জয়ের সেঞ্চুরি

Slider খেলা জাতীয়

 33988_dp

 

ঢাকা; স্বরূপে ফিরলো বাংলাদেশ, উড়ে গেলো আফগানিস্তান। বাঁচলো মান, বাঁচলো সিরিজ। ঠিক থাকলো সাত নম্বর জায়গাটাও। টানা দুই ম্যাচে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশের সামনে গতকাল দাঁড়াতেই পারেনি আফগানিস্তান। ব্যাটে-বলে সমান নৈপুণ্যে জয় ছিনিয়ে নেয় বাংলাদেশ। তামিম ইকবালের ১১৮ আর সাব্বির রহমানের ৬৫ রানে গড়া সংগ্রহটা আফগানদের জন্য পাহাড়সম করে দেন স্পিনার মোশাররফ আর পেসার মাশরাফি। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাত্র এক উইকেট পেলেও ৬ ওভারে ১৫ রান দিয়ে শুরুতেই চাপে রাখেন আফগানদের। স্বাগতিকদের ২৭৯ রানের জবাবে অর্ধেকও করতে পারেনি তারা। ১৩৮ রানে গুড়িয়ে যায় সফরকারীরা। গতকাল মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ জয়ী হয় ১৪১ রানে। আর এতে রকেট ডাচ-বাংলা সিরিজ ২-১এ জিতলো বাংলাদেশ। আসন্ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে এক জয়ে দুই অর্জনÑওয়ানডেতে শততম জয়ের সঙ্গে সিরিজও নিশ্চিত। তার ওপরে রক্ষা আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে অবনমন থেকে। এ খেলায় হেরে গেলে সহযোগী এক দেশের কাছে সিরিজ হারের লজ্জায় পড়তে হতো। সাত থেকে আট নম্বরেও নেমে যেতে হতো বাংলাদেশকে। আর তাতে শঙ্কায় পড়তো ২০১৯ বিশ্বকাপে খেলা।
১৯৮৬তে অভিষেকের পর ১৯৯৮ সালে ভারতের হায়দারাবাদে কেনিয়ার বিপক্ষে প্রথম জয় পায় বাংলাদেশ। এরপর ২০০৯এ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫০তম জয় পায় টাইগাররা। ১০০ জয়ের মধ্যে ৩৭টিই তাদের বিপক্ষে। এর বাইরে টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে নিউজিল্যান্ডকে আটবার, ওয়েস্ট ইন্ডজকে সাত বার, ভারতকে পাঁচবার, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানকে চারবার করে হারায় বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডকে তিনবার করে হারালেও অস্ট্রেলিয়ার জয় একটিই। শক্তিশালী ইংল্যাান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খেলার আগে অনেক দিন আন্তর্জাতিক খেলার বাইরে থাকা বাংলাদেশ দলকে প্রস্তুৃতির সুযোগ করে দিতেই বাংলাদেশ ক্রিকটে বোর্ড আফগানিস্তান ক্রিকেট দলকে আমন্ত্রণ জানায়। বিসিবি প্রধান জানান, আফগানদের বোলিং খুব ভাল বলেই তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তিন খেলায় আফগান বোলাররা বাংলাদেশের ২৮ উইকেট নেয়। যদিও বাংলাদেশও তাদের ২৮ উইকেটই নিয়েছে। প্রায় দশ মাস পর ওয়ানডে খেললো এবার বাংলাদেশ দল। আর তাতে ব্যাটিং দৈন্যও ফুটে উঠলো পরিস্কার। সামনের কটা দিনে তা কাটিয়ে উঠতে না পারলে বড় বিপদই হতে পারে। ব্যাটে-বলে ইংলিশ দল এখন সাফল্যের তুঙ্গে। সম্প্রতি পাকিস্তানের বিপক্ষে তারা সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছে, সিরিজ জিতেছে ৪-১এ।।
হারের শঙ্কায় সারা দেশ দুললেও বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা যেন নিশ্চিতই ছিলেন। না হয়, আগের দু খেলায় আগে ব্যাট করে চাপে থাকার পরও টসে জিতে ব্যাটিং নেবেন কেন। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে বাংলাদেশ জয় পায় সাত রানে আর পরের খেলায় হার। প্রথমটিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ২৬৫ আর পরেরটিতে ২০৮ রান। দু‘বারই অলআউট। এবার ২৭৯। তামিম ইকবাল সর্বোচ্চ ১১৮ রান করেন সমান বল খেলে। ১১ চারের পাশে দুটি ছক্কা। অবশ্য রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যেতে পারতেন। প্রথম ওভারে মোহাম্মদ নবীর কাছ থেকে কোন রান নিতে পারেন নি তামিম। তারই করা তৃতীয় ওভারের প্রথম বল তুলে দিয়েছিলেন তিনি। আফগান অধিনায়কের হাতে তা গিয়েও ছিল। কিন্তু বলটা তালুতে রাখতে পারেন নি তিনি। আর এ মিসের খেসারতটা তারা দেয় ভালভাবেই। ওয়ানডেতে তামিমের এটি সপ্তম সেঞ্চুরি। এতে তিনি ছাড়িয়ে গেলেন সাকিব আল হাসানকে। তিন খেলায় তার সংগ্রহ সর্বোচ্চ ২১৮ রান। আর এতে ম্যাচ সেরার পাশাপাশি সিরিজ সেরাও হন বাঁ হাতি এ ওপেনার। গতকাল শুরুটা আগের মতো হলেও দলে এবং ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন আনায় শেষটা বেশ ভালই হয়। পেসার রুবেল হোসেন আর স্পিনার তাইজুলকে বসিয়ে নামানো হয় পেসার শফিউল আর স্পিনার মোশাররফ হোসেন রুবেলকে। আট বছর পর জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েই নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দেন তিনি। মাত্র ২৪ রানে তিন উইকেট নেন মোশাররফ। তার জোড়া আঘাতেই আফগানদের ধস শুরু। ২০০৮এ শেষ খেলা হয় তার বাংলাদেশের হয়ে। বেশি অর্থের প্রস্তাবে ভারতের নিষিদ্ধ ক্রিকেট লীগে খেলতে গিয়ে নিষিদ্ধ হন তিনি। পরে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও তরুণদের হটিয়ে ফিরতে কষ্ট  হচ্ছিল। এবারও ৩০ জনের দলে ছিলেন না তিনি। ভারতের স্পিন কোচ ভেঙ্কটাপতি রাজুর পরামর্শেই নির্বাচকরা তাকে বিবেচনায় আনেন।
পেস-স্পিনের মিশেল আক্রমণে আফগানিস্তান খেই হারিয়ে হাল ছেড়ে দেয় আগে-ভাগেই। ৫২ রানের মাথায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় উইকেট হারানোর পর তারা কেবল যাওয়া আসার মধ্যেই থাকে। ৩৪তম ওভারে শফিউলের উইকেট পাওয়ার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে আফগানদের লড়াইয়ের। তাদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেন রহমত শাহ। ৩৩ রান করেন নওরোজ মঙ্গল। দুই উইকেট নেন তাসকিন ৩১ রানে। ছয় বোলার বল করেন। সাকিব ছাড়া সবাই উইকেট পান। খেলাটা আগেই আফগানদের নাগালের বাইরে নিয়ে যান ওপেনার তামিম ইকবাল আর প্রথমবার তিন নম্বরে নামা সাব্বির রহমান। আগের দুই খেলায় সুবিধা করতে না পারা সাব্বির তিন নম্বরে নেমে ৬৫ রান করেন। ৭৯ বলের ইনিংসে তিন ছয়ের সঙ্গে ছয় চার মারেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে তাদের গড়া ১৪০ রানের জুটি বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেয়। শেষ দিকে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ২২ বলে ৩২ রান সংগ্রহটা আরও স্ফীত করে। না হয়, শঙ্কা একটা থেকেই যেত। দলের অন্যদের অবদান যে বলার মতোই ছিল না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *