ্গীর উচ্চতা ৪২ ফুট ২ ইঞ্চি। ২৪ ফুট ৫ ইঞ্চি ভিত বা বেদির ওপর মূল ভাস্কর্যের ডান হাতে গ্রেনেড ও বাঁ হাতে রাইফেল। কংক্রিট, গ্রে সিমেন্ট, হোয়াইট সিমেন্ট ইত্যাদি দিয়ে ঢালাই করে নির্মিত এ ভাস্কর্যটিতে ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৩ নম্বর সেক্টরের ১০০ জন ও ১১ নম্বর সেক্টরের ১০৭ জন শহীদ সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের নাম উৎকীর্ণ করা আছে। আর এই জাগ্র্রত চৌরঙ্গীর পাদদেশে দাঁড়িয়ে ভাস্কর্যের দুই পায়ে শিকল পড়িয়ে দেয় অসৎ কিছু লোক। জাগ্রত চৌরঙ্গীর স্থানটি গাজীপুর-১ আসন হওয়ায় ওই আসনের এমপি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বার তার কেউ বিষয়টি দেখেননি। ফলে পার্শ্ববর্তি আসনের এমপি জাহিদ আহসান রাসেল অবশেষে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্মৃতি চিহৃ জাগ্রত চৌরঙ্গীকে শৃঙ্খলমুক্ত করলেন। আর এরই মাধ্যমে অপমানের হাত থেকে গাজীপুরকে রক্ষাও করলেন তিনি।