বন্দি সেনাকে ফেরাতে সব ব্যবস্থা নেবে ভারত’ পাক-ভারত তীব্র উত্তেজনা

Slider সারাবিশ্ব

 

file
ঢাকা; থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে। চলছে পাল্টাপাল্টি মন্তব্য। এরই মধ্যে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, পাকিস্তানে আটক ভারতীয় সেনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার অজিত দোভাল ও আইটিবিপি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুপুরে এক বৈঠকের সময় তিনি এ কথা বলেন।
এ খবর দিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। খবরে ভারতীয় একজন সামরিক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, চান্দু বাবুলাল চৌহান নামের একজন ভারতীয় সেনা ৩৭ রাষ্ট্রীয় রাইফেলে কর্মরত ছিলেন। ওই কর্মকর্তা জানান, সেনা সদস্যটি ‘অসতর্কভাবে লাইন অব কন্ট্রোলে পাকিস্তান সীমান্তে ঢুকে পড়েন’। তবে ইসলামাবাদের কূটনৈতিক সূত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছে, চৌহানকে পাকিস্তানি সেনারা আটক করেছে মানকোট শহরের পশ্চিমে ঝানদ্রুত এলাকা থেকে। তাকে এখন নিকায়ালে সামরিক সদর দপ্তরে রাখা হয়েছে। রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, ভারতীয় একজন সেনা সদস্যের পাকিস্তানের কাছে আটক হওয়ার খবরটি সরকার অবগত। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাকে ছাড়িয়ে আনার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চলছে।’ তিনি আরও বলেন, দ্রুত ওই সেনার মুক্তির জন্য ইসলামাবাদের সঙ্গে নয়া দিল্লির পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে কথা হবে। ভারতীয় সামরিক সূত্র বৃহস্পতিবারই এক সেনা সদস্যের পাকিস্তান সীমান্ত পেরিয়ে আটকা পড়ার বিষয়টি জানায়। বিষয়টি ভারতের ডিজিএমও পাকিস্তানকে হটলাইনের মাধ্যমে অবহিত করেছেন বলেও জানায় সামরিক সূত্র। তবে ওই সেনা সদস্যের পাকিস্তান সীমান্তে ঢুকে পড়াকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের অংশ নয় বলে জানায় তারা। অতীতেও সামরিক সদস্য ও বেসামরিক নাগরিকদের দুই দেশের সীমান্ত পেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে এবং বিদ্যমান রীতি ব্যবহার করেই তারা নিজ নিজ দেশে ফিরে যায় বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের গণমাধ্যমে ৮ ভারতীয় সেনা নিহতের খবর আসে। তা অস্বীকার করেছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী। ভারতের সামরিক সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তানি গণমাধ্যমের ওই খবর ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’। পাকিস্তান সীমান্তে ঢুকে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিতে ভারতের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালানোর দাবির পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে দুই দেশে। ভারতের সামরিক কার্যক্রমের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল রণবীর সিং বলেছেন, দেশের নিরাপত্তার জন্যই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, হামলায় সন্ত্রাসীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত কথা বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের আর এ ধরনের হামলার পরিকল্পনা নেই। তিনি আরও বলেন, এই আক্রমণের লক্ষ্য ছিল আমাদের দেশে অনুপ্রবেশের পরিকল্পনাকারী সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা। হামলার সময় ভারতীয় সেনাদের মধ্যে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানান তিনি।
আমাদের কলকাতা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাকিস্তানে জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক  নিয়ে দেশে বিদেশে সমর্থন আদায়ে ভারত তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। এমনকি পাকিস্তানের অস্বীকারের জবাব দেয়ার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই অভিযানের সত্যতা প্রমাণে সেনাবাহিনী পুরো অভিযানই ভিডিওতে ধরে রেখেছে। তবে এই ভিডিও গোপনীয়তার কারণেই প্রকাশ্যে আনা হবে না। ভারত একদিকে যেমন দেশের সব বিরোধী দলের সমর্থন আদায় করতে পেরেছে তেমনি বিশ্বের ২২টি দেশের রাষ্ট্রদূতকে ঘটনার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে সমর্থন আদায়ে চেষ্টা হয়েছে। প্রতিবেশী বাংলাদেশ অবশ্য খোলাখুলি এই অভিযানে ভারতকে সমর্থন জানিয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেছেন, আক্রান্ত হওয়ার পর প্রত্যাঘাতের অধিকার সকলের রয়েছে। নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে ভারত কোনো অন্যায় করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইস ভারতের জাতীয় উপদেষ্টা অজিত দোভালকে ফোন করে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। পরে হোয়াইট হাউস থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে পাকিস্তানকে জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার অভিযান চালানোর কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই ভারতীয় প্রশাসনের সর্বস্তরে দেশে-বিদেশে ঘটনাটি জানিয়ে সমর্থন আদায়ে তৎপরতা ছিল তুঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৃহস্পতিবার সকালে প্রথমে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকে অভিযান নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংকে টেলিফোন করে কোনো পরিস্থিতিতে এই অভিযান চালানো হয়েছে তা জানিয়েছেন। জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ও উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারীকেও। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সটান ১০ নং জনপথে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর বাসভবনে হাজির হয়ে তাকে গোটা ঘটনার কথা জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, আসম, ঝাড়খণ্ড প্রভৃতি সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের ফোন করে অভিযানের কথা জানিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ এদিন নিরাপত্তা পরিষদেও ৫ তদস্য দেশের রাষ্ট্রদূতসহ ২২টি দেশের কূটনীতিককে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এক বিবৃতিতে ভারতীয় সেনবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এই সার্জিক্যাল অপারেশন কড়া বার্তা দিয়েছে যে, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাস ও অনুপ্রবেশ মোকাবিলায় আমাদের দেশ তৈরি। সীমান্ত পারে সন্ত্রাস মোকাবিলায় এবং দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় নরেন্দ্র মোদির সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছে  তাকে সমর্থন জানানোর কথা জানিয়েছেন। সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো মুলায়ম সিং জানিয়েছেন, এই অভিযানকে আমরা সমর্থন করছি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিজেপি সরকারের সিদ্ধান্তকে আমরা সমর্থন করছি। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল টুইট করে বলেছেন, সারা দেশ সেনাবাহিনীর পাশে রয়েছে। এদিকে, ভারতের অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে যে কোনো পরিস্থিতির মোকাবিলায় ভারতের প্রশাসন কাশ্মীর থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সীমান্ত বরাবর সব গ্রামকে খালি করতে শুরু করেছে। জানা গেছে, পাঞ্জাবের যে ৬টি জেলা পাক সীমান্তের কাছাকাছি সেই জেলাগুলোর  সব গ্রামকেই খালি করার জন্য পাঞ্জাব সরকারের কাছে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। সীমান্ত এলাকার সব স্কুল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। সীমান্তবর্তী জেলার সব গ্রাম খালি করার ব্যাপারে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জম্মু ও কাশ্মীর এবং পাঞ্জারের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন।
ভারতের পাশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: উরির সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইস। গতকাল ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে ফোন করে ভারতের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, উরি হামলার নিন্দা করার পাশাপাশি রাষ্ট্রসংঘ যে জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে কড়া ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। দোভালকে আশ্বাস দিয়ে সুসান আরও জানিয়েছেন, সারা বিশ্বে যে সন্ত্রাসবাদ চলছে, তার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লড়াই আরও জোরদার করবে। সন্ত্রাসের চক্রীদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে ওবামা প্রশাসনের প্রতিশ্রুতির কথা পুনরায় জোর দিয়ে জানিয়েছেন তিনি। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি বজায় রাখার বিষয়টি নিয়েও সুসান দোভালের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। একই সঙ্গে সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতা আরো জোরালো করার বার্তা দিয়েছেন। মার্কিন নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র নেড প্রাইস জানিয়েছেন, লস্কর-ই-তৈয়্যেবা, জৈশ-ই-মহম্মদ এবং তার শাখা সংগঠনগুলো পাকিস্তানের মাটিতে তাদের কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে বলেও পাকিস্তানকে জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *